অস্ত্রোপচার দ্রুত চালু করা হউক

7

সারা দেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় ভয়ংকর রকমের অব্যবস্থাপনা রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত এমন অনেক খবর আসছে। কোথাও হাসপাতাল ভবন আছে, চিকিৎসক নেই। কোথাও চিকিৎসক আছে কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই বা বিকল হয়ে আছে।
ইচ্ছাকৃতভাবে যন্ত্রপাতি বিকল করে রাখার অভিযোগও আছে, যাতে রোগীদের বাইরের ক্লিনিকে পাঠানো যায় এবং কমিশন পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক হাসপাতালের নির্ধারিত সময়েও বাইরের ক্লিনিকে চিকিৎসা দেন। বেসরকারি ক্লিনিকগুলো চিকিৎসা দেওয়ার পরিবর্তে রোগীদের পকেট কাটে, তার পরও এদের সম্পর্কে বহু অভিযোগ আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদপ্তর অব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত খবরের প্রতি যেন চোখ বন্ধ রাখে।
সরকারি হাসপাতালে সাধারণত চিকিৎসা নিতে আসে নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের বেশির ভাগের পক্ষেই বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে গিয়ে উচ্চমূল্যে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। অথচ প্রতিনিয়ত প্রসবজনিত সমস্যা নিয়ে অনেক প্রসূতি মা নীলফামারীর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে এসে ফিরে যাচ্ছেন। জানা যায়, হাসপাতালটিতে মঞ্জুরীকৃত জনবল কাঠামো অনুযায়ী চিকিৎসকসহ ১০ জনই কাজ করছেন। আর অবেদনবিদ হিসেবে কাজ করেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, যাঁকে অ্যানেসথেসিয়ার বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সদর উপজেলার সেই চিকিৎসা কর্মকর্তার পদটি খালি রয়েছে। ফলে অ্যানেসথেসিয়া বা অবেদন করতে না পারায় জরুরি রোগীদেরও অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন মনে করলেই রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় দরিদ্র প্রসূতি মায়েদের পরিণতি কী হচ্ছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। অথচ ২০ শয্যার এই হাসপাতালটিতে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের সব ব্যবস্থাই আছে। জানা যায়, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার না হওয়ায় অনেক যন্ত্রপাতিই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
শুধু নীলফামারীর এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রই নয়, রংপুুর বিভাগের আরো অনেক কেন্দ্রেরই একই অবস্থা। জেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রেড জটিলতার কারণে পরিবার পরিকল্পনার ৯০ শতাংশ অবেদনবিদ (অ্যানেসথেটিস্ট) চাকরি ছেড়ে গেছেন। ফলে রংপুর বিভাগে এখন মাত্র দুজন অ্যানেসথেটিস্ট কর্মরত আছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু তাঁরা এই সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগই নিচ্ছেন না।
আমরা আশা করি, নীলফামারীসহ দেশের সব মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে অবেদনবিদ চিকিৎসকের ব্যবস্থা করে অবিলম্বে অস্ত্রোপচার চালু করা হবে।