কাজিরবাজার ডেস্ক :
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়ার পর দেশেও কমানো হলো দাম। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যতটা কমেছে, সেই তুলনায় দেশে দাম কমেছে অনেকটাই কম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৬ টাকা কমিয়ে করা হয়েছে ১৯৯ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয়েছে ১৮০ টাকা। ৫ লিটারের বোতলের দাম ঠিক করা হয়েছে ৯৮০ টাকা। অর্থাৎ ৫ লিটারের বোতলে প্রতি লিটারে দাম পড়ে ১৯৬ টাকা।
রবিবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা জানায়। গত ৯ জুন বাজেট ঘোষণার দিন সব শেষ তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সেদিন লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত তেলের দাম ঠিক করা হয় লিটারে ২০৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয় ১৮৫ টাকা।
এক বছর আগেও বোতলজাত তেলের লিটার ছিল ১৩৪ টাকা করে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তা নির্ধারণ করা হয় ১৬৮ টাকা। ব্যবসায়ীরা মার্চ থেকে লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সরকার রাজি না হলে সেদিন থেকে বাজারে সরবরাহে দেখা দেয় ঘাটতি।
এরপর সরকার ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিক্রির ওপর থেকে ভ্যাট পুরোপুরি আর আমদানিতে ৫ শতাংশ রেখে বাকি সব ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। পরে গত ২০ মার্চ লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয় ১৬০ টাকা। সেদিন পাঁচ লিটারের বোতল ৭৯৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৭৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের দাম ১৪৩ টাকা থেকে কমিয়ে ১৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ৫ মে তেলের দাম লিটারে এক লাফে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৯৮ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ক্রমেই বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির মধ্যে দুই সপ্তাহ ধরে বিশ্ববাজারে দাম অনেকটাই পড়তির দিকে। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাব গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে তেলের দাম পুনর্র্র্নিধারণের দাবি জানায়। তারা জানায়, বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম ২৬ শতাংশ কমেছে।
তবে যে হারে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে কমানোর ক্ষেত্রে এত কমহারে সন্তুষ্ট নয় ভোক্তারা। এ বিষয়ে ভোক্তাদের জন্য সংগঠন কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান কিছুটা নাখোশ বলে জানান। তিনি বলেন, ‘হ্রাসকৃত হারটি আরও বাড়তে পারত। আশা করি সরকার দাম কমানোর এই হারটি পুনর্বিবেচনা করবেন। একইভাবে ডলারের দাম উঠা-নামায় যাতে তেলের মূল্যে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে না পারে সে জন্য সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।’
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম কমেছে ২৬ শতাংশের মতো। এর বিপরীতে দেশে সয়াবিনের দাম কমেছে মাত্র ৩ শতাংশ। কেন এত কম হারে দাম কমানো হলো জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘সয়াবিন আমদানি হয়ে থাকে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো দূরপাচ্যের দেশগুলো থেকে। ওই সব বাজার থেকে তেল আনতে ৪০ থেকে ৫০ দিন সময় লাগে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশে তার প্রভাব পড়তে দেরি হয়। আবার দেশে যখন কমে আসে তার সুফল পেতে না পেতেই দেখা যায় আন্তর্জাতিক বাজার আবারও বেড়ে গেছে।’
তবে এবার দাম কমহারে কমানোর অন্যতম কারণ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দামে অস্থিরতা। আগে এক ডলারে যে টাকা পাওয়া যেত, এখন তার চাইতে আরও বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর প্রভাব এই তেলের মূল্যে পড়েছে। ফলে দাম আশানুরূপহারে কমানো সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্য সচিব দাবি করেন, ‘তেলের দাম হ্রাস-বৃদ্ধি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আগামীতেও তেলের দাম হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার নজর রাখবে।’
এর আগে রবিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) দ্বাদশ মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব দাম কমানোর বিষয়ে এসব কথা বলেন।
এলডিসি উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা থাকবে : এলডিসি উত্তরণের পরও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। বাংলাদেশ গত ১২-১৬ জুন জেনেভায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিও-এর মিনিস্টিরিয়াল কনফারেন্সে (এমসি ১২) বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর আরও কয়েক বছর বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে সর্বোচ্চ জোর দিয়েছে। এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পর ১২ বছর বাজার সুবিধা পাবার সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকলেও তা পরে থেকে ৯ বছরে বৃদ্ধি দাবি জোরালো হয়েছে। বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরও কয়েক বছর বাজার সুবিধা প্রাপ্তির আশা করা হচ্ছে। সম্মেলনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় প্রাপ্ত সুবিধাসমূহ আরও কিছু সময় পর্যন্ত বৃদ্ধির যৌক্তিকতা আছে- সম্মেলনে এ অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে।
এর ফলে পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরও আলোচনার পথ সুগম হলো। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এমসি ১৩ সম্মেলনে ভাল কিছু ফল পাওয়া যাবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের দেয়া প্রস্তাবগুলো জোরালোভাবে সমর্থন করা হয়। এছাড়া, কোভিড-১৯ এবং ভবিষ্যত মহামারী মোকাবেলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সেক্টরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করে ট্রিপস চুক্তি মোতাবেক বাণিজ্য সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে, খাদ্যদ্রব্য রফতানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বাণিজ্য সচিব বলেন, মিনিস্টিরিয়াল কনফারেন্স চলাকালে বাণিজ্যমন্ত্রী সিঙ্গাপুর, নেপাল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপিয়ন পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে পৃথকভাবে দ্বিপক্ষীয় সভা করেন। এতে দেশগুলোতে রফতানি বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরও বাংলাদেশের জন্য বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।