মোটর বাইক নিয়ন্ত্রণ

5

রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মোটরবাইকের সংখ্যা। শহরের রাস্তা ছাড়াও সড়ক-মহাসড়কে মোটরবাইকের দাপট বেড়েই চলেছে। এদের চলাচলের ধরনই এমন যে, এই বাহনটি সকল আইনের ঊর্ধ্বে। এরা ট্রাফিক আইন মানতে চায় না। ডানে বামে যেখানে সুযোগ পায় সেখান দিয়েই ওভারটেক করার প্রবণতা। হঠাৎই গাড়ির সামনে হাজির হয়ে যায় বাইক। আচরণ এমনই যে, তাদের জন্য রাস্তা ছেড়ে দিয়ে কার, বাস এমনকি ভারি যানবাহনকেও রাস্তায় চলতে হবে। এদের অত্যাচারে ট্রাফিক বিভাগ পর্যন্ত অতিষ্ঠ। সাধারণ পথচারী তো বটেই। তাদের এই ঔদ্ধত্য আচরণেই ক্রমশ বাড়ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, এবার ঈদে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতের ৪১ শতাংশই মোটরবাইকের যাত্রী।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিনে দেশে ২৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১২৮টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৫৬ জন। এবারের সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহতের ৪১.৪৮ শতাংশই মোটরবাইকের যাত্রী। মোট দুর্ঘটনার ৪৫.২২ শতাংশ মোটরবাইক। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেবে এবার ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনার শীর্ষে মোটরবাইক। ঈদে ১৬৪টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত ও ১১০ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪.০৮ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৮৫ শতাংশ ও আহতের ১৩.০৩ শতাংশ। জরিপ দুটি বিশ্লেষণ করলেই দেশে মোটরবাইক দুর্ঘটনার ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে।

নিয়ন্ত্রণহীন বাইকে বাড়ছে দুর্ঘটনার পরিমাণও। গবেষকরা বলছেন, প্রতি বছর দেশে পাঁচ লাখ নতুন মোটরবাইক সড়কে যোগ হচ্ছে। বাইক বিপণন করে কোম্পানিগুলো আয় করছে বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বাইক দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষতি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন অনেক তরুণ। কারও কারও অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে। কেটে ফেলতে হচ্ছে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কোন অঙ্গ। পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে সারা জীবনের জন্য। এভাবে চলতে পারে না কিছুতেই। উন্নয়নশীল সকল দেশেই তরুণদের প্রথম পছন্দ মোটরবাইক। অনেক দেশেই রাস্তায় অন্যান্য গাড়ির তুলনায় বাইকের সংখ্যা বেশি। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কোন দেশেই বাইক চলাচল করে না। সময় এসেছে মোটরবাইক চালানোর ক্ষেত্রে কঠোর নিয়মনীতি ও ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নের। না হলে এমন দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে।