রোহিঙ্গা সমস্যা এখন বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গারা সারা দেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। নিবন্ধিত ১১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে বর্তমানে হদিস আছে ৯ লাখেরও কম রোহিঙ্গা। এর অর্থ, দুই লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এরই মধ্যে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি সেজে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ক্ষতি করছে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে দেশের আইন-শৃঙ্খলার জন্য রীতিমতো হুমকি তৈরি করছে। মাদক ও অস্ত্র পাচারের মতো বড় ধরনের অপরাধে এদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। ক্যাম্পের মধ্যেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে গত এক বছরে কমপক্ষে ১৫ জন রোহিঙ্গা খুন হয়েছে এসব সন্ত্রাসীর হাতে। জানা যায়, যারা নিহত হয়েছে তাঁদের সবাই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কিংবা ভাসানচরে স্থানান্তরের পক্ষে ছিল। কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনেও নেমে এসেছে এক দুর্বিষহ অবস্থা। তারাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যত বিলম্বিত হবে, এই সমস্যাগুলো ততই তীব্র হতে থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে চীনের রাষ্ট্রদূত একটি সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের জান্তা সরকার আগের চুক্তি অনুযায়ীই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশ প্রত্যাবাসন চায় না। তাদের পেছনে কিছু আন্তর্জাতিক উসকানিও কাজ করে। আবার চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীরাও প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করে। ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম দফা প্রত্যাবাসন উদ্যোগে দুই হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গা তালিকাভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যাবাসনের দিন তাদের একজনও ফিরে যেতে রাজি হয়নি। পরে জানা যায়, রাতে সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পগুলোতে ব্যাপক ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেছিল। গত এক বছরে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের অনেকেই মাঝি (নেতা) ছিল এবং তারা সবাই প্রত্যাবাসনের পক্ষে ছিল। তাই ক্যাম্পগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিতে হবে। আশ্রিত রোহিঙ্গারা যাতে নির্ভয়ে তাদের মতামত দিতে পারে সে রকম পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
আমরা আশা করি, ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থেই এই প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে।