স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর আলমপুরে সিএনজি অটোরিক্সায় গ্যাস রিফুয়েলিং করে টাকা চাওয়ায় মেঘনা ফিলিং স্টেশনে হামলা-ভাংচুর করা হয়েছে। হামলার শিকার হয়েছেন ফিলিং স্টেশনের সেলস্ ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার আর সেলস্ম্যানরা। অফিস কাউন্টারের গ্লাস-দরজা ভেঙ্গে ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ারকে আহত করে ক্যাশ ড্রয়ার থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে নগদ ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা। দু’দফা হামলা ও ভাংচুরের ফলে আরো সাড়ে ৩ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। আর ঘটনা ঘটিয়েছেন সিএনজি অটোরিক্সার চালক নয়, যাত্রীবেশী সন্ত্রাসীরা। গত রবিবার বিকেলে নগরীর ২৭নং ওয়ার্ডের আলমপুরস্থ মেঘনা সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দু’দফা হামলার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোঃ দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭কে আসামী করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)’র মোগলাবাজার থানায় একটি এজাহার পেশ করেছেন। ইতোমধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযানও চালিয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্তদের কাউকে আটক করতে পারেনি।
এদিকে, আলমপুরস্থ মেঘনা সিএনজি ফিলিং স্টেশনে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে। সসোমবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে নগরির উপশহরস্থ কার্যালয়ে এসোসিয়েশন আয়োজিত প্রতিবাদ সভার প্রস্তাবে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, শক্ত হাতে এসব সন্ত্রাসীদের দমন করা না হলে শিগগিরই এসোসিয়েশন কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।
এজাহার সুত্রে জানা গেছে, গত রবিবার বিকেল ৪টার দিকে প্রচন্ড ভীড় ঠেলে সিরিয়াল ভেঙ্গে একটি সিএনজি অটোরিক্সার যাত্রীরা সেলসম্যানকে ধমকিয়ে জবরদস্তিমুলক সিএনজি রিফুয়েলিং করিয়ে নেয়। রিফুয়েলিংয়ের পর মাত্র ২১০ টাকা না দিয়ে অটোরিক্সাটি নিয়ে যাত্রীরা চলে যেতে চাইলে সেলসম্যান টাকা চায়। কেন টাকা চাওয়া হলো, এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে অটোরিক্সা থেকে যাত্রীরা নেমে সেলসম্যানকে প্রচন্ড মারধর করতে থাকে। পরে পাশের একটি চায়ের রেস্টুরেন্ট থেকে কাঠের রুল, লোহার রড ইত্যাদি নিয়ে ফিলিং স্টেশনে ঢুকে কর্মচারিদের এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকে। ঘটনা দেখে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারী ৩ সন্ত্রাসী চলে যায়। প্রায় আধঘন্টা পর সংঘবদ্ধ হয়ে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনহ ধারালো দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে পুনরায় ফিলিং স্টেশনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। হামলায় অফিস কাউন্টারের সামনের গ্লাস ও পাম্পমেশিন ইত্যাদিসহ ফিলিং স্টেশনের মূল্যবান জিনিষপত্র বাবদ সাড়ে ৩ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়। আত্মরক্ষার্থে ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার শ্যামল সিনহা অফিসের দরোজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলে হামলাকারীরা সাইড গ্লাস ভেঙে ভেতরে ঢুকে ক্যাশিয়ারকে প্রচন্ড মারপিট করে এবং ক্যাশ ড্রয়ারে থাকা নগদ নগদ ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। হামলার ঘটনায় সেলসম্যান তাপস বিশ্বাস ও ক্যাশিয়ার শ্যামল সিনহা আহত হন। হামলার ঘটনায় প্রতিবাদী হয়ে আশেপাশের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী এগিয়ে এলে হামলাকারীরা ‘ঘটনার ব্যাপারে কোন মামলা করলে এর পরিণাম ভালো হবে না’ বলে চলে যায়।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার মোঃ দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে স্থানীয় আলমপুর এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে তিতন মিয়া (৩০), আব্দুল জলিলের ছেলে নাইম আহমদ (২৮) ও কবির আহমদের ছেলে ইরান আহমদের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জনকে আসামী এসএমপি’র মোগলাবাজার থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। ইতোমধ্যেই পুলিশ দু’দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুরো ঘটনাটি ফিলিং স্টেশনের সিসিটিভি’র ক্যামেরায় রেকর্ড করা আছে বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত ৩ জনসহ আরো কিছু স্থানীয় সন্ত্রাসী এলাকায় উশৃংখল, দাঙ্গাবাজ, চাঁদাবাজ ও মাদকসেবী হিসেবে চিহ্নিত। প্রায়ই নিজেদের এলাকার দাপট দেখিয়ে এরা মেঘনা ফিলিং স্টেশনে এসে খারাপ আচরণের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। ক্ষেত্রবিশেষে এরা কর্মচারিদের উপর হাত তুলতেও দ্বিধা করে না। এদের বিষয়ে এলাকায় বার বার নালিশ দিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এন্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন ঘটনার ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।