কাজিরবাজার ডেস্ক :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে থেমে থেমে যানজট। এতে দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশ পাড়ি দিচ্ছেন যাত্রীরা। এ অবস্থা চলমান থাকলে আসন্ন ঈদযাত্রায় ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কা করছেন তারা।
এ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিন থেকে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আধুরিয়া এলাকা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে থেমে থেমে যানজট দেখা দিচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থেকে নাকাল এ সড়কে চলাচলকারীরা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আধুরিয়া থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত সড়কের যানজটের নেপথ্যে রয়েছে চারটি স্পট। যেখান থেকে প্রতিদিনই থেমে থেমে এ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে গোলাকান্দাইল থেকে ভুলতা পর্যন্ত হকারদের দৌরাত্ম্যে রাস্তা সংকুচিত হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বরপা বাসস্টপেজে রয়েছে লোকাল আরও চাটি যানবাহন স্ট্যান্ড। এসকল স্ট্যান্ডের যানের অবাধ বিচরণে হরহামেশায় তৈরি হচ্ছে যানজট। মহাসড়কের রূপসী ও বরাবতে উভয় দিকের লিংক রোডের মুখে লেগুনা, ইজিবাইক ও রিকশার অভয়ারণ্য হওয়ার কারণে ঠুনকো কারণেই যানজট হচ্ছে।
ভুলতা ফ্লাইওভার চালুর পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার গাড়িগুলো ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যাওয়ায় যানজট অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু গোলাকান্দাইল গোলচত্বর থেকে ভুলতা গোলচত্বর পর্যন্ত মহাসড়কের অনেকটা জায়গা দখল করে হকাররা অস্থায়ীভাবে ব্যবসার পসরা বসানোয় সারাদিনই এখানে যানজট লেগে থাকে।
মহাসড়কের বরপা বাসস্ট্যান্ডে বরপা-মহজমপুর সড়কের মুখে ১০০ গজের ভেতর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রবেশমুখ বন্ধ করে গড়ে উঠেছে চারটি স্ট্যান্ড। এখানে মহাসড়কের লিংক রোডের পূর্বপাশে একাংশ দখল করে বরপা থেকে যাত্রাবাড়ী যাতায়াতকারী গ্রিনবাংলা পরিবহনের স্ট্যান্ড, মহাসড়কের লিংক রোডের পশ্চিম পাশে লেগুনা স্ট্যান্ড, বরপা-মহজম সড়কের মুখে দুপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে ইজিবাইক স্ট্যান্ড। এছাড়া বিভিন্ন পরিবহনের স্টপেজের কারণেও যানবাহন থেমে যানজট তৈরি হচ্ছে। কখনো কখনো এ জট মাইলের পর মাইল বিস্তৃত হচ্ছে, দিনে জট লেগে রাত গড়াচ্ছে।
এ সড়কে চলাচলকারী স্থানীয় যাত্রী শফিকুর রহমান জানান, একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঢাকার হেড অফিসে চাকরি করেন তিনি। প্রতিদিন এ সড়কে যাতায়াত করেন। ভুলতা গাউছিয়া, বরপা, রূপসী ও বরাব স্ট্যান্ড থেকেই প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হয়।
মেঘলা পরিবহনের চালক কবির হোসেন জানান, কয়েকদিনের যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকায় ট্রিপ কমার সঙ্গে সঙ্গে আয়ও কমে গেছে তাদের। এভাবে যানজট লেগে থাকলে ঈদে বাড়তি আয় তো দূরের কথা সংসারের খরচ জোগানোই কঠিন হবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তিনিও এ যানজট সমস্যার সমাধান চান।
ঢাকা-সিলেট সড়কে চলাচলকারী মিতালী পরিবহনের যাত্রী মাহফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যেতে আমার ছয় ঘণ্টা সময় লাগার কথা। তবে ভুলতা গাউছিয়া আসতেই লেগেছে সাড়ে তিন ঘণ্টা। কখন গন্তব্যে যেতে পারব তাও জানি না।
তিনি বলেন, ভুলতা গাউছিয়া, বরপা, রূপসী ও বরাব স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত। তা না হলে আসন্ন ঈদে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ থাকবে না।
ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রোডে চলাচলকারী যাতায়াত পরিবহনের চালক আবু তাহের বলেন, প্রতিদিন দুটি ট্রিপ হওয়ার কথা থাকলে যানজটের কারণে প্রায় দিনই এক ট্রিপের বেশি হয় না। এভাবে চলতে থাকলে ঈদে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান বলেন, যদিও মহাসড়কের সমস্যা সমাধান করা হাইওয়ে পুলিশের কাজ। তারপরও আমরা অবস্থা বেগতিক দেখলেই সহযোগিতা করে থাকি। মহাসড়কে হকারদের বেশি উপস্থিতি দেখলে পরিষ্কার করার চেষ্টা করি।
এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) ফারুক বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। সেইসঙ্গে আমাদের জনবল কম থাকায় যানজট তৈরি হওয়া স্পটগুলোতে সুচারুভাবে কার্যসম্পাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, যানজট তৈরি হওয়া স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণে ১২ থেকে ১৫ জন অফিসার প্রয়োজন হলেও সাতজনকে নিয়ে কাজ করছি। কিছুদিনের মধ্যে জনবল সমস্যা সমাধান হওয়ার কথা রয়েছে। আসন্ন ঈদে মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছি।