নির্বাচন করতে ইমরান খানের বাধা নেই – হাইকোর্ট

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
তোশাখানা মামলায় পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) রায়ের বিরুদ্ধে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন স্থানীয় হাইকোর্ট। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে তার জন্য কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আদালতের বিচারপতি। খবর জিও নিউজের।
গত শুক্রবার (২১ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় কোষাগারে উপহার জমাদান সংক্রান্ত মামলায় ইমরান খানের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে রায় দেয় নির্বাচন কমিশন। সেসময় খবর ছড়ায়, আগামী পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকেও নিষিদ্ধ থাকবেন পিটিআই চেয়ারম্যান।
সেদিনই এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ইমরান খান। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ রোববার সেই মামলার শুনানি করেন এবং শুরুতেই আপিলে আপত্তির বিষয়ে জানতে চান।
ইমরান খানের আইনজীবী ব্যারিস্টার আলী জাফর আদালতকে জানান, তাদের একটি আপত্তি বায়োমেট্রিক যাচাইকরণে, আরেকটি ইসিপির সিদ্ধান্তের একটি প্রত্যয়িত অনুলিপি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত না থাকা নিয়ে। এছাড়া, নির্বাচন কমিশন এখনো পুরো রায় প্রকাশ করেনি। আদেশনামার মাত্র দুটি পৃষ্ঠা তারা হাতে পেয়েছেন বলে জানান জাফর।
এসময় বিচারপতি জানতে চান, এই মামলায় এত তাড়াহুড়ো কীসের? জবাবে ইমরানের আইনজীবী বলেন, কিছুদিন পরেই তার মক্কেলকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এছাড়া পিটিআই প্রধানের দুর্নীতির বিচার হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে ইসিপি। তিনি বলেন, এই ‘কলঙ্ক’ আগামী নির্বাচনে তার মক্কেলের ক্ষতি করতে পারে।
শুনানিতে বিচারপতি বলেন, ইমরান খানকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে কেবল জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে। বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ বলেন, ইমরান খানকে কেবল তার নির্বাচনী আসনটিতে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে তা করতে পারেন, তাতে কোনো বাধা নেই।
এর আগে, গত শুক্রবার তোশাখানা মামলায় ইমরান খানকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বসম্মত রায় দেয় ইসিপির পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চ। এতে বলা হয়, অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ইমরান খান জাতীয় পরিষদের সদস্য হওয়ার অযোগ্য।
এদিন ইসলামাবাদে ইসিপি সচিবালয়ে রায় ঘোষণা করেন পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজা। রায়ে বলা হয়, ইমরান খান আর জাতীয় পরিষদের সদস্য নন এবং তার প্রতিক্রিয়া সঠিক ছিল না। এ কারণে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় জাতীয় পরিষদে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
সেদিন পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে জানানো হয়েছিল, তোশাখানা রেফারেন্সে ভুল তথ্য দেওয়ায় পিটিআই প্রধানকে সংবিধানের ৬৩(১)(পি) ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় সংসদ বা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। রায়ে বলা হয়েছে, ভুল তথ্য দেওয়ায় ইমরানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু হবে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় তোশাখানা পরিচালনা করে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অন্যান্য দেশের সরকার ও রাজ্যের প্রধান, সংসদ সদস্য, আমলা, কর্মকর্তাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া মূল্যবান উপহার তোশাখানায় সংরক্ষণ করা হয়। নিয়ম অনুসারে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাওয়া উপহার বা এ জাতীয় অন্যান্য উপকরণগুলোর বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক।
অভিযোগ উঠেছে, পিটিআই সরকারে থাকাকালে ইমরান খানের পাওয়া উপহারের যথাযথ বিবরণ প্রকাশ করেনি। এমনকি এ বিষয়ে পাকিস্তান তথ্য কমিশনের (পিআইসি) নির্দেশও উপেক্ষা করেছিল তারা। পরে, গত ৮ সেপ্টেম্বর ইসিপি’তে জমা দেওয়া লিখিত জবাবে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার পাওয়া কমপক্ষে চারটি উপহার বিক্রি করার কথা স্বীকার করেন।
পাকিস্তানের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২ কোটি ১৫ লাখ রুপি দেওয়ার পরে যে উপহারগুলো সংগ্রহ করেছিলেন, সেগুলো বিক্রি করে প্রায় ৫ কোটি ৮০ লাখ রুপি পেয়েছেন। এসব উপহারের মধ্যে একটি গ্রাফ হাতঘড়ি, এক জোড়া কাফ লিংক, একটি দামি কলম, একটি আংটি এবং চারটি রোলেক্স ঘড়ি ছিল।