মাউশির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পদোন্নতিতে দুর্নীতির সিন্ডিকেট

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। কম্পিউটার জানা বাধ্যতামূলক হলেও মাউস ধরতে জানেন না এমন কর্মচারীদেরও পদোন্নতি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আপত্তি জানিয়েছেন পদোন্নতি কমিটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পিএসসি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের শেষের দিকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী, দক্ষ বেয়ারার, বুক সর্টারসহ চতুর্থ শ্রেণির পদ থেকে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষাও নেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে আট দিন পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় ৯২৯ জন অংশ নেন।
নিয়ম অনুযায়ী যুব উন্নয়ন অধিদফতরে বা কমার্শিয়াল কলেজের প্রশিক্ষক পরীক্ষা নেওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষা নিয়েছেন সিদ্ধেশ্বরী কলেজের কম্পিউটার প্রভাষক। ৫০ জনের একটি ব্যাচ করে প্রতিদিন দুটি ব্যাচে পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রথম ব্যাচের প্রশ্ন দিয়ে দ্বিতীয় ব্যাচের পরীক্ষা নেওয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও আপত্তি তোলেন। নিয়ম হলো প্রার্থীর সামনে যা টাইপ করা হয়েছে তা প্রিন্ট করে পরীক্ষার্থীর স্বাক্ষর নেওয়া। কিন্তু তা করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী কোনও কর্মচারী পরীক্ষা নেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে যুক্ত থাকতে পারবে না। অথচ কম্পিউটার থেকে পরীক্ষার ফাইল পেনড্রাইভে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও পদোন্নতি কমিটির সদস্য সচিব বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের পছন্দের কর্মচারীরা।
পদোন্নতি কমিটির প্রতিনিধি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বাজেট) নূরে আলম বলেন, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রসিডিউর মেইনটেন করা হয়নি। আমি বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। পিএসসির প্রতিনিধি আমার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। নতুন করে পরীক্ষা নিলেই তো সমস্যা থাকে না। পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও দেরি করা হচ্ছে। ‘
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অভিযোগ পেনড্রাইভ এবং পরীক্ষার খাতা ছিল বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের কাছে। খাতাগুলো তিনি উচ্চমান সহকারী কাবুল মোল্লা, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযুক্ত একজনসহ আরও দুজনের কাছে দেন। তারা খাতা পরিবর্তন করে দেয়, পছন্দের প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করে দেয়। এতে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অভিযোগ, মাউশি থেকে ২২ জন কর্মচারী পদোন্নতির পরীক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু কয়েকজন ছাড়া বাকিরা কম্পিউটারের মাউসও ধরতে জানেন না। কিন্তু সবার পদোন্নতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। আর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের অধীনে অফিসের বাইরের যারা কম্পিউটার জানেন তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের কর্মচারী বদলিতে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। পছন্দের লোকদের সুবিধাজনক শাখায় বদলি করা হয়েছে। যাদের পছন্দ নয় তাদের বিভিন্ন শাখায় এবং ঢাকার বাইরে বদলি করা হচ্ছে। বদলি নিয়েও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন অনেকে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উচ্চমান সহকারী কাবুল মোল্লা বলেন, ‘অভিযোগ সত্য নয়। বাইরের (অধিদফতরের অধীনে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত) প্রার্থীরা আপনাকে যেমন বিভিন্ন কথা বলেছেন, আমার কাছ থেকেও অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন। আমি কিছুই জানি না। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, মহাপরিচালকের কাছের লোক হওয়ায় যেমন খুশি তেমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সাধারণ প্রশাসন শাখার উপ-পরিচালক (প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস। মহাপরিচালকের আস্থাভাজন হওয়ায় বিভিন্ন পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে দুর্নীতির সুযোগ নিচ্ছেন তিনি। কলেজ শাখার অপছন্দের লোককে মাধ্যমিক শাখায় আবার মাধ্যমিক শাখার পছন্দের লোককে কলেজ শাখার লাভজনক পদে বদলি করেছেন।
বদলিতেও দুর্নীতির অভিযোগ
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের ৪৯২টি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বদলির দায়িত্ব বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের নিয়ন্ত্রণে। মহাপরিচালকের আস্থাভাজন হওয়ায় সেখানেও স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি করেছেন বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ প্রশাসনের উপ-পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমাদের কাজ শেষ। সবারই (পদোন্নতি কমিটির প্রতিনিধি) স্বাক্ষর (পদোন্নতির রেজুলেশন) হয়ে গেছে। কিছু কিছু পোস্ট আছে সেগুলোর সঙ্গে কম্পিউটার রিলেটেড না কিন্তু কম্পিউটার জানা লাগবে। ডিজি স্যার বলেছেন আমি মিনিস্ট্রিতে লিখি। ওইটা নরমাল করে আরও কিছু লোককে দিতে পারি কিনা সে কারণেই পেন্ডিং আছে। অধিদফতরের বাইরে কর্মরতদের বঞ্চিত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এসব ভুয়া-ভিত্তিহীন। ’
তিন বছরের অধিক সময় থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলিতে অনিয়ম প্রসঙ্গে সাধারণ প্রশাসনের উপ-পরিচালক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘তিন বছরের বেশি সময় যাদের হয়েছে তাদের বদলি র‌্যানডম চলছে। অন্যদেরও করা হবে।’
মহাপরিচালকের আস্থাভাজন হিসেবে সুযোগ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহাপরিচালক আমাকে স্নেহ করেন। এর বেশি কিছু না।
এ বিষয়ে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।