রোগীদের বাইরে যাওয়া রোধ করুন

14

মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তিত ধরন, ভেজাল বা দূষিত খাদ্য গ্রহণ, অত্যধিক পরিবেশদূষণসহ নানা কারণে বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর ক্যান্সারে প্রায় এক কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের মতে, বাংলাদেশেও ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে না আছে ন্যূনতম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, না আছে প্রয়োজনীয় বিশেষায়িত হাসপাতাল।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকবলেরও অভাব রয়েছে। তার চেয়েও বেশি অভাব রয়েছে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির। সবচেয়ে বড় কথা, কোন ধরনের ক্যান্সার কী হারে বাড়ছে, তাদের কতজন সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে, কোন কোন অঞ্চলে রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ইত্যাদি সম্পর্কে পর্যাপ্ত গবেষণাও নেই। ফলে সঠিকভাবে জানাও যায় না যে বাংলাদেশে কতসংখ্যক মানুষ এই মুহূর্তে ক্যান্সারে আক্রান্ত। তা সত্ত্বেও নানা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্যান্সার ও ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকেন। গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। অথচ তাদের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন মাত্র ২২৮ জন। এই অনুপাত অত্যন্ত কম। ফলে ক্যান্সার রোগীরা এক ধরনের অসহায় অবস্থার মধ্যে আছে।
ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল। প্রধানত তিন পদ্ধতিতে ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়। সেগুলো হচ্ছে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও সার্জারি। চিকিৎসার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসকদেরও তিন ভাগে ভাগ করা হয়। মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট এবং সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট। আবার রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়া অনেক জটিল হওয়ায় সেখানেও নানা বিভাগ রয়েছে। রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির কারণে রোগীদের হার্ট, কিডনিসহ অন্যান্য তন্ত্রে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। তাই ক্যান্সার চিকিৎসার সঙ্গে সেসব চিকিৎসাও অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত থাকতে হয়। বাংলাদেশের খুব কম হাসপাতালেই এসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
জানা যায়, যে ২২৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন, তার মধ্যে মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট আছেন মাত্র ২৫ জন এবং সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট আছেন মাত্র ৩০ জন। দেশে যেখানে কমপক্ষে ২৫০টি রেডিওথেরাপি মেশিন প্রয়োজন, সেখানে আছে মাত্র ৩৭টি, তা-ও সব মেশিন সব সময় কর্মক্ষম থাকে না। সরকারিভাবে ঢাকার বাইরে মাত্র চারটি মেডিক্যাল কলেজে এক ইউনিট করে রেডিওথেরাপি মেশিন রয়েছে। ফলে সারা দেশের ক্যান্সার রোগীদের ঢাকায় এসে মাসের পর মাস থাকতে হয়। এমনিতেই ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ঢাকায় থেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তা আরো ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে।
দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার মান উন্নয়নে দ্রুত ব্যাপক পরিকল্পনা নিতে হবে। তা না হলে চিকিৎসার জন্য রোগীদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়তেই থাকবে।