কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা নানা দাবী দাওয়া নিয়ে এ মুহূর্তে মাঠে নেমেছেন। দীর্ঘদিনের দাবী পূরণ না হওয়ায় তারা এবার সরকার ও বাগান কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ারী দিচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন চা শ্রমিকরা। সাতদিনের মধ্যে দাবি মানা না হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তারা। তাতে কাজ না হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে মাঠে নেমেছেন শ্রমিকরা।
চা শ্রমিকরা জানান, চা শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। শ্রম আইন অনুসারে চা শ্রমিকদের পক্ষে দরকষাকষি করে এই সংগঠন। সম্প্রতি চা-বাগান মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনয়ায় শ্রমিক ইউনিয়ন চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, বোনাস প্রদান, ছুটিসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। পরবর্তীতে মালিকপক্ষ মজুরি ১৪ টাকা বাড়নোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু চা শ্রমিকরা এই মজুরি বৃদ্ধিকে ‘পরিহাস’ বলে মনে করছেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা জানান, গত ১ আগস্ট চা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটি ও ভ্যালি কমিটিসমূহের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে চা সংসদে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৩ আগস্ট সেই স্মারকলিপি প্রদান করে চা শ্রমিক ইউনিয়ন। সেখানে সাতদিনের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ‘গ্রহণযোগ্য সুরাহার’ দাবি জানানো হয়। অন্যথায় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
আলটিমেটামের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন চা শ্রমিকরা।
কর্মসূচি অনুসারে গতকাল সকাল ৯টা থেকে ১১টা অবধি কর্মবিরতি পালন করেছেন তারা। একইসাথে লাক্কাতুরা, মালনিছড়া, খাদিম, কেওয়াছড়া, দলদলি, জাফলং, লালাখালসহ সিলেটের প্রায় সকল চা-বাগান এলাকায় মানববন্ধন করা হয়েছে। এসব মানববন্ধন কর্মসূচিতে চা শ্রমিক নেতা রাজু গোয়ালা, রতন গোয়ালা, মিন্টু দাস, সবুজ তাতী, সুশান্ত চাষা, রঘু মিয়া, মনোরঞ্জন নায়েক, রতিলাল, নিরঞ্জন গোয়ালা, মহরম আলী, নগেন্দ্র গোয়ালা, মৃত্যুঞ্জয়, ঋতেষ নায়েক, দিলিপ নায়েক, খলিল মিয়া প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ‘চা শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নিম্ন মজুরি দিয়ে তাদের সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নে আমরা আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু আমাদের ন্যায্য দাবির প্রতি মালিকপক্ষ কর্ণপাত করেননি। আমরা সাতদিন সময় দিয়েছিলাম। তাকে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ন্যায্য সুরাহা না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী চার-পাঁচদিন টানা কর্মসূচি চলবে। এরপরও কোনো সুরাহা না হলে শুরু হবে অনির্দিষ্টকালের আন্দোলন।’
প্রসঙ্গত, চা শ্রমিকরা বর্তমানে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি পান। এর বাইরে তাদেরকে স্বল্পমূল্যে খাবার, চিকিৎসাসেবা ও বাসস্থানের ঘর দেওয়া হয়।