কাজিরবাজার ডেস্ক :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দেশের প্রধান কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল। সংসদীয় আসনের সংখ্যা হিসাবে সবগুলোতে না পারলেও সুনির্দিষ্ট আসনকেন্দ্রিক প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে এসব দলের।
কিছু দলের ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে দ্বৈত মত রয়েছে। এসব দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দুই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে ভাঙনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আবার কিছু দল ‘সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙা হলে এবং ক্ষমতাসীনরা দুর্বল হলে’ পক্ষ ত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানাবে।
শনিবার (১ অক্টোবর) ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিসহ কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি দলই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সাংগঠনিক প্রস্তুতি, প্রার্থী বাছাই এবং সর্বোপরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কী কী সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে, এ নিয়েও রাজনৈতিক কৌশল প্রণয়ন করছেন নীতিনির্ধারণী নেতারা।
২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের তো বেশি আসন নাই। রাজনীতি তো এখন অনেকটা নাই বললেই চলে। তারপরও দেখি বছরটা পার হোক। আবার সমমনা দল আছে আমাদের। সব বিষয় নিয়ে ভাবতেছি। নির্বাচনকে পজিটিভভাবে দেখছি। পরিস্থিতি বলে দেবে কী করবো আমরা।’
জমিয়তের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলছেন, ‘নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়া নিয়ে তার দল কোনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি।’ তবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘জমিয়ত নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। আমরা সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এসেছি। স্থানীয় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছি।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি-জোট ছেড়ে আসা খেলাফত মজলিস। দলটির প্রভাবশালী একাধিক নেতা জানান, এখন পর্যন্ত দলের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই। দলটির একজন প্রভাবশালী নেতা শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের মতো নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আগাচ্ছি। সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছি আমাদের মতো নির্দিষ্ট আসনে। তবে কত আসনে প্রার্থী দেওয়া যাবে, সেসব এখনও ঠিক হয়নি।’
যদিও দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘যদি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তাহলে আমরা যাবো না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলে যাবো। ইসি যদি নিরপেক্ষ হয় তাহলে যাবো। যদিও এই নির্বাচন কমিশন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।’
এ ক্ষেত্রে যারা নির্বাচনে যেতে চায় এবং সে কারণে দল ভাঙনের মুখে পড়তে পারে কিনাÍ এমন প্রশ্নে মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘পার্টি ভাঙনের মুখে পড়বে, যারা যায় তারা যাবে। তাহলে কী করবো। আমি আমির হিসেবে বলতে পারি, এখনও নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয় নাই। হলে বুঝতে পারবো। তবে আমরা ব্যক্তিগত মত হচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী বাছাই-প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসলামী আন্দোলন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থিতা, একটি বাতিল হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। প্রায় অধিকাংশ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ইসলামী আন্দোলনের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি বছরব্যাপী কাজের অংশ। দ্বাদশ নির্বাচনের বিষয়ে দলের অবস্থান নির্দলীয় সরকারের পক্ষে। তবে শেষ মুহূর্তে কী হয়, সেটা এখনও নীতিনির্ধারকরা ঠিক করেননি।’
ইসলামী ঐক্যজোটের একটি প্রভাবশালী সূত্র জানায়, কিছু আসনের জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম শুরু করেছে ইসলামী ঐক্যজোট। সারা দেশে প্রার্থী দেওয়ার মতো পরিস্থিতি না থাকায় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা নিজেদের পছন্দমতো আসনে প্রার্থিতা ও বিজয়ী হওয়ার নিশ্চয়তা চায় মাত্র। দলের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও চলমান। কতগুলো আসনে নির্বাচন করবো, সেটা নির্ভর করছে সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর।’
ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠতা রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে জাকের পার্টি। এই দলটি ২০১৮ সালে ৯১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে, এমন ইঙ্গিত রয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শামীম পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। তবে নির্বাচনে আমরা একক না জোটগত করবো, সেটা এখনও নির্ধারণ হয়নি। ২০১৮ সালের ৯১টি আসনে গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে জাকের পার্টি নির্বাচন করে। এ বছর সেই সংখ্যাটা বাড়তে পারে। আমাদের প্রস্তুতি ভালো, প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম চলছে।’
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি ও জাতীয় সংহতি মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা একে এম আশরাফুল হক বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনের বিকল্প নেই। সুতরাং দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা সুসংহত করতে আমরা সব সময়ই নির্বাচনমুখী রাজনীতি করে আসছি। গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন সৃষ্টি হওয়ায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’ ‘সব রাজনৈতিক দলকে আস্থায় নিয়ে এসে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি’র দাবি জানান আশরাফুল হক।
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে মাইজভাণ্ডারিভিত্তিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। দলটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনমুখী করতে নানা কর্মসূচি পালন করছে। দলটির চেয়ারম্যান সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর। সকল দলের অংশ গ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসঊদ। তিনি বিগত কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও আগামী নির্বাচনে তার দলের কেউ কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন একজন প্রভাবশালী নেতা।
নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। দলটির নতুন নির্বাচিত আমির এম এ মতিন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। আমাদের অবস্থান নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। বিগত কিছু সময় আগে আমাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে, প্রার্থী বাছাই করার জন্য। এখন যেহেতু নতুন কমিটি হয়েছে তাই আগে আমরা আমাদের ঢাকার অফিস পুরোদমে চালু করার পর এ বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নেবো। গত নির্বাচনে আমরা ২৭ আসনে প্রার্থিতা দিয়েছিলাম।’