আজ ১৭ এপ্রিল। ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশ ও বাঙালির স্বাধীনতাসহ মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এই দিনটি চির অম্লান, চির স্মরণীয়। এদিন কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার ছায়া সুনিবিড় আম্রকাননে বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং পঠিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। শপথ গ্রহণের পর স্থানটির নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। সেই থেকে দিনটি ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করে ‘মুজিবনগর দিবস’ হিসেবে। ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ঐতিহাসিক মুজিবনগরেই রচিত হয়েছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতাকে বাস্তবে রূপ দিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ মুজিবনগরে একত্রিত হয়েছিলেন। এদিন নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন দেশ-বিদেশের বহু বিখ্যাত সাংবাদিক। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তাজউদ্দীন আহমদ। এছাড়াও এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামান প্রমুখ শপথ নেন মন্ত্রী হিসেবে। এই সরকারই ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। ‘মুজিবনগর সরকার’ হিসেবেও এই সরকারের একটি পরিচয় রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে প্রবাসী ‘মুজিবনগর সরকার’ বহু প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছিল। তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বেই জাতি ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে অর্জন করে চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ওই সরকারের সকল কৃতিত্বের সূচনা হয়েছিল মুজিবনগরে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান থেকে। ওই সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রশাসন, প্রচারণা, কূটনীতি ও যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকালে সারাদেশকে কয়েকটি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। মুজিবনগর সরকার প্রতিটি সেক্টরের দায়িত্ব দিয়েছিল একেকজন সেক্টর কমান্ডারের হাতে। মুক্তিযুদ্ধকালে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছিল ভারত। এছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ আরও কিছু রাষ্ট্র বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে।
বর্তমান সরকারের আমলে ‘মুজিবনগর দিবস’ পালন নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ‘মুজিবনগর দিবস’-এর যথাযথ মর্যাদা ও মূল্যায়ন করে আসছে। এ দিবসটির পথ ধরেই বাঙালী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। ‘মুজিবনগর সরকার’-এর ইতিহাস স্কুলে পাঠ্যসূচীতে আরও সূচারুভাবে অন্তর্ভুক্ত হওয়া আবশ্যক। এর ফলে আগামী প্রজন্ম দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অতীতে নানাভাবে বিকৃত করা হয়েছে। মুজিবনগর দিবসের ইতিহাসসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস এখন দেশবাসী বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সামনে যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাতে ইতিহাসের বিকৃতি রোধ করা সম্ভব হবে।