স্বস্তির বৃষ্টি-কালবৈশাখী

15

এবার চৈত্র্যে উষ্ণ হাওয়ায় জনজীবন অতিষ্ঠ। ঋতু বৈচিত্র্যে শীতের পর এমন উষ্ণতাই আসে প্রতিবছর। বাংলার নববর্ষের আবাহনে সারা বাংলা বর্ণিল আয়োজনে ১৪ সালকে সাড়ম্বরে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি চলে এর মধ্যেই। বৈশাখ আসে তার নানামাত্রিক আবেদন এবং নতুন বছরের ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়ে। নতুন বর্ষের শুভাগমন অবশ্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক কিংবা মধুর হয় না। একে তো প্রচন্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি তার ওপর মাঝে মধ্যে আবহাওয়ার অগ্নিমূর্তি ধারণে কালবৈশাখীর আশঙ্কা। এর পরও অপেক্ষায় থাকে সবাই কখন সামান্য বৃষ্টির ছোঁয়ায় স্বস্তি আসবে। বৈশাখ মাসের বৃষ্টি কোনভাবেই স্বাভাবিক গতিতে জনজীবনকে আশ্বস্ত করে না। কালবৈশাখীর অদম্য দমকা হাওয়ায় ধুলো ওড়ানোর মহোৎসব বৈশাখ মাসের এক অবধারিত পালাক্রম। সঙ্গত কারণে নিদাঘ মধ্যাহ্নের সূর্যের খরতাপ অসহনীয় হলেও কালবৈশাখী যে মাত্রায় তান্ডবে মত্ত হয় সেটা যেন আরও ভয়ঙ্কর। বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ রৌদ্রস্নানে প্রকৃতির রুদ্র দাহ ছড়ানোর চরম দুঃসময়ে গত বুধবার ৭ বৈশাখ সূর্য ওঠার আগে দিনের প্রথম প্রহরেই কালবৈশাখী তার আগমন বার্তায় সারাদেশকে উত্তাল করে দিয়েছিল। রাজধানী ঢাকাও কালবৈশাখীর দংশনে বিপর্যস্ত হয়। প্রচন্ড তান্ডবের পর বৃষ্টির সুশীতল ফোঁটা জনজীবনকে স্বস্তির আনন্দে কিছুটা উদ্বেলিত করে। প্রাণহানি থেকে আরম্ভ করে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়া এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি মোটেও স্বস্তিদায়ক ছিল না। সারাদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৮ জনের প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া যায়। গাছপালা উপড়ে যায়। বৈশাখী ঝড়টি মুহূর্তে কেমন যেন সব তছনছ করে দিয়ে যায়। বাংলার শ্যামল প্রকৃতির এমন প্রবল ঝড়ো বাতাস আর উত্তাল বৃষ্টির সঙ্গে এদেশের মানুষের পরিচয় যুগ-যুগান্তরের। গ্রাম, গঞ্জ, প্রত্যন্ত অঞ্চল, নদী তীরবর্তী জেলা এবং বঙ্গোপসাগরের উথাল-পাথাল ঢেউয়ের মধ্যে কালবৈশাখীর তর্জন, গর্জন যেন সীমাহীন এক উন্মাদনা। নিমিষে ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি ক্ষেত সব যেন লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার যোগাড়।
ঝড়ের সঙ্গে স্বস্তির বৃষ্টি মানুষকে প্রশান্তির স্পর্শ বুলিয়ে দিয়েছে। উদ্ধত প্রকৃতি শান্ত, স্নিগ্ধ হতে সময় লাগেনি। ঠান্ডা হাওয়ায় মনপ্রাণ শীতল পরশে যেন অবগাহন করে। প্রচন্ড দাবদাহ অনেকটাই নিজেকে সংযত করে নেয়। কালবৈশাখীর ঝড়ের সঙ্গে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে রাজধানীতে। মেঘে আচ্ছন্ন বিভিন্ন স্থানে সময় সময় আরও সৃষ্টির দেখা মেলে। টানা কয়েকদিনের গরমে অতিষ্ঠ মানুষের মধ্যে স্বস্তির বর্ষণ শান্তির আমেজ এনে দিতে পেরেছে। মানুষ যেন স্বস্তির নিশ্বাসে হাঁফ ছেড়েছে। গ্রীষ্মে এমন স্বস্তি খুব বেশি সময় অবশ্য কেউ প্রত্যশা করে না।