সিয়াম সাধনার মাস

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সম্মানিত পাঠক ও মুসল্লিবৃন্দ! মাহে রমজানের মোবারকবাদ। পরপর দুটি দশকই আমরা পার হয়ে এসেছি। এখন মাহে রমজানের সমাপনী দশক। আমাদের প্রিয় নবীজী হযরত মুহাম্মদ (স.) এ মাসকে এবাদত, বন্দেগীর আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিন ভাগে ভাগ করে প্রদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, আউয়ালুহু রাহমাহ আউসাতুহু মাগফিরাহ ওয়া আখিরুহু ইতকুম মিনান্নার- অর্থাৎ মাহে রমজানের ১ম দশক রহমতের বার্তাবাহী, ২য় দশক মাগফিরাতের এবং শেষ দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার। আমরা এখন ২১ রমজান থেকে সমাপনী দশকে আরও বেশি মনোযোগের সঙ্গে এবাদত, বন্দেগী করব। ইনশা আল্লাহ!
হাদিস শরীফে আছে, উম্মতদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য পেয়ারা নবী এ দশকে নিজেই কোমর বেঁধে এবাদত বন্দেগীতে শামিল হয়ে পড়তেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও জীবনের প্রতিটি রমজান শেষ দশকটুকু ই’তিকাফের মাধ্যমে একান্ত খোদাতায়ালার সঙ্গে প্রেম, ভালবাসা বৃদ্ধি ও অধিক সন্তুষ্টি প্রাপ্তির মানসে সময় দিতেন। নবীপত্নী হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন, হুজুরে আকরাম (স.) প্রতি রমজান শেষ দশক ই’তিকাফে থাকতেন আর জীবনের শেষ রমজানে কুড়ি দিনই তিনি ই’তিকাফে কাটিয়েছেন। এভাবেই তিনি প্রভুর সান্নিধ্যে যাওয়ার যোগ্যতা হাসিল করেছেন। আমরা কি ক্রমেই এ বোধ বিবেচনা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছি? আমাদের কি মৃত্যুর ভয় নেই? খোদাওয়ান্দের দরবারে আমরা কি ভাল কিছু নিয়ে যাওয়ার নিয়ত করতে পারি না? আসুন না, মাহে রমজানের এ শেষ দশকটুকু নিজের জীবনের শেষ দশক মনে করে হকহালালি ও দ্বীনহীন দুনিয়াবিমুখভাবে কাটিয়ে দেই।
প্রিয় পাঠক! এ দশক আরও বেশ কিছু কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। ২১ তারিখ ওফাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন ইসলামের ৪র্থ খলিফা, নবী করীম (স.) এর প্রিয়তম জামাতা মা ফাতেমাতুজ যাহরার পরম শ্রদ্ধার স্বামী হযরত হাসান হোসাইনের (রা.) বাবা হযরত আলী মরতুজা (রা.)। আমরা এইদিন ইসলামের জন্য তার ও তার পরিবারের মহান ত্যাগের কথা স্মরণ করি। ২৬ তারিখ নুযুলে কুরআন দিবস। এদিনের অবসানে গভীর কৃষ্ণরাতে মক্কা নগরীর নূর পাহাড়ের হেরা গুহা আলোকিত করে নাযিল হয়েছিল আল্লাহপাকের আখেরী কালাম কুরআন মাজিদ। উন্মুক্ত হয়েছে সভ্যতার দ্বার শিক্ষাদীক্ষার নয়াদিগন্ত। জ্যোতির্ময় ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) বহন করে আনলেন সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত- ইক্বরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযি খালাক্ব-পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানবজাতিকে একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়, আর তোমার প্রভু বড় মর্যাদাশালী। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। মাহে রমজানের এ মোবারক রজনীতে আল্লাহ মানুষের জন্য জানার, জ্ঞান অর্জন করার ও সভ্যতার বিকাশে হেরার দ্বার উদঘাটন করেছেন।
এ মাসের ২৭ তারিখ জুমাতুল বিদা। অর্থাৎ মাহে রমজানের সবশেষ জুমা। ইসলাম ধর্মে জুমা দিবসের এমনিতেই একটি বড় মর্যাদা রয়েছে। আর যখন তা মাহে রমজানের শেষ জুমাটি হয় তাহলে মুমিনদের অশেষ শুকরিয়ার। কারণ, এদিন তারা মাহে রমজানকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাতে পারে রোনাজারি ও চোখের জলে। একজন রোজাদারের জন্য এ দশক আরও গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, এসময় বাধ্যতামূলক দান সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। ঈদের আনন্দে পরিবারকে সাজানোর জন্য এবং সমাজের অন্যদেরকে শামিল করার জন্য নানা ব্যস্ততা, কেনাকাটা। এর ভেতরে রয়েছে আবার একটি মর্যাদাবান রজনী ‘ঈদপূর্ব রজনী’। আমরা অনেক সময় ব্যস্ততা অবহেলায় এ রজনীর ইবাদত-বন্দেগীতে গাফেলতি প্রদর্শন করি। অথচ হুজুর (স.) বলেছেন, প্রকৃত মুক্তির রজনী এটিই। এ রজনীতেই আল্লাহপাক অফুরন্ত লিস্টভুক্ত দোযখীকে তাদের তাওবা ও রোনাজারির কারণে আপন মেহেরবানীতে জান্নাতের তালিকাভুক্ত করেন। আর এ রজনীতে যারা বিনিদ্র ইবাদত-বন্দেগীতে সময় কাটাবে তাদের অন্তর ঐদিনও মরবে না যেদিন সকলের অন্তর মরে যাবে…।