কারাগারে কিভাবে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয় জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট

14

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কারাগারে কিভাবে চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া ও পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জানাতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক সম্পূরক আবেদনের শুনানির পর মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রিটকারী আইনজীবী জে আর খান রবিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। আর কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম।
পরে আইনজীবী জে আর খান রবিন জানান, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪১টি কারা চিকিৎসকের শূন্য পদে চিকিৎসক আছে মাত্র ৪ জন। যে কারণে শূন্য পদগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগে আদালতের আগের আদেশ বাস্তবায়নের অবস্থা জানানোর নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করি। আজ আদালত আগের আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। আর এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে প্রতিবেদন দিতে মৌখিকভাবে আদেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ও কারা অধিদপ্তরকে প্রতিবেদন দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে। আর কারা মহাপরিদর্শককে বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত চিকিৎসক নিয়োগ না হবে ততদিন যেন প্রেষণে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে। আদালতের বক্তব্য আমি ইতোমধ্যে কারা মহাপরিদর্শককে জানিয়ে নোট দিয়েছি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রেষণে কারা চিকিৎসক নিয়োগ দিত। এখন স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানায়। সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) অনুরোধ করে নন ক্যাডারের চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যে যোগাযোগ করে আদালতের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছি।
দেশের মোট ৬৮ কারাগারে ১৪১ চিকিৎসক পদের ১৩৭টিই খালি উল্লেখ করে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক কারা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের কারাগারগুলোতে বন্দী প্রায় ৮৩ হাজার। কিন্তু তাদের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র চারজন। ভিআইপি বন্দীরা কারাগারের বাইরে কিছু হাসপাতালে সেবা নিতে পারলেও সাধারণ বন্দীদের বেশির ভাগের ভাগ্যে চিকিৎসা জোটে না। এভাবে আরেক ধরনের ‘নির্যাতন’ বা ‘শাস্তি’ ভোগ করতে হচ্ছে তাদের। এতে অনেক সময় কয়েদির মৃত্যু হচ্ছে। আবার আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটছে।
২০১৯ সালে রিটটি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন। তখন আদালত কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নিয়ে রুল জারি করেন। সেসঙ্গে কারাগারের চিকিৎসা ব্যবস্থা, চিকিৎসক নিয়োগসহ কারাগারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
পরে কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দিয়ে কারাগারে ২৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা জানায়। পরে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি হাইকোর্ট শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন। পরে গত বছর ১৭ জানুয়ারি কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দিয়ে জানায় ১৪১ পদের বিপরীতে ১২২ জন চিকিৎসক দেশের বিভিন্ন কারাগারে নিয়োজিত আছেন। ১২২ জনের মধ্যে ৭ জন কাজ করছেন। বাকি ১০৫ জন পর্যায়ক্রমে সংযুক্ত হবেন। এরপর করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে প্রেষণ বাতিল করে বেশ কিছু চিকিৎসককে তুলে নিলে পরে আর নিয়োগ হয়নি।