স্টাফ রিপোর্টার :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ও নরসিংদী সদর থানার চিনিশপুর গ্রামের ওহাব মিয়ার পুত্র মো. বুলবুল আহমেদ (২২) হত্যা মামলার আসামী আবুল হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। পরে আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। বুধবার বিকেল পৌণে ৫ টার দিকে তাকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর বিচারক সুমন ভূঁইয়ার আদালতে তোলা হলে গতাল সন্ধ্যার দিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় সে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবাশীষ দেব।
তিনি বলেন, আমরা তাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীর জন্য আদালতে উপস্থাপন করি। সে বিজ্ঞ বিচারকের কাছে জবানবন্দী দেয়। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, এ মামরায় এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে শাবির পেছনের টিলাগাঁওয়ের আনিছ আলীর পুত্র আবুল হোসেন (১৯)-কে আদালতে তুলে পুলিশ। সে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। এছাড়া অন্য ২ আসামী শাবির পেছনের টিলাগাঁওয়ের মো. গোলাব আহমদের পুত্র কামরুল আহমদ (২৯), একই গ্রামের মৃত তছির আলীর পুত্র মো. হাসান (১৯)-কে আজ বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হবে। এছাড়া আটক হওয়া বুলবুলের কথিত প্রেমিকা ঊর্মিকে মঙ্গলবার রাতেই জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে এ ব্যাপারে জালালবাদ থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসএমপি পুলিশ। এসময় মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, মূলত ছিনতাই করতেই বুলবুলকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। আর এই ছুরিকাঘাত করেন কামরুল ইসলাম। এ সময় তার সঙ্গে আবুল হোসেন ও মো. হাসান ছিলেন। তাদের সবার বাড়ি টিলাগাঁও এলাকায়। তারা সকলেই গ্রেফতার রয়েছে। অপরদিকে বুলবুলের কথিত প্রেমিকা ঊর্মি প্রসঙ্গে আজবাহার আলী শেখ বলেন, ঊর্মিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে বলেছে, ঘটনার সময় বুলবুলের কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিল। বুলবুলের মানিব্যাগও খোয়া যায়নি। গ্রেফতারকৃতরা বলেছে, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতের পর রক্ত দেখে তারা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর হাসপাতাল থেকে উর্মির চলে যাওয়া এবং কললিস্ট মুছে ফেলার বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্কের কারণে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, উর্মি হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাকে পাওয়া যায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, নিহত বুলবুলের জানাজা ক্যাম্পাসে হবে। জানাজায় শরিক হতে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসে। তার চলে আসার পেছনে অপরাধমূলক কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। আমরা উর্মির মোবাইল ও কললিস্ট চেক করে দেখেছি। এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কারও সাথে উর্মির মোবাইল যোগাযোগ ছিল না। তার মোবাইলে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মোঃ আজবাহার আলী শেখ পিপিএম এছাড়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) বি, এম, আশরাফ উল্যাহ তাহের, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডমিন-উত্তর) জ্যোতির্ময় সরকার পিপিএম, জালালাবাদ থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ সামছুদ্দিন ভূঁইয়া, জালালাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নাজমুল হুদা খান, জালালাবাদ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আবু খালেদ মামুন, তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) দেবাশীষ দেব প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের গাজীকালুর টিলায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন বুলবুল। তিনি লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন জালালাবাদ থানায় মামলা করেন। বুলবুল হত্যায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে কামরুল ইসলামের বাড়ি থেকে গতকাল বুধবার সকালে বুলবুল হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও বুলবুলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে নিহত শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তাকে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের সামাজিক গোরস্তানে বাবার পাশে তাকে শায়িত করা হয়।