আওয়ামী লীগ সরকারের বাকি আরও ৯ মেগা প্রকল্পে

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেয়া দশ মেগা প্রকল্পের অন্যতম অহঙ্কারের প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন হয়েছে। আট বছরের কম সময়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এবার বাকি ৯ প্রকল্প দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হবে মেট্রোরেল প্রকল্প। এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর ঢাকার যানজট কমে আসবে। এতে করে বাঁচবে সময় ও কর্মঘণ্টা। এরপরই আগামী বছর পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট চালু করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দেশের বিদ্যুত সঙ্কটের সমাধানে এই প্রকল্প বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এছাড়া অন্যান্য যেসব প্রকল্প রয়েছে তারও বেশিরভাগ ২০২৪ সালের মধ্যে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে বেশির ভাগ মেগা প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করবে দেশের মানুষ। সেভাবেই কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছিল। এবার পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ায় বাকি সব মেগা প্রকল্প দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর দশ মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে এগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এই সেতু চালু হওয়ায় এবার পুরো দেশের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্পসমূহের মধ্যে একটি পদ্মা সেতু। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি করলেও ষড়যন্ত্রের মুখে ঘুষ ও দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে প্রত্যাহার করে নেয়। তবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ায় উন্নয়ন সহযোগীরাও এবার বাংলাদেশকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছে। সরকারের নেয়া বাকি ৯ মেগা প্রকল্পে সরকারের পাশাপাশি বিদেশী সহযোগীরা অর্থায়ন করছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে সরকারের চলতি মেয়াদে দেশের মানুষ এসব প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করবেন। ভবিষ্যতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার ভিত্তি রচনার ক্ষেত্রে এই দশ মেগা প্রকল্প নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান সরকারের গৃহীত দশ মেগা প্রকল্প হচ্ছে- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব নেয়ার পরই দশ মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং সর্বোপরি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এসব প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়ন হওয়া চ্যালেঞ্জিং হলেও তা করা গেছে। এই সেতুর চালুর পরই দেশের অর্থনীতিতে বিরাট পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এ কারণে বাকি প্রকল্পগুলোও দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে যেতে হলে এগুলোর বাস্তবায়ন সবচেয়ে বেশি জরুরী। শেখ হাসিনার সরকার সঠিক পথেই আছে।
এদিকে এই দশ মেগা প্রকল্পের বাইরেও ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) তৈরি হলে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রফতানি আয় সম্ভব হবে। একইসঙ্গে এই ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশের এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া দেশের বেশিরভাগ মহাসড়ককে চারলেন ও ছয়লেনে রূপান্তর দেশের যোগাযোগব্যবস্থাকে আমূল বদলে দিচ্ছে। এতে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হবার পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হচ্ছে। ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। এছাড়া অন্য মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ভাঙ্গা জংশন (ফরিদপুর) থেকে পায়রা বন্দর এবং কুয়াকাটা হয়ে বরিশাল পর্যন্ত ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে মাল্টিলেন সড়ক টানেল প্রকল্প এবং এসএএসইসি ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প।