জ্বালানি তেলের সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি গাড়ির জ্বালানি ব্যয় কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু সেটি কিভাবে কার্যকর করা হবে? সিদ্ধান্তটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না তা পর্যালোচনাই বা করা হবে কিভাবে? প্রকল্পসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগে কত গাড়ি আছে, কত জ্বালানি খরচ হচ্ছে কেন্দ্রীয়ভাবে তার কোনো হিসাব নেই।
জানা যায়, গাড়িসহ অন্যান্য সরঞ্জামের তথ্য এক জায়গায় পাওয়া এবং সংরক্ষণের (ডাটাবেইস) জন্য ২০১৮ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে সফটওয়্যার কেনা হয়েছিল; কিন্তু বেশির ভাগ প্রকল্প কর্মকর্তা বারবার চিঠি দেওয়ার পরও এসংক্রান্ত তথ্য দেননি। ফলে কাজে লাগেনি পিএমআইএস সফটওয়্যারটি এবং ২০২২ সালে এসেও প্রকল্পের গাড়ির ডাটাবেইস তৈরি হয়নি।
এ অবস্থায় নতুন একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর আওতায় ৪৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে।
প্রকল্পের গাড়ি নিয়ে বছরের পর বছর নয়, দশকের পর দশক ধরে কথা হচ্ছে; কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না। ‘যে গল্পের শেষ নেই’-এর মতো কেবল আলাপ-আলোচনাই হচ্ছে। নিয়ম আছে কোনো প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে প্রকল্পের গাড়ি সরকারের যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে জমা দিতে হবে। কিন্তু বছরের পর বছর চলে যায় বহু প্রকল্পের গাড়ি জমা দেওয়া হয়নি।
২০১০ সালে প্রকল্পের গাড়ি জমা করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। জানা যায়, চার দফা নোটিশ দেওয়ার পরও ২০টি মন্ত্রণালয় এবং এদের অধীন বিভাগগুলো প্রকল্পের গাড়ির কোনো হিসাবই দেয়নি। আর ৩০টি মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত হিসাবে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রকল্পের আট হাজার ৩৩০টি গাড়ি পরিবহন পুলে জমা হয়নি। কোথায় যায় এসব ‘হদিসবিহীন’ গাড়ি? জানা যায়, এর কিছু কিছু আমলাদের স্ত্রী-সন্তান, এমনকি আত্মীয়স্বজনরাও ব্যবহার করেন।
গত বছরের এক হিসাব থেকে জানা যায়, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ছোট-বড় এক হাজার ৮১৯টি প্রকল্প চলমান ছিল। কোনো কোনো কর্মকর্তার মতে, এসব প্রকল্পে গাড়ির সংখ্যা ৩০ হাজার হতে পারে। তারও কোনো সঠিক হিসাব সরকারের কাছে নেই। এটা কি কোনো দেশের কার্যকর প্রশাসনের চিত্র হতে পারে?
আমাদের প্রশ্ন, প্রকল্প শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে গাড়ি জমা না হলেও কেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) বিরুদ্ধে মামলা হয় না? কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? সেই গাড়িগুলো রাস্তায় চলে কিভাবে? কেন বিআরটিএর মাধ্যমে গাড়িগুলো আটক করা হয় না?
প্রকল্পের গাড়ি পরিবহন পুলে জমা না হওয়ার পেছনে শুধু প্রকল্প পরিচালক নয়, আমরা মনে করি, সরকারেরও সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই অনিয়মের অবসান চাই।