তুঙ্গে ইভিএম বিতর্ক ॥ ৩শ’ আসনে ইভিএম চায় আওয়ামী লীগ

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র দেড় বছর সময় বাকি। রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এ নির্বাচনের ভোট পদ্ধতি নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা। সরকারী দল আওয়ামী লীগ চায় ৩০০ আসনেই ইভিএমে (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট। আর বিএনপিসহ বেশ কটি বিরোধী দল ইভিএম চায় না। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট নেয়ার সক্ষমতা নেই। তবে ১০০ আসনের প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখনও ইভিএমের বিষয়ে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে সচেতন করতে পারেনি। তাই ইভিএম নিয়ে এখনও রয়েছে আস্থা সঙ্কট। এ পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরে ইভিএম বিতর্ক এখন তুঙ্গে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হয়নি। এ ছাড়া সব আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার জন্য যে রকম প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন তা এখন নেই। ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলে প্রয়োজন সাড়ে ৪ লাখ ইভিএম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে এখন আছে এখন আছে দেড় লাখ। তাই সব আসনে ইভিএমে ভোট নিতে হলে আরও ৩ লাখ ইভিএম প্রয়োজন হবে। আর ইভিএম কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরও অন্তত এক লাখ মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সব মিলিয়ে খরচ বাড়বে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। আর এ টাকার জোগান কিভাবে হবে সে বিষয়ে নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
সূত্রমতে, মাত্র দেড় বছর সময়ের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হলে এ সময়ের মধ্যে ৩ নির্বাচন কমিশনকে নতুন ৩ লাখ ইভিএম সংগ্রহ ও এক লাখ মানুষকে প্রশিক্ষণসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হিমশিম খেতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন চাইলে ১০০ বা তার চেয়ে কিছু বেশি আসনে ইভিএমে ভোটের ব্যবস্থা করতে পারবে। তবে সরকারের কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেলে প্রতিবেশি দেশ ভারতের মতো সচেতনতা বৃদ্ধি করে আরও বেশি আসনে ইভিএমে ভোট করতে পারবে ইসি।
সম্প্রতি গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট হবে বলে জানান। এর আগেও আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা এমন ইঙ্গিত দেন। তবে আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনা সব আসনে ইভিএমে ভোটের কথা বলায় এই ইস্যুটি রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরে আলোচনায় স্থান পায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সব আসনে ইভিএমে ভোটের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিলেও বিএনপিসহ বেশ কটি বিরোধী দল ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে নেয়। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিও বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি। তাই সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও বলেছেন, ইভিএমে ভোট গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। আবার নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও একটা অংশ এ নিয়ে বিতর্ক শুরু করে। তাদের মতে এখনও দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ইভিএম সম্পর্কে আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। অনেকে এর ব্যবহারও জানে না। তাই এ পরিস্থিতিতে সব আসনে ইভিএমে ভোট করলে নির্বাচন বিতর্কিত হবে।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দলের সভানেত্রী ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোটের কথা বলার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ইভিএমে ভোট সুষ্ঠু হবে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বিএনপি ইভিএমে ভোটের বিরোধিতা করছে। তিনি বলেন, বিএনপিসহ সব দলের নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত। আর নির্বাচনে না এলে বিএনপি অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে। নির্বাচনে না গেলে জনগণ এই দলকে প্রত্যাখ্যান করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, আমরা আগে থেকেই ইভিএমের বিরোধিতা করে এসেছি। কি কারণে ইভিএমে ভোট নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তার যথাযথ কারণও ব্যাখ্যা করেছি। এ ছাড়া সারাবিশ্বেই ইভিএম নিয়ে বিতর্ক আছে। তাই আমরা ইভিএমে নির্বাচন চাই না। আর এখন তো ইভিএম পরের বিষয়। আগে বর্তমান সরকার পদত্যাগ করতে হবে। তারপর নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস আছে, নির্বাচন কমিশন আগে সেটা দূর করতে চায়। অবশ্য ইভিএম নিয়ে বিরোধী দল, বিশেষত বিএনপির সন্দেহ মূলত একটি রাজনৈতিক অবস্থান বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে নির্বাচন কমিশন চায় এ নিয়ে যেন কোন বিতর্ক সৃষ্টি না হয়।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন সম্প্রতি ইভিএমে ভোট গ্রহণ সম্পর্কে প্রক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এখনও দেশে ইভিএমে ভোটের মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। এ ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই ইভিএম চায় না। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তাই এ পরিস্থিতিতে ইভিএমে ভোট হলে এ নিয়ে বিতর্ক হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সব আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। তবে তখন এ নিয়ে নানা মহলে বিতর্ক শুরু হলে ওই নির্বাচন কমিশন সব আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার অবস্থান থেকে পিছু হটে আসে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে অংশীজনদের সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন। ধারাবাহিক ওই সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দেন। তবে এ বিষয়ে পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন। তারপর নির্বাচন কমিশন নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে। আর ইভিএমে ভোট হলেও কতটি আসনে হবে। বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখেই নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, সংবিধান অনুসারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। তাই ১১ কোটির বেশি ভোটারের জন্য এ নির্বাচনে প্রায় ৪৫ হাজার ভোট কেন্দ্র প্রয়োজন হবে। আর ভোট কক্ষ প্রয়োজন হবে প্রায় পৌনে ৩ লাখ। তাই সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট করতে হলে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ইভিএম লাগবে। কারণ, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ইভিএম প্রস্তুত রাখতে হবে। তা না হলে কোন ইভিএম নষ্ট হয়ে গেলে ভোটগ্রহণ বিঘ্নিত হবে।
ইসি সূত্র আরও জানায়, ২০১০ সালের ১৭ জুন দেশে ইভিএমের মাধ্যমে প্রথম ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাছ থেকে প্রতিটি ১২ হাজার টাকা করে প্রায় এক হাজার ২৫০টি ইভিএম তৈরি করিয়ে নেয়। ওই কমিশন এই ইভিএমের মাধ্যমে কোন কোন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভালভাবেই ভোট নেয়। এরপর বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ২০১২ সাল থেকে ইভিএমে ভোট গ্রহণ আস্তে আস্তে বাড়ানো হয়। কিন্তু কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৫ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট নিতে গেলে একটি ইভিএম বিকল হয়ে পড়ে। এরপর নতুনভাবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে আরও উন্নত প্রযুক্তির ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। হাতে নেয়া হয় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। পর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে এই নতুন ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়। তারপর থেকে জাতীয় সংসদের প্রতিটি উপনির্বাচনে এবং সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও কিছু ইউপি নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এ বছর ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে পুরোপুরি ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয় এবং এই নির্বাচনের পর কেউ ভোট কারচুপির অভিযোগ করতে পারেনি। ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনহ বেশ কটি পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনও ইভিএমে হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে কি হবে না এ নিয়ে যখন সারাদেশে বিতর্ক তুঙ্গে এমন এক পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, কোন পদ্ধতিতে ভোট হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের, অন্য কারও নয়। তবে রাজনৈতিক দলসহ যে কেউ তাদের প্রস্তাব দিতেই পারেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে কি হবে না এমন কোন সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি নির্বাচন কমিশন। আর ৩০০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার সক্ষমতা ইসির নেই। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে আমরা স্বাধীন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমকে সামনে রেখে নির্বাচন ভবনে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ কথা জানান।
ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে। কারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার সার্বিক দায়িত্ব আমাদের। তবে ইভিএমে ভোটের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি বক্তব্য দিয়েছেন এবং বিভিন্নজন থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারের পক্ষ থেকে বলেছেন নাকি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে বলেছেন- সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ইভিএম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যে নির্বাচন কমিশন কোন চাপ অনুভব করছে না।
সিইসি বলেন, ইভএমে ভোট নিয়ে অনেকেই ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন, সদিচ্ছা ব্যক্ত করতে পারেন। তবে ইভিএমে ভোট নেয়ার বিষয়েও আমরা এখনও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। ইতোমধ্যে আমরা নিজেরা অনেকগুলো সভা করেছি, আগামীতে আরও সভা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে। যতদূর সম্ভব ভোট স্বাধীনভাবে আমরা পরিচালনা করব। সব আসনে ইভিএমে ভোট করার মতো এখন আমাদের সামর্থ্য নেই। তাই ভোট ব্যালটে হবে না ইভিএমে হবে আর ইভিএমে হলে কতটি আসনে হবে এই বিষয়টি পর্যালোচনাধীন রয়েছে। সিদ্ধান্ত হলে আমরা জানাব। বিভিন্নজনের মতামত আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি আমাদের উপরেই থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে মতামত দিতে পারবে। তিনি বলেন, শুদ্ধ ও সঠিক ভোটার তালিকা ছাড়া প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই এ কাজটি আমরা সঠিকভাবে করার চেষ্টা করছি। ২০ মে থেকে সারাদেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে চার ধাপে এ কর্মসূচী সম্পন্ন করা হবে। প্রথম ধাপে ১৪০ উপজেলায় কার্যক্রম চলবে ২০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত।
৯ মে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর জানান, ৩০০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার সক্ষমতা ইসির নেই। তবে ১০০ থেকে ১৩০ আসনে করার মতো সক্ষমতা রয়েছে। তবে ইভিএম সম্পর্কে ভারত যেভাবে অবিশ্বাসটা কাটিয়ে উঠেছে, আমরাও সেভাবে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। তাই ইভিএমে যদি আস্থার জায়গা ঠিক করা যায়, তাহলে ১০০ থেকে ১৩০ আসনে ভোট করা যাবে। তবে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর জানান, একটি রাজনৈতিক দলের দলীয় সভায় ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ইভিএম নিয়ে হয়তো তারা কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেবে। তবে এখনও আমাদের কাছে এ ধরনের কোন ফরমাল বা ইনফরমাল প্রস্তাব আসেনি। আর তারা প্রস্তাব দিলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রস্তাব আসার কোন সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসতেই পারে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস আছে, ইসি আগে সেটা দূর করতে চায়। তাই ইভিএমে ভোটের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত না হলেও ইভিএমের সুবিধা-অসুবিধাগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন নির্বাচন কমিশনাররা। জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে ইভিএমের খুঁটিনাটি কারিগরি দিকগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানানো হবে। তারা নিজেদের মতো করে ইভিএম খতিয়ে দেখার সুযোগ পাবেন। এরপর সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। তবে এ নিয়ে কোন বিতর্ক হোক তা বর্তমান নির্বাচন কমিশন চায় না।