কমলগঞ্জে চা শ্রমিকদের আন্দোলন শক্ত হচ্ছে ॥ ৩শ’ টাকা মজুরি দে, নইলে বুকে গুলি দে

13

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
টানা ১৩ দিন ধরে চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। ৩০০ টাকা মজুরি দে, নইলে গুলি দে” সহ চা শ্রমিকরা বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
দফায় দফায় বৈঠক হলে সঠিকভাবে নিরসন হচ্ছে না। চা শ্রমিকদের একটিই দাবী ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এদিকে শ্রমিক নেতারা সমঝোতা স্বাক্ষর করে আন্দোলন তুলে নিলেও চা শ্রমিকদের বিশাল অংশ তা না মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
২৩ আগষ্ট জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে তাদের আন্দোলন তুলে নিয়ে কাজে যোগদান করার আহবান জানান। মজুরির ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী উত্থাপন করা হবে।
এদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সড়কপথ অবরোধ ও ট্রেন আটকিয়ে আন্দোলন করেছেন চা শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে শহরের নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় চৌমুহনীতে সড়কপথ অবরোধ করে শ্রমিকরা এ আন্দোলন করেন।
পরে বিকেল ৪টার দিকে ওই এলাকায় আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন ঘন্টাখানেক আটকিয়ে রাখেন শ্রমিকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সড়ক ও রেলপথের যাত্রীরা।
জানা যায়, উপজেলার কালোটি, রাঙ্গিছড়া, রাজানগরসহ কয়েকটি বাগানের সহস্রাধিক শ্রমিকরা মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে কুলাউড়া-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় চা শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদি হাসান, কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওসার দস্তগীর, কুলাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুস ছালেক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের অবরোধ তুলে নিতে শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করেন। ঘন্টাখানেক পর ৫টার দিকে ট্রেন ছেড়ে দেন শ্রমিকরা।
২১ আগষ্ট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে রাত ৯টার দিকে শুরু করে দিবাগত রাত রাত তিনটা পর্যন্ত চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।
এ সময় পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া ও বিভাগীয় শ্রম পরিচালক নাহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। টানা প্রায় ছয় ঘণ্টা চলা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে একটি লিখিত যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বাস ও আস্তা রেখে শ্রমিকরা তাদের নির্ধারিত চলমান ১২০ টাকা মজুরিতেই আজ থেকে কাজে যোগ দেবেন। শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের আবেদন করেছেন।
তারা আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী আসন্ন দুর্গাপুজার আগে ভিডিও কনফারেন্স করে চা শ্রমিকদের মজুরি বিবেচনা করে সেটি ঘোষণা করবেন। তাছাড়া যে কয়েক দিন কর্মবিরতি চলেছে সেই সময়ের মজুরি বাগান মালিকরা শ্রমিকদের দেবেন। অন্য দাবিগুলো জেলা প্রশাসকের কাছে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ লিখিতভাবে দেবেন।
কিন্তু পরদিন সোমবার একাংশের শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও অন্যরা তা মেনে না নিয়ে আন্দোলন আরও জোরালো করার ঘোষণা দেন।
সরজমিন বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, বিশাল জনগোষ্ঠী চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি। তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। আবার কিছু কিছু চা শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে দেখা গেছে।