আমরা তো ঘরের মশা মারতে পারব না – স্বাস্থ্যমন্ত্রী

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অন্যান্য দেশের তুলনায় ডেঙ্গু জ্বরে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা কম বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। বলেছেন, মশাবাহিত এই রোগ কেবল বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর প্রকোপ আছে।
ডেঙ্গু প্রকোপ কমাতে ঘরে ঘরে গিয়ে এর বাহক এডিস মশা নির্মূল করা সম্ভব নয় জানিয়ে যার যার বাড়ির মশা তাদেরকেই মারার পরামর্শও দিয়েছেন মন্ত্রী।
শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন স্বপন।
দুই দশকের মধ্যে ডেঙ্গুর সবচেয়ে ভয়াবহ বিস্তারের আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে ২৩ হাজার ছাড়ানোর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে মৃতের সংখ্যা নিয়ে আছে বিভ্রান্তি। সরাকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৪ হলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের হিসাব বলছে, এই সংখ্যা ৬০ এর আশেপাশে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকরা দিন-রাত কাজ করছেন। এজন্য তারা প্রশংসার দাবিদার। আমরা রোজ মনিটর করছি। ডাক্তার নার্সের অভাব নেই। সবাই মিলে চেষ্টা করছি। সে কারণে মৃতের সংখ্যা কম।’
‘অন্যান্য দেশে যদি দেখেন, সেখানে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি। ফিলিপাইনে শত শত লোক মারা গেছে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে।… বিশ্বে এমন দেশ খুব কম আছে, যেখানে ডেঙ্গু নেই।’
মন্ত্রী বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা জানানোর পর সাংবাদিকরা জানান, শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২ জন ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে দুই জন মারা গেছেন। ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালেও অনেকে মারা গেছেন।
তখন মন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আরও ভালোভাবে জেনে আমি পরে জানাব।’
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং আতঙ্কের কিছু নেই দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবার ঈদের ছুটি বাতিল করেছি। সিটি করপোরেশন ভালো কাজ করছে। মশা কমানো গেলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও কমে যাবে। চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন, আমরা সব করছি।’
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য তিনটি ফ্লোর প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও জানান স্বজন। বলেন, ‘ইতিমধ্যে দুটির কাজ শেষ হয়েছে। এখানে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হবে।’
ডেঙ্গু শনাক্ত করতে বিদেশ থেকে ওষুধ আনা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে দুই লাখ কিট আনা হয়েছে। সুতরাং কোথাও পরীক্ষার সমস্যা হবে না।’
বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার কিট নেই এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জবাব আসে, ‘এ বিষয়টি দেখার জন্য গঠিত সেল কাজ করছে। তারা তদারকি করছে।’
যার যার ঘরের মশা তাকেই মারতে হবে
এমন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবো। মশা যার ঘরের ভেতরে আছে তাকেও সচেতন হতে হবে। আমরা তো তার ঘরে গিয়ে মশা মারতে পারব না।’
মধ্যে মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ প্রশ্নের মুখে পড়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা জনগণকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলছেন, ডেঙ্গুর বাহক এডিস ইজিপ্টি মশা প্রধানত ঘরের ভেতর জন্ম নেয়। এ ছাড়া যেখানে সেখানে ফেলে রাখা পুরনো গাড়ির টায়ার, ডাবের খোসা, বোতল বা অন্য কোনো বস্তু, যেখানে পানি জমে থাকে, সেটা ডেঙ্গুর প্রজননক্ষেত্র হতে পারে। এ সব বিষয়ে সচেতনতা গড়তে নগর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগহীনতাও স্পষ্ট।
মন্ত্রী বলেন, ‘মশা দমনের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালের নয়। সিটি করপোরেশনকে এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। এছাড়া সবাইকে সচেতন হয়ে নিজের ঘর বাড়ি ও আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। সকলে মিলে কাজ করলে আমরা এটা নির্মূল করতে পারব।’