১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের ব্যয় বাড়ছে লাখ টাকা

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ইভিএম প্রতি ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় তিন লাখ, যা পাঁচ বছর আগে হাতে নেওয়ার প্রকল্পের চেয়ে এক লাখ টাকার মতো বেশি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, সোমবারের (১৯ সেপ্টেম্বর) বৈঠকে নতুন ইভিএম প্রকল্পের প্রস্তাবের ওপর অনুমোদন দিয়েছেন ইসি। ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাবে দুই লাখ ইভিএম, ১০টি অঞ্চলে ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ১০টি ওয়্যারহাউজ নির্মাণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ইভিএম পরিবহনের জন্য গাড়ি কেনার বিষয়টি রাখা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রতি ইভিএমের মূল্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার মতো। এতে ইভিএম কেনার পেছনেই ব্যয় হবে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে ৫২২টি থানা নির্বাচন কার্যালয়ের জন্য ৫২২টি এবং ঢাকার জন্য ১৬টি পিকআপভ্যান কেনার বিষয়টিও রাখা হয়েছে প্রকল্পে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে পিক প্রতি ৬৫ লাখ করে ৩৫০ কোটি টাকা।
এদিকে ১০ অঞ্চলে ১০ ইভিএম ওয়্যারহাউজের নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬শ কোটি টাকা। ওয়্যারহাউজগুলো বহুতল না করে একতলা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে প্রকল্প প্রস্তাবে।
অন্যদিকে পিকআপভ্যানের জন্য ড্রাইভার, নির্বাচন কার্যালয় প্রতি একজন সহকারী প্রোগ্রামার, একজন ইভিএম অপারেটরসহ তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারী; সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার পাঁচশ লোকবলের বেতন প্রভৃতি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে।
বর্তমানে চলমান ইভিএম প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালে। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর ইভিএম প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ লাখ পাঁচ হাজার। এই প্রকল্পের অধীনেই কেনা হয় দেড় লাখ ইভিএম। এক্ষেত্রে নতুন প্রকল্পে ইভিএম প্রতি ব্যয় বাড়ছে লাখ টাকার মতো।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এ বিষয়ে বলেছেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বর্তমানে আমাদের কাছে যে ইভিএম আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোট করার সম্ভব। তাই ১৫০টি আসনে নির্বাচন করতে হলে নতুন করে ইভিএম কিনতে হবে। এজন্য ইসি সচিবালয় নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব কমিশন সভায় তুলেছিল। আমরা এটার অনুমোদন দিয়েছি। এখন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। তারা অনুমোদন করবে কী করবে না এটা তাদের বিষয়।
৩শ আসনেই কেন ইভিএমে ভোট করছেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই ইসি সচিব রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, আমাদের প্রয়োজনীয় অর্থ যদি দেন, তবে ৩শ আসনেই ইভিএমে ভোটগ্রহণ করবো। আপনারা কী চান আবারও ব্যালটে ভোটের মাধ্যমে সেই সেহরি, ইফতারি খাক?
বিএনপি এবং ইসির সংলাপে এসে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিরাট অংশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ না করার পক্ষে বলেছে। এমনকি তারা লিখিতও দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। তবে মো. আলমগীর বলছেন, সংলাপের আসার আগে তাদের এই বক্তব্য লিখিত ছিল, কিন্তু আমাদের সঙ্গে আলোচনার পর অনেকেই মাইন্ড চেঞ্জ করেছেন। সেগুলোর ভিডিও ক্লিপ আমাদের কাছে আছে। এছাড়া অনেকেই বলেছেন যদি কারচুপি করা না যায়, তবেই ইভিএম চায় তারা। সব দিক থেকেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি ইভিএমে কারচুপি করা যায় না। কাজেই সেই হিসেবেই আমরা দেখেছি, মোট ১৭টি দল ইভিএম চায়।
২০১০ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল।
কয়েক বছর ভালো ফল পাওয়া গেলেও ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এমনকি ত্রুটি হওয়ার কারণও উদ্ধার করতে পারেনি।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে। একইসঙ্গে নতুন এবং উন্নতমানে ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
ওই সিদ্ধান্তের আলোকে কেএম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে অধিকতর উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নেয়। নতুন ইভিএম দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে প্রথম ভোট নিয়ে সফল হয় নির্বাচন কমিশন। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ছয়টি আসনে) ও অন্যান্য উপ-নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এই মেশিন ব্যবহার করে বিগত কমিশন। বর্তমানে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন ইভিএমের ব্যবহার আরও বাড়াতে চায়। এক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচনের মতো তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ব্যবহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।