বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বিএসইসির নানা পদক্ষেপ

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজারে সূচকের টানা পতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সূচকের পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে।
টানা পতনে পুঁজি হারিয়ে নিস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী। বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কাজ করছে সংস্থাটি। পতন ঠেকাতে শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেওয়া) নির্ধারণ করেছে কমিশন। বিএসইসি এমন সময়োপযোগী পদক্ষেপে ঘুরে দাঁড়াবে দেশের পুঁজিবাজার এমনটি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (৩০ জুলাই) সাধারণ বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা বাংলানিউজকে এমনটি জানিয়েছেন।
ঈদ পরবর্তী বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঈদের পর ১২ কার্যদিবস পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে দুই কার্যদিবস সূচক সামান্য বাড়লেও ১০ কার্যদিবসই সূচকের পতন হয়। লেনদেন শুরুর আগে গত ৭ জুলাই ডিএসইএক্স সূচক ৬ হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। ১২ কার্যদিবস পর ২৮ জুলাই পর্যন্ত ৩৮৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯৮০ পয়েন্টে অবস্থান করছে অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৭৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪৮পয়েন্ট কমে যথাক্রমে ১৩০৮ ও ২১৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১১৫৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৭ হাজার ৫৯৭ পয়েন্টে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। মূল্যস্ফীতির অব্যাহত চাপ, দেশীয় মুদ্রামানের পতন, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে আসা, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্য ও শিল্পপণ্যের দাম বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহে পতন এবং সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি, যা অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন ও যোগাযোগ অবকাঠামোকে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে। নানা গুজবের কারণে শেয়ারের বিক্রি চাপ বাড়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। ঠিক এই সময়ে গত বৃহস্পতিবার শেয়ারের ফ্লোর প্রাইজ নির্ধারণ করে বিএসইসি। বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক ও সময়োপযোগী বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লা নাইম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার আনপ্রেডিক্টেবল। এখানে ৮০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী। এটাকে কেন্দ্র করেই আমাদের চিন্তা করতে হয়। অথচ বিশ্বের বাজারগুলোতে ৮০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অর্থনীতিতে যে সাপোর্টটা দিতে পারে ব্যাক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের দ্বারা এটি সম্ভব না। ব্যাক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগ একটি সময় পর্যন্ত করা যা এখানে ব্যক্তির আয়ের সীমাবদ্ধতা থাকে। দাম কমার পর একবার দুই বার সেই শেয়ার কিনে সমন্বয় করতে পারে এর পর আর সম্ভব হয় না।
তাই এই মুহূর্তে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ বিএসইসির একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আপৎকালীন এই সিদ্ধান্তে ঘুরে দাঁড়াবে দেশের পুঁজিবাজার বলে মনে করেন আতাউল্লা নাইম। বর্তমান কমিশনের আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই। তারা যে কোনো বিষয়ে কুইক রেসপন্স করে। তবে পুঁজিবাজার নিয়ে সবাইকে নাক গলাতে দেওয়া ঠিক হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই বলে মনে করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে চলমান সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে হাই নেটওয়ার্ক ইন্ডিভিজুয়ালদের (বড় বিনিয়োগকারীরা) সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএসইসি। তারা বাজারে বিনিয়োগে আসছেন। একই সঙ্গে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করেছেন কমিশন, যা রোববার থেকে কার্যকর হবে। কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, পুঁজিবাজার নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বাজার কিছুদিন ভালো থাকলে আস্থার সংকটও কাটবে এবং তারল্য বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করেন তারা।