মৌলভীবাজার রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের স্মারকলিপি পেশ ॥ ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধের দাবি

16

বিদ্যুৎ অপচয়ের অজুহাতে মৌলভীবাজার শহর থেকে ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান, ইজিবাইক উচ্ছেদ বন্ধ করার দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারের পৌর মেয়র বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ২৮ জুলাই দুপুরে ইউনিয়নের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা সমবেত হয়ে মিছিল সহকারে চৌমুহনা এলাকা প্রদক্ষিণ করে পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি শহীদ সাগ্নিক, রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, সহ-সভাপতি মোঃ গিয়াসউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিমউদ্দিন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ সোহেল আহমদ সুবেল এবং রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটির নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপির অনুলিপি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর পেশ করা হয়। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় মানুষ হয়ে মানুষকে টেনে নেওয়ার বদলে ব্যাটারি ও মোটর চালিত এই রিক্সায় শ্রমিকরা যেমন তুলনামূলক সহজে কম পরিশ্রমে যাত্রী পরিবহন করতে পারছেন তেমনি যাত্রী সাধারণের কাছে স্বল্প খরচে আরামদায়ক পরিবহন হিসেবে এই সকল রিক্সা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার কারণে বর্তমানে দেশের অনেক জেলায় ব্যাটারি চালিত রিক্সা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; এমন কি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলাতেও ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান অবাধে চলছে, এমনকি অনেক উপজেলাতে পা-চালিত রিক্সা প্রায় উঠেই গেছে। অথচ একই সময়ে মৌলভীবাজার শহর হতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান উচ্ছেদের তৎপরতা চলছে। কিন্তু একই সাথে আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম নিরিহ, দরিদ্র, অবহেলিত রিক্সা শ্রমিকদের রুটি রোজীকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে রিক্সা উচ্ছেদের তৎপরতা চললেও ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান বিক্রিতে কোন রকম বাধা-নিষেধ নেই। যার কারণে এখনও অবাধে ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান বিক্রি হচ্ছে, মহল বিশেষও এ ব্যাপারে নিরবতা পালন করছেন। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে এই রিক্সাগুলো তো আমরা তৈরি করিনি; জীবনের শেষ সম্বলটুকু দিয়ে কিনে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করছি। যদি এই রিক্সা অবৈধই হয়ে থাকবে তাহলে কেন এগুলো আমাদের নিকট বিক্রি করা হলো বা এখনও কেন বিক্রি করা হচ্ছে? বিদ্যুৎ অপচয়ের জন্য শুধুমাত্র ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যানকে দায়ী করে উচ্ছেদ চালানো হলে শত শত রিক্সা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় করোনা মহামারি ও সাম্প্রতিক বন্যায় বিপর্যস্ত নিম্নআয়ের জনগণ বর্তমানের দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা। এ রকম সময়ে শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা না করে ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত চরম অমানবিক। এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলে ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান চলতে দেওয়া হচ্ছে না। অতীতেও কখনো দুর্ঘটনার অজুহাতে, কখনো যানজটের অজুহাতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা-ভ্যান উচ্ছেদ করার চেষ্টা হয়েছে। দুর্নীতি, সিস্টেম লস ও অব্যবস্থপনার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব; একই সাথে অনুৎপাদনশীল খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো হলেও নিরীহ রিক্সা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবিকার উপর খড়্গ হস্ত হতে হবে না। তাই শত শত রিক্সা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবিকা রক্ষায় আমার অবিলম্বে এই তৎপরতা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। স্মারকলিপিতে আরও দাবি করা হয় বর্তমান বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে রিকশা ভাড়া পুনঃনির্ধারণ; যানজট নিরসনে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং বন্ধ; যাত্রী ও শ্রমিকদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত রিক্সা স্ট্যান্ড স্থাপন ; রিকশা শ্রমিকদের উপর সকল অন্যায় জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ ও রিক্সা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং ব্যবস্থা চালু, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে রিক্সা-ভ্যান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং শাহমোস্তফা সড়ক ও শ্রীমঙ্গল সড়কের সংযোগস্থলে ট্রাফিক গোল চত্ত্বর নির্মাণ করা। বিজ্ঞপ্তি