রাশিয়ার প্রস্তাব

6

রাশিয়া পরিশোধিত ও অপরিশোধিত উভয় রকম জ্বালানি তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশকে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। অন্যদিকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা রাশিয়া থেকে গম আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্য এই বাণিজ্যের বিষয়টি আলোচিত ও গৃহীত হতে হবে সরকার টু সরকার পদ্ধতিতে। কেননা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে রাশিয়ার ওপর ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো কর্তৃক। এক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশ নিজস্ব নীতি গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানে দেশে বাড়ছে আটা-ময়দার দাম, যার একটি বড় অংশ আমদানি করতে হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমানে তা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি ভারতও গম রফতানিতে আরোপ করেছে নিষেধাজ্ঞা। এই অবস্থায় জ্বালানি তেল ও গমের বিকল্প আমদানির উৎস হতে পারে রাশিয়া।
আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান সুইফট রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যাবতীয় আর্থিক লেনদেন স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে। ফলে সমূহ বিপাকে পড়েছে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের দেশগুলো, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। ইতোমধ্যে দেশে নিত্যপণ্যসহ আটা-ময়দার দাম বাড়তে শুরু করেছে, যা প্রধানত আমদানি করা হয়। অন্যদিকে বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একটি বড় বাজার রাশিয়া। তদুপরি বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সরাসরি সহযোগিতা করছে রাশিয়া। সে অবস্থায় আর্থিক লেনদেন স্থগিত হলে এবং যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে দুই দেশের মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় আশঙ্কার কারণ রয়েছে নিশ্চয়ই। সর্বোপরি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পরিণামে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে।
বাংলাদেশ মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে যাচ্ছে ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সঙ্গে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এগিয়ে নিতে ২০১৯ সালের মে মাসে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ইইইউভুক্ত পাঁচটি দেশ হলো- রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া ও কিরগিজস্থান। বর্তমানে এই পাঁচটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলারের বেশি। মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে এর পরিমাণ বাড়বে আরও বহুগুণ। ইতোমধ্যে ১৯টি খাত চিহ্নিত করে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজও শুরু করেছে ওয়ার্কিং গ্রুপ। এসব দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, ওষুধ, আলু ও সবজি রফতানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সার্কভুক্ত ৮টি দেশের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বিধায় ইইইউভুক্ত দেশগুলো স্থানীয় বিপুল বাজার ধরার জন্য শিল্প-কারখানা স্থাপন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে লাভবান হতে পারবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সে অবস্থায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল-গম-ভুট্টাসহ আনুষঙ্গিক পণ্য আমদানির বিষয়টি জাতীয় স্বার্থে বিবেচনা করা জরুরী।