কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি (বাংলাবাজার ঘাট) পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির একটি প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় প্রতিনিধি দলটি স্পিডবোটযোগে জনসভাস্থলের বিভিন্ন পয়েন্ট পর্যবেক্ষণ করেন। শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তার পাশাপাশি গোটা এলাকা সিসিটিভির আওতায় থাকবে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী উৎসব হবে শিবচরের কাঁঠালবাড়িতে। এতে ১০ লাখের বেশি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ লাখের বেশি মানুষের সমাগম হবে।
বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী উদ্যোগের কারণেই পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। এই স্বপ্ন পূরণে কোটি কোটি মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনছে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে অপেক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটবে। উদ্বোধনের দিন সারা দেশের মানুষ উৎসবে অংশ নেবে। কেউ সমাবেশস্থলে এসে, আবার কেউ টেলিভিশনের মাধ্যমে। আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উৎসবে মেতে উঠবে।
পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির নানা মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের নামে যদি কোন সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালিত করে, তাহলে জনগণকে সঙ্গে দিয়ে কঠোরভাবে মোকাবেলা করবে আওয়ামী লীগ। জীবনমান নিয়ে সন্ত্রাস করলে, ’৭৫-এর ঘাতকের মতো যদি কথা বলে, অথবা হুমকি দিলে, আইনকে নিজের হাতে তুলে নিলে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসব অপকর্মের জবাব দেবে আওয়ামী লীগ।’
এ সময় জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, উপস্থিত ছিলেন।
চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের অঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তির সেতু। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটবে। এর ফলে দুটি নৌবন্দর মংলা ও পায়রাবন্দর এবং স্থলবন্দর বেনাপোলে এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। পদ্মা সেতুর যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে রেললাইনও যুক্ত হবে। ফলে চিন্তাই করা যাবে না কি ধরনের অর্থনৈতিক তৎপরতা বাড়বে। পদ্মা সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু এর জনসভাও হবে ঐতিহাসিক। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের কারণে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে। পদ্মা পাড়ের আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে জনসভা এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। উৎসবের এই সভায় জাতির উদ্দেশে, বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। এই উদ্বোধন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এই ঐতিহাসিক জনসভায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যাতে অংশ নিতে পারে সেভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। জনসভার পর ফানুস ওড়ানো থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ জমকালো অনুষ্ঠানসূচীর আয়োজন করা হবে। এর সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। সহযোগিতা করবেন মীর্জা আজম এমপি। আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বিএনপির নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাদের কোন সমস্যা নেই। তারা যদি কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম ’৭৫-এর ঘাতকদের মতো খুন-সন্ত্রাসের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবেলা করবেন। এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন শরীয়তপুরের মানুষ। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন থেকেই ঢাকার সঙ্গে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে শরীয়তপুর জেলা বাস মালিক সমিতি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় নতুন করে পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করছেন শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সরাসরি বাস চলাচলের জন্য তারা অন্তত ২শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সেতুর উদ্বোধনের দিনেই নতুন বাস দিয়ে যাত্রী পরিবহন শুরু করতে চান ব্যবসায়ীরা। এ জন্য শরীয়তপুরসহ পাশর্^বর্তী জেলা মাদারীপুর, ঢাকা ও সাভারে চলছে দৃষ্টিনন্দন উন্নতমানের এসি, নন-এসি বাস নির্মাণের কাজ। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে যাদের রুট পারমিট আছে, তারাই নতুন বাস নামাচ্ছেন। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানি, পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরি পরিবহন কর্তৃপক্ষ রুট পারমিট নিয়ে নতুন বাস প্রস্তুত করছে। অন্য কেউ বাস চালাতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে রুট পারমিট নিতে হবে বলে জানা গেছে। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছে সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ। তারা ৪০টি নতুন বাস প্রস্তুত করছে। এ ছাড়া পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরি পরিবহন ঢাকার সঙ্গে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিটি কোম্পানি নতুন বাস আনার পরিকল্পনা করছে। তাদের মধ্যে পদ্মা ট্রাভেলস ও শরীয়তপুর পরিবহনের কয়েকটি বাস ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া পর্যন্ত চলাচল করছে। কোম্পানিগুলো প্রাথমিকভাবে ২শ’ ৫০টি বাস প্রস্তুত করছে। যার একেকটিতে খরচ পড়ছে ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢাকার গুলিস্তান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও নারায়ণগঞ্জে এগুলো চলাচল করবে। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক আবদুল খালেক পালোয়ান বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসা বাড়বে- এই স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘদিন লোকসানে থেকেও ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। পদ্মা সেতু যেদিন খুলবে, সেদিন থেকেই আমরা ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করতে চাই। পদ্মা ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান ও নড়িয়া পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনেই তারা ঢাকার সঙ্গে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করতে চান। পরীক্ষামূলকভাবে তাদের ১২টি বাস ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া পর্যন্ত চলছে। শরীয়তপুর পরিবহনের পরিচালক আরশাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির এসি ও নন-এসি বাস চলবে।’
শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে শরীয়তপুর জেলা সদর পযর্ন্ত নির্মিত হচ্ছে ২৭ কিলোমিটার চার লেনের সংযোগ সড়ক। এ লক্ষ্যে কাজ করছে শরীয়তপুর জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়েছে এবং ফোর লেন সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে। এদিকে পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের জাজিরার নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর জেলা সদর পর্যন্ত সড়ক খুবই সরু। শরীয়তপুরবাসীর বহু কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতুর সঙ্গে শরীয়তপুরের চার লেনের সংযোগ সড়কটি দীর্ঘ দিনেও নির্মাণ না হওয়ায় পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের শুরুতেই শরীয়তপুরবাসী এর সুফল থেকে বঞ্চিত হবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যানবাহন চালকসহ শরীয়তপুরের সুশীল সমাজ প্রতিনিধিরা। তারা এর দায় জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের ওপরই চাপাতে চান। শরীয়তপুর জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতা, গাফিলতি, অবহেলা, দায়িত্বহীনতা, অদক্ষতার ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবের কারণে দীর্ঘ সময় ধরেও ফোর লেন সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে বলে তারা অশঙ্কা করেছেন। শরীয়তপুর-নাওডোবা রুটের ট্রাক ড্রাইভার আবুল কাশেম, আবুল হোসেন, সুলতান মিয়াসহ অনেকেই জানান, শরীয়তপুরের সঙ্গে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক নাওডোবার রাস্তা এতই সরু যে, একটি বাস ঢুকলে পাশে আর কোন জায়গা থাকে না। এমনকি যাত্রী বা রিক্সাও ওভারটেকিং করতে পারে না। সুতরাং পদ্মা সেতু চালু হলে এ রুটে যখন যানবাহনের চাপ বাড়বে তখন যানজট সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে।