শিক্ষার প্রথম ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। কিন্তু আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে কয়েক বছর আগে ইউনেসকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাবেই বাংলাদেশে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হচ্ছে না। এমনকি প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
শিক্ষার ভিত্তি গড়ে ওঠে যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, সেগুলোর মান সর্বত্র এক রকমও নয়। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কারণ অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়েই মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব আছে। উপযুক্ত ভবন নেই, আসবাব বা শিক্ষা উপকরণ নেই বললেই চলে।
‘সবার জন্য শিক্ষা’ এই লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। দেশে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষকের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার। কিন্তু সেই অনুপাতে শিক্ষার মান বেড়েছে কি না সে প্রশ্নটা এখনো রয়ে গেছে। পাশাপাশি শহর ও গ্রামের স্কুলের লেখাপড়ার মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে এসএসসি-এইচএসসির ফল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে মানের দিক থেকে শহর ও গ্রামের মধ্যে বিস্তর ফারাক।
শিক্ষার মানের উন্নতির প্রথম শর্ত ভালো শিক্ষক। যেকোনো পর্যায়ের শিক্ষকতার চেয়ে প্রাথমিকে শিক্ষকতা কঠিন। স্পর্শকাতর ও কোমলমতি শিশুদের বুঝে শিক্ষা দিতে হয়। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যায় চাকরি পেলেই শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেকেই কোনো চাকরি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত শিক্ষকতায় এসেছেন। মেধাবীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে নারাজ। দক্ষ শিক্ষকের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীই দুর্বলতা নিয়ে শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপটি পার করছে। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষার মান সেভাবে বাড়ছে না বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
মানসম্পন্ন শিক্ষক না পেলে শিক্ষার মান বাড়বে না। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না পেলে শিক্ষকরা দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন না। আবার পেশাজীবনের শুরুতেই শিক্ষকরা নিজেদের মতো করে পাঠদান শুরু করে দিলে প্রশিক্ষণও তাঁদের সেভাবে মানোন্নয়ন করতে পারে না।
প্রশিক্ষণের ঘাটতি থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে। ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি সারতে হবে। পদ্ধতির সফলতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।