স্পোর্টস ডেস্ক :
ব্যক্তিগত ১৫ রানে জীবন পেয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপস। তার তুলে দেওয়া সহজ ক্যাচ ফেলে দেন ইংল্যান্ডের মঈন আলী।
সুযোগ পেয়ে দারুণ এক ফিফটিও তুলে নেন ফিলিপস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কিউইদের জয় নিশ্চিত করতে পারেনি। বরং দারুণ জয় তুলে নিয়ে সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখলো ইংলিশরা।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভ পর্বের হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে গতকাল ব্রিসবেনে ২০ রানে জিতেছে ইংল্যান্ড। আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রান সংগ্রহ করে বাটলারবাহিনী। জবাবে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তুলতে পারে নিউজিল্যান্ড।
এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলেও ভালো অবস্থানে পৌঁছে গেল ইংল্যান্ড। ৪ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে অবস্থান ইংলিশদের। নেট রানরেটেও (+০.৫৪৭) তারা অস্ট্রেলিয়ার (-০.৩০৪) চেয়ে এগিয়ে। সমান পয়েন্ট নিয়ে তাই তিনে অবস্থান অজিদের। হারলেও আগের মতোই শীর্ষে আছে নিউজিল্যান্ড। সমান পয়েন্ট হলেও তাদের নেট রানরেট (+২.২৩৩) বাকিদের চেয়ে অনেক ভালো। ৪ পয়েন্ট কম নিয়ে চারে আছে শ্রীলঙ্কা।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা বাজে হয় নিউজিল্যান্ডের। দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার ডেভন কনওয়ের উইকেট হারায় তারা। ক্রিস ওকসের বলে জস বাটলারের হাতে কাচ দিয়ে ফেরার সময় ইংলিশ ওপেনারের নামের পাশে ছিল ৩ রান। এরপর দলীয় ২৮ রানে আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেন (১৬) বিদায় নেন ইংলিশ পেসার স্যাম কারানের বলে। তবে এরপর অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও গ্লেন ফিপিলস মিলে গড়েন দুর্দান্ত এক জুটি। অবশ্য দশম ওভারে আদিল রশিদের বলে ফিলিপসের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন মঈন আলী।
উইলিয়ামসন-ফিলিপস জুটি শুরুতে রান তুলতে হিমশিম খায়। শেষ ১০ ওভারে তাদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১৪ রান। এরপর থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু তাদের। ১২তম ওভারের প্রথম বলে তাদের জুটিতে ৫০ রান পূর্ণ হয়। ফিলিপস সেখান থেকে রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন। ১৪তম ওভারে আদিল রশিদের বলে দুই ছক্কা হাঁকানোর পথে তিনি তুলে নেন ফিফটিও। ২৫ বলে ফিফটির দেখা পান তিনি।
দারুণভাবে লক্ষ্যের দিকে ছুটতে থাকা কিউইরা বড় ধাক্কা খায় ১৫তম ওভারে। বেন স্টোকসের করা ওভারের পঞ্চম বলে রশিদের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন উইলিয়ামসন। তার ব্যাট থেকে আসে ৪০ বলে ৪ চারে ঠিক ৪০ রান। তারপরও ওই ওভারে ১০ রান আসে। ফলে শেষ ৩০ বলে ৫৭ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় কিউইদের সামনে। ১৬তম ওভারে আরও এক উইকেট হারায় তারা। এবার জিমি নিশামকে (৬) ফেরান মার্ক উড। ওই ওভারে আসে মাত্র ৩ রান।
শেষ চার ওভারে ৫৪ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে ১৭তম ওভারে ৫ রান তুলতে পারে নিউজিল্যান্ড; সেই সঙ্গে শেষ বলে হারায় ডেরিল মিচেলের (৩) উইকেট। ১৮তম ওভারে স্যাম কারানের বলে চাপের মুখে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন দারুণ খেলতে থাকা ফিলিপস। কিউইদের আশাও তাতে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। বিদায়ের আগে ৩৬ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৬২ রান করেন ফিলিপস। ১৯তম ওভারে আসে ১৪ রান। ফলে শেষ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬ রান; কিউইরা নিতে পারে ৫ রান।
বল হাতে ইংল্যান্ডের ক্রিস ওকস ও স্যাম কারান ২টি করে এবং মার্ক উড ও বেন স্টোকস ১টি করে উইকেট নেন।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস মিলে গড়েন ৮১ রানের দারুণ জুটি। দুজনেই দেখা পেয়েছেন ফিফটির দেখা। এর মধ্যে হেলস ৪০ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫২ রান করেন। ১১তম ওভারে কিউই স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন।
হেলস বিদায় নেওয়ার পর কিছুটা চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। কারণ ব্যাটিং অর্ডারে উপরে উঠে আসা মঈন আলী মাত্র ৬ বল মোকাবিলা করে ৫ রান করে কিউই স্পিনার ইশ সোদির শিকার হন। তবে এরপর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন বাটলার। ইংলিশ অধিনায়ক নিজেও ফিফটির দেখা পেয়ে যান। লিয়াম লিভিংস্টোনকে নিয়ে গড়েন ৪৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। ১৪ বলে ২০ রান করে লিভিংস্টোন বোল্ড হন লোকি ফার্গুসনের বলে।
লিভিংস্টোনের সঙ্গে জুটি ভাঙলেও একপ্রান্তে ঝড় তুলতে থাকেন বাটলার। কিন্তু ১৯তম ওভারে কিউই পেসার টিম সাউদির বলে জোড়া ধাক্কা খায় ইংলিশরা। প্রথম বলে ছক্কা হজম করার পরের বলে হ্যারি ব্রুককে (৭) বিদায় করেন সাউদি। চতুর্থ বলে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বাটলার রানআউট হয়ে ফেরেন।
বেন স্টোকস বলে ব্যাট ছুঁয়ে সিঙ্গেল নেওয়ার ইঙ্গিত দিলে দৌড়ে প্রান্ত বদল করার চেষ্টা করেন বাটলার। কিন্তু তাকে মাঝপথে ফেরত পাঠান স্টোকস। কিন্তু ক্রিজে পৌঁছানোর আগে কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের থ্রোয়ে স্ট্যাম্প ভাঙেন সাউদি। এর আগে বাটলারের ব্যাট থেকে আসে ৪৭ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৭৩ রান। শেষ ওভারে লেগ বিফোরের ফাঁদে পরে বিদায় নেন স্টোকসও (৮)।
বল হাতে ২ উইকেট নিয়েছেন ফার্গুসন। ১টি করে উইকেট গেছে সাউদি, স্যান্টনার এবং সোদির দখলে।