বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলক অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাক্সিক্ষত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। তাই আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে ভালো ও বেশি আয়ের পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম। কর্মদক্ষতায় সবার ওপরে রয়েছে সিঙ্গাপুর।
সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে চতুর্থ। কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের ওপরে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) সম্প্রতি ‘লেবার মার্কেট স্টাডিজ ফর এসইআইপি অন স্কিল ডিমান্ড, সাপ্লাই অ্যান্ড মিসম্যাচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের দক্ষতায় ঘাটতি আছে। গবেষণায় এটাও উঠে এসেছে যে দেশের শ্রমবাজারেও অনেক অসংগতি আছে। যে পরিমাণ দক্ষ শ্রমিক দরকার, তা মিলছে না। বিশেষ করে ব্যবস্থাপক ও পেশাজীবীদের মধ্যে এই ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, তৈরি পোশাক শিল্প এবং হালকা প্রকৌশল শিল্পে উচ্চ পর্যায়ে দক্ষ লোকের বিপুল ঘাটতি রয়েছে।
বিআইডিএসের গবেষণা বলছে, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ উপখাতে মোট ১.৭৬ শতাংশ শ্রমিকের প্রশিক্ষণ রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা উপখাতে প্রশিক্ষণ রয়েছে ১১.৯৩ শতাংশ শ্রমিকের। সেবা ও পর্যটন উপখাতে ২.৫ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তৈরি পোশাক খাতে প্রশিক্ষণ রয়েছে ০.৯৯ শতাংশ শ্রমিকের। নির্মাণ উপখাতে প্রশিক্ষণ রয়েছে ০.৪৫ শতাংশ শ্রমিকের। চামড়া উপখাতে ১ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। হালকা প্রকৌশল খাতে ১.৭৮ শতাংশ, তথ্য-প্রযুক্তি উপখাতে ১১.৭৮ শতাংশ এবং জাহাজ নির্মাণ উপখাতে ০.৬২ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ইলেকট্রনিক উপখাতে ৫.১৭ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা ধরে রাখতে পারলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়বে। কমবে বিদেশনির্ভরতা। দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হলে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। অদক্ষ শ্রমিক শিল্প-কারখানায় যেমন উৎপাদনশীলতা কমাচ্ছে, তেমনি প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছে না। ফলে একসময় মধ্যম আয়ের ফাঁদের মতো নিম্ন উৎপাদনশীলতার ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপযুক্ত দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে সম্ভব সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।