স্পোর্টস ডেস্ক :
বিশ্বকাপে বিশ্ব হাসে। বিশ্বকাপে বিশ্ব কাঁদে। অপেক্ষার প্রহর শেষ। হাসি-কান্নার হিসাব শুরু হতে আর কিছু সময় বাকি। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’- বিশ্ব কাঁপানো বিশ্বকাপ ফুটবল। অংশগ্রহণকারী মোট ৩২টি দেশকে ৮ গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য আসরে। ফুটবল জীবনের একটা অঙ্গ। অনেকের কাছে হয়তো আরও বেশি কিছু। ফুটবল একটা আবেগ। ভালোবাসা আর আবেগ দিয়ে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করে ফুটবল।
বিশ্বকাপ নিঃসন্দেহে মানুষের নির্মল আনন্দ উপভোগের সেরা মাধ্যম। তার চেয়েও বড় বিষয়, বিশ্বের যে কোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে ফুটবলই পারে শান্তি ফেরাতে। আর শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে কাতারের দোহায় বিশ্বভাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে মাসব্যাপী এই মহাযজ্ঞ। প্রিয় দলের সাফল্য, ব্যর্থতা, আনন্দ-বেদনা সঙ্গে উচ্ছ্বাস, উল্লাসে বিশ্বকাপ রূপ নেবে উৎসবে। এই মহা আয়োজন ঘিরে বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী মানুষের নজর এখন কাতারের ওপর। এতে বিশ্বকাপ এক সুতোয় গাঁথবে গোটা বিশ্বকে।
এখানেই ফুটবলের সার্থকতা, যা অন্য যে কোনো খেলা থেকে শতগুণ এগিয়ে রেখেছে ফুটবলকে। খেলা মাঠে গড়ানোর মধ্য দিয়ে ফুটবলারদের পায়ে-বলের জাদুকরি সব প্রদর্শনী উপভোগ করতে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন বিশ্বের কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমী। আয়োজক কাতারের দেয়া হিসাব অনুযায়ী এবার ১২ লাখ দর্শক বিভিন্ন ম্যাচে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে সরাসরি সুযোগ পাবেন খেলা দেখার। বিদেশী এসব দর্শকের দৃপ্ত পদচারণায় মুখরিত এখন মধ্য প্রাচ্যের দেশটি।
সৌভাগ্যবান এসব দর্শকের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় তিনশ’ কোটি মানুষের দৃষ্টি থাকবে টিভির পর্দায়, ফুটবলের ময়দান থেকে হৃদয় নিংড়ানো মনের খোরাক জোগাতে। এশিয়ায় দ্বিতীয়বার। আর আরব দেশে এবারই প্রথম আয়োজিত হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবল।
প্রতিবারই বিশ্বকাপের শুরুটা হয় জাঁকজমকপূর্ণ। বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৮টায় বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্দা ওঠবে ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের। স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডরের মধ্যে ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে প্রতিযোগিতা। তার আগে থাকবে চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। উদ্বোধনীর মঞ্চ মাতাবেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খ্যাতিমান শিল্পীরা। থাকবে নয়নাভিরাম ফায়ার ওয়ার্ক্স, লেজার শো। আলোর ঝলকানি, সুরের মূর্ছনা আর নৃত্যের তালে তালে তোলে ধরা হবে আরবের বর্ণময় জাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতি বা কালচার।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ এবং অনুষ্ঠান হবে আল বায়েত স্টেডিয়ামে। রাজধানী দোহা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ৬০ হাজার দর্শকের এই স্টেডিয়ামের অবস্থান। যদিও কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে অনেক দিন ধরেই চলছিল নানা সমালোচনা। এত ছোট দেশে এত বড় মাপের প্রতিযোগিতা কেন আয়োজন করতে দেয়া হলো তা নিয়েই ছিল নানা প্রশ্ন। এছাড়া বিতর্ক কাতারের আরও একটি আইন নিয়ে। মহিলারা খোলামেলা পোশাক পরতে পারেন না। সব সময় শরীর ঢেকে রাখতে হবে। বিশ্বকাপ দেখতে আসা সমর্থকদের আইন মেনে চলতে হবে।
কোনো মহিলা দর্শক খোলামেলা পোশাক পরলে তার বিরুদ্ধে কাতারের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। আইন অমান্য করলে জেল পর্যন্ত হতে পারে। কাতারে পা রাখা বিদেশী সমর্থকদের নাকি জানিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা যাতে খোলামেলা পোশাক না পরেন। যদিও দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে দর্শকদের বিশেষ কোনো পোশাক পরতে বলা হচ্ছে না। তারা নিজেদের পছন্দের পোশাকই পরতে পারেন। তবে খোলামেলা পোশাক পরা যাবে না। পাশাপাশি প্রকাশ্যে চুম্বন, মদ বিয়ার পান করা বারণ।
এক কথায় এবারই প্রথম আইনের বেড়াজালে বন্দি হয়ে পড়েছে বিশ্বকাপ উন্মাদনা। তারপরও অবশ্য আগ্রহের কমতি নেই। বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে আরবের মাটিতে ছুটে এসেছেন লাখ লাখ ফুটবল পাগল দর্শক। এ কারনেই সমালোচনা উপেক্ষা করে আয়োজকরা বলছে বিশ্বকে চমকে দিতে প্রস্তুত তারা। কাতার বিশ্বকাপের খেলা হবে আটটি নয়নাভিরাম স্টেডিয়ামে। চিরাচরিত ধারায় এবারও তৈরি করা হয়েছে বিশ্বকাপের নতুন বল। যার নাম ‘আল রিহলা’। নামের অর্থ হচ্ছে ‘দ্য জর্নি বা সফর’। পাকিস্তানের শিয়ালকোটে তৈরি এই বলের গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়েছে তিনশ’ পেশাদার ফুটবলার দিয়ে। আর এই সনদ নিয়েই বিশ্বকাপের মাঠ মাতাবে আল রিহলা।
বিশ্বকাপ আয়োজনে অর্থ খরচে কাতারিদের কোনো কার্পণ্য নেই। অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার খরচ করছে তারা ২০০ বিলিয়ন ডলার। বিগত সাত বিশ্বকাপের একত্রিত খবরকে ছাপিয়ে গেছে কাতার। বিশ্বকাপ আয়োজনে এত অর্থ খরচ অতীতে কোনো দেশ করেনি। মূলত স্টেডিয়াম, মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র, মনোজ্ঞ উদ্বোধনী-সমাপনী, সড়ক, রেলসহ কাতারকে নতুনরূপে সাজাতে গিয়ে এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করা হয়েছে। এই খরচের বিরাট একটা অংশজুড়ে রয়েছে অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণ।
স্থানান্তরযোগ্য স্টেডিয়ামগুলো কেবল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতই নয়। শীত, গরম, বৃষ্টি কিছুই র্স্পর্শ করতে পারবে না স্টেডিয়ামের ভেতরে থাকা মানুষদের। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবারই প্রথম শীত মৌসুমে শুরু হচ্ছে খেলা। কাতারের তাপমাত্রা বিবেচনা করে জুনের পরিবর্তে নভেম্বর-ডিসেম্বরে আনা হয়েছে বিশ্বকাপ। এ কারণে কাতার বিশ্বকাপ অন্য আসরগুলো থেকে আলাদা।
তবে শঙ্কা থাকছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে। আয়োজন জমকালো করতে যোগ করা হয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তের জনপ্রিয় শিল্পীদের। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন শাকিরা। ২০১০ দক্ষিণ অফ্রিকা বিশ্বকাপে স্বল্পবাসনার পোশাকে কোমর দুলিয়ে তার গাওয়া ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গান এখনো ফুটবলপ্রেমীদের মুখে মুখে। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া বিশ্বখ্যাত কলম্বিয়ান পপ তারকার এই গানই এযাবতকালের সেরা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ফুটবল দুনিয়ায়। কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়ার খবর শাকিরাই নাকি থাকছেন না বিশ্বকাপের মঞ্চে।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। অবশ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজনে প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছেন ডুয়া লিপা। নতুন প্রজন্মের হার্টথ্রব এই প্রখ্যাত ব্রিটিশ পপ তারকা সরে দাঁড়িয়েছেন সবার আগে। বিশ্বকাপ আয়োজনে প্রায় আট বছরের প্রস্তুতি, নির্মাণ কাজে অংশ নিয়ে নিহত হয়েছেন ছয় হাজারেরও বেশি বিদেশী শ্রমিক। এ নিয়ে বিশ্বের নানাপ্রান্তে এখনো বিক্ষোভ অব্যাহত। তাদের মুখে কাতার বিশ্বকাপ বয়কটের ডাক।
আয়োজক কাতার এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সরে দাঁড়িয়েছেন ডুয়া লিপা। যদিও ডুয়া লিপাকে মঞ্চে রাখতে ফিফার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টার কথা বলা হচ্ছে। এখন সময় ভালো বলতে পারবে লিপার থাকা না থাকার বিষয়টি। তবে এই পথে হাঁটছেন না শাকিরা। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েই থাকতে চাচ্ছেন না তিনি। তবে আয়োজক কাতার ও বিশ্ব ফুটবলের শাসক সংস্থা ফিফার পক্ষ থেকে উদ্বোধনীর মঞ্চে শাকিরাকে রাখারও প্রাণান্ত চেষ্টা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের দাবি পোশাকি আইনে কড়াকড়ি থাকায় অনুষ্ঠান নিয়ে শাকিরার অনীহা। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিখ্যাত ব্যান্ড বিটিএসের জান কুক পারফর্ম করবেন মঞ্চে। এ ছাড়া ব্ল্যাক আয়েড পিস, রবি উইলিয়ামস এবং ভারতের নোরা ফতেহির মতো অনেক সেলিব্রিটির উজ্জ্বল উপস্থিতি চোখে পড়বে বিশ্বকাপের মঞ্চে।
এদিকে বিশ্বকাপের তারার মেলায় সবার আগে চলে আসবে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর নাম। কাতারেই সম্ভবত ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলবেন এই দুই কিংবদন্তি ফুটবলার। বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা দুই জনপ্রিয় তারকার হাতে এখনো ওঠেনি বিশ্বসেরার ট্রফি। ফলে তাদের কাছে এবার বাড়তি চাওয়া থাকবে বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তোলার। ব্রাজিলও দীর্ঘদিন বিশ্বকাপ জেতেনি।
ফলে নেইমারের দিকে তাকিয়ে ব্রাজিলভক্তরা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের আলোচিত তারকা নিঃসন্দেহে কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড করিম বেঞ্জেমার ওপরই সম্ভবত বেশি আস্থা রাখছেন ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশম। ফুটবল গোলের খেলা। গোলেই ভাগ্য নির্ধারক করে। গোলেই আনন্দ। গোল করার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের নাম্বার ওয়ান তারকা অবশ্যই বেঞ্জেমা। কাতারে শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলবে ফ্রান্স। গত রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড এবারও এভারেজ দল। ইংলিশ দলটি বেশিরভাগ অভিজ্ঞ খেলোয়াড় নিয়ে গড়া। কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের দলের সবচেয়ে আলোচিত তারকা গতবারের গোল্ডেন বুটজয়ী অধিনায়ক হ্যারি কেন। চারবারের বিশ্বকাপ জয়ী জার্মানির দলে এবারও সবার উপরে রাখতে হবে অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড টমাস মুলার। বেশিরভাগ বয়সী ফুটবলার নিয়ে এবার কি চমক থাকবে জার্মানদের সেটাই দেখার। তবে বিগত সময়ের চেয়ে এবার বেশ ভালো দল স্পেন।
একঝাঁক তরুণ নিয়ে গড়া দলটি সেমিফাইনালের আগে কাতারের মাঠ ছাড়বে বলে মনে হয় না। গোল্ডেন জেনারেশনখ্যাত বেলজিয়ামের বড় তারকা অবশ্যই কেভিন ডি ব্রুইন। ইংলিশ লিগ মাতানো এই অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড যে কোনো প্রতিপক্ষ দলের জন্য ত্রাস। ওয়ানম্যান শো-পোল্যান্ড দলের সেরা আকর্ষণ রবার্ট লেভানডোস্কি। স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সিলোর জার্সিতে সাড়া জাগানো এই তারকা দলকে কতটুকু টানতে পারবেন বিশ্বকাপের ময়দানে, অপেক্ষায় থাকবেন তার ভক্তরা। এ ছাড়া গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদরিস এবার পরন্ত সময়ে। ফলে ক্রোয়াট অধিনায়ক দল টানা দূরের কথা, নিজে কতটুকু পারফর্ম করতে পারবেন প্রশ্ন অনেকের।
যদিও তারকাদের মেলায় মহাতারকা মেসি ও রোনাল্ডো। লিওনেল মেসি জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও সৌভাগ্য হয়নি বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নেয়ার। বাজিল কিংবদন্তি পেলে তিনবার, ম্যারাডোনা একবার বিশ্বকাপ হাতে নেয়ার সৌভাগ্যবান হয়েছিলেন। কিন্তু আর্জেন্টিনার জীবন্ত কিংবদন্তি মেসি ক্লাব ফুটবলে এমন কোনো ট্রফি নেই, যা তিনি জেতেননি। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদটা একবারও নিতে পারেননি। এই একটিমাত্র বিশ্বকাপ যদি হাতে নিতে পারতেন, তাহলে নিশ্চিত পেলে-ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্ব ম্লান হয়ে যেত আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকরের সামনে।
মেসি খুব করে চান, অন্তত তার জীবনে এই অপূর্ণতাটা ঘুচে যাক। ফলে কাতার বিশ্বকাপ হচ্ছে মেসির স্বপ্ন পূরণের আসর। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা খেলছে টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থেকে। তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স, খেলোয়াড়দের ফর্ম, দেড় বছর আগে কোপা আমেরিকা জয়ের গৌরব, আর্জেন্টিনাকে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিটের তকমা দিচ্ছে। কোচ লিওনেল স্কালোনির পরিকল্পনায় আবেগ নয়, যুক্তিযুক্ত কারণেই মনে হচ্ছে, বিশ্বকাপটা এবার জিততে পারে লিওনেল মেসির দল।
রেকর্ড ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য সামনে রেখে ২৪ নভেম্বর সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু করবে সাম্বার দেশ ব্রাজিল। ২০০২ সালে শেষবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। ২০ বছরে আর ট্রফির দেখা নেই। ২০১৪ সালে নিজ দেশের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল ব্রাজিল। শিরোপাখরা কাটাতে এবার শক্তিশালী দল নিয়েই কাতারে এসছেন নেইমাররা। ব্রাজিল তারকার কথায়, আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হচ্ছে বিশ্বকাপ জেতা।
যখন থেকে বুঝতে শিখেছি ফুটবল খেলা কী, তখন থেকেই আমার স্বপ্ন বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরার। সেই স্বপ্ন সফল করার আরেকটা সুযোগ পাচ্ছি। আশা করছি, এবার স্বপ্নটা সফল হবে। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ খেলা মানেই ফাইনালে ওঠাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। এবারের ব্রাজিল টিম বেশ পরিণত ও ভারসাম্যপূর্ণ। বেশ ভালো মানের খেলোয়াড় থাকায় ফাইনালের আগে কাতার থেকে ব্রাজিলকে বিদায় করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন ফুটবল বোদ্ধারা। কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিল স্কোয়াডে থাকা নামগুলোর মধ্যে থিয়াগো সিলভা, ভিনিসিয়ার জুনিয়র।
নেইমার, রাফিনহো, রড্রিগো, কাসেমিরো, পেড্রো অন্যতম। এরা একাই পার্থক্য গড়ে দিতে সক্ষম যে কোন ম্যাচে, যে কোনো দলের বিরুদ্ধে। আর নেইমার দলের সেরা তারকা। ম্যাচের সময় তার দিকেই তাকিয়ে থাকবেন দর্শক, ভক্তরা। তারুণ্যের জোয়ারে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য স্পেনের। ১৮ বছরের তরুণ ফরোয়ার্ড গাবি পায়েজ, ১৯ বছরের পেড্রি গঞ্জালেজ ও ২২ বছরের হুগো গুইলামনের সঙ্গে আনসু ফাতিই স্প্যানিশদের অন্যতম চালিকা শক্তি। পর্তুগাল দলে আছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার রোনাল্ডো।
তার অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্য মেশানো পরিণত একটা দল নিয়েই কাতারে লড়াই করবে পর্তুগিজরা। বড় ম্যাচে ভয়ংকর হয়ে উঠতে জানেন রোনাল্ডো। একাই ম্যাচ জিতিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন তিনি। বয়স তার নৈপুণ্যে থাবা বসালেও সবাই জানেন রোনাল্ডো কতটা চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারেন। আত্মবিশ্বাসের কারণ শুধু রোনাল্ডোর দলে থাকা নয়। এক ঝাঁক নতুন মুখ, যারা যে কোনো দলের ঘুম হারাম করে দিতে পারেন। দিয়োগো কোস্তা, রাফায়েল লিয়াও এবং নুনো মেন্দেস তাদের মধ্যে অন্যতম। ৩২ দেশের এই লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবে তা সময় বলবে। তবে প্রত্যেক দলই তাদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত।
বিনোদনের পাশাপাশি বিশ্বকাপে রয়েছে বিপুল অর্থ। বিজয়ী দল থেকে শুরু করে বিজিত, সবার জন্য মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করেছে ফিফা। ফলে এবার বিশ্বকাপে যেমন গ্ল্যামার থাকছে তেমনই থাকছে অর্থ। কাতার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দল পাবে রেকর্ড ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বিশ্বকাপের প্রাইজমানি থেকে এবার ৬০ লাখ ডলার বেশি। ২০০৬ বিশ্বকাপের সঙ্গে তুলনা করলে প্রাইজমানি বেড়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। শুধু অংশ নেয়ার জন্য ১২ লাখ ডলার করে পাবে প্রত্যেক দল।
কাতার বিশ্বকাপে ৬৩ দেশের মোট ৪১৬ ক্লাবের ফুটবলার এবারের বিশ্বকাপে নিজ নিজ দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন। মোট খেলোয়াড় সংখ্যা ৮৩০। এদিকে বিশ্ব নেতাদের কাছে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফানতিনো শান্তির আবেদন করেছেন। বিশ্বকাপের এক মাস তিনি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া চলমান প্রাণঘাতী যুদ্ধ ঘিরে ফিফা সভাপতির আবেগময়ী এই বার্তা। বিশ্বকাপের লড়াইটা সচরাচর হয়ে থাকে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার মধ্যে। এবারও ব্যত্যয় ঘটবে না। দক্ষিণ আমেরিকার পাওয়ার হাউস ব্রাজিল ও আজেন্টিনার সঙ্গে শিরোপা নিয়ে যুদ্ধ ইউরোপের দলগুলোর।
কাতারে ইউরোপ থেকে এগিয়ে থাকবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রন্স, রানার্সআপ ইংল্যান্ডের সঙ্গে পর্তুগাল ও স্পেন। মূলত এই ৬ দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে এবারের বিশ্বকাপ। তবে ফুটবল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের দাবি এবার ইউরোপ নয়। শিরোপা যাবে দক্ষিণ আমেরিকায়। এখন সময় ভালো বলতে পারবে হিসাব কোনদিকে গড়ায় আর ভাগ্যদেবী কোন দলকে আশীর্বাদ জানায়।