লাখাইছড়া চা বাগানে টিলা ধসে ৪ নারী চা শ্রমিকের মৃত্যু

44
স্বজনদের আহাজারি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাখাইছড়া চা বাগানের উড়িষ্যা টিলা। যে টিলায় ৪ নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

শ্রীমঙ্গল থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নের লাখাইছড়া চা বাগানে উড়িষ্যা টিলায় সুড়ঙ্গ থেকে মাটির ঘর লেপার জন্য একধরণের সাদামাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে টিলা ধসে একই পরিবারের দুইজনসহ ৪ নারী চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হন একজন।
শুক্রবার (১৯ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জীবনমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মজুরির দাবিতে চা শ্রমিকদের কর্মবিরতির মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফিনলে টি কোম্পানির লাখাই চা বাগানের স্কুল লাইনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন, লাখাইছড়া স্কুল লাইনের সুনীল ভূমিজের স্ত্রী সুকন্তলা ভূমিজ (৪০), স্বপন ভূমিজের স্ত্রী হিরা ভূমিজ (৩০), অরুণ মাহালির স্ত্রী রাধা মাহালি (২৫) ও রিপন ভূমিজের স্ত্রী পুনি ভূমিজ (২৫)। আহত অঞ্জনা ভূমিজ (১৫) ওই বাগানের কমল ভূমিজের মেয়ে। তিনি সুস্থ আছেন।
স্থানীয় লাখাইছড়া চা বাগানের তপন বৈদ্য বলেন, গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘর লেপার জন্য মেয়েসহ পাঁচজন নারী চা-বাগানের একটি টিলায় মাটি আনতে যান। টিলার নিচ থেকে মাটি কাটায় কিছুটা সুড়ঙ্গের মতো হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে ভেতর থেকে সাদা মাটি নেওয়ার একপর্যায়ে টিলা ধসে চারজন চাপা পড়ে। তারমধ্যে অঞ্জণা নামে মেয়েটি মাটির নিচে চাপা পড়লেও তার মাথা বাহিরে থাকায় কোনোভাবে বেঁচে যায়। পরে সে দৌঁড়ে এসে ঘরে খবর দিলে বাগানের শতশত মানুষ জড়ো হয় এবং মাটি খুঁড়ে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলে চারজনের মৃত্যু হয়।
ফিনলে টি কোম্পানির কালিঘাট চা বাগানের জিএম সাদেক আহমেদ বলেন, ‘ঘর লেপার জন্য চা বাগানের ভেতরে একটি টিলায় মাটি আনতে গিয়েছিলেন তারা। এ সময় টিলার মাটি নরম থাকায় টিলা ধসে পড়ে ঘটনাস্থলেই চার জনের মৃত্যু হয়।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি পংকজ কন্দ জানান, একই পরিবারের দুইজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই চার নারীর মধ্যে একজন লাখাইছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অরুণ মালীর স্ত্রী রাধা মাহালী।
এদিকে দূর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন,বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি, শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, ফিনলে টি কোম্পানির চীফ অপারেটিং অফিসার তাহসিন আহমদ চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামীম অর রশিদ তালুকদার,লাখাইছড়া চা বাগানের জিএম সালাউদ্দিন আহমদ, কালিঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা প্রমুখ।
মর্মান্তিক এই ঘটনায় লাখাইছড়া চা বাগান জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনরা হাসপাতালে লাশের পাশে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তাদেরকে সান্তনাকে দিতে ছুটে যান ড.আব্দুস শহীদ এমপি। তিনি মৃত ব্যক্তিদের সৎকার কাজের জন্য আব্দুস শহীদ এমপির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রেদওয়ান আহসান উল্লাহ জানান, হাসপাতালে আনার আগেই চার নারীর মৃত্যু হয়েছে। লাশ হাসপাতালে রয়েছে।
মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) শহিদুল হক মুন্সী ও ওসি শামীম অর রশিদ তালকুদার বলেন, ‘টিলা ধসে চার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি,ওই টিলার অনেক উঁচু। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ বলেন, নিহত চা শ্রমিকদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ওই টিলার ওপরে এখনো ১০/১২ পরিবার বসবাস করছেন। তাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষকে। টিলার চারপাশে কাটাতারে বেড়া দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি সংশ্লিষ্টদেরকে।’
শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লিডার আব্দুল কাদির বলেন,‘ চা শ্রমিকদের মাটির বসতঘর সংস্কারের জন্য মাটি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলো তাঁরা। টিলা অনেক উঁচু হওযায় ও মাটি নরম থাকায় ধসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই চার নারীর মৃত্যু হয়। আমরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
স্থানীয় এমপির শোক : মৌলভীবাজার-৪ সংসদীয় আসনের সাবেক চীফ হুইপ ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যার উপাধ্যক্ষ ডা. আব্দুস শহিদ নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু শ্রীমঙ্গল পাহাড় অধ্যুষিত এলাকা। । এ ঘটনায় আমরা ব্যথিত এবং মর্মাহত। সরকারের পক্ষ থেকে শোকাহত পরিবারের সবাইকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।