গত বুধবার সফররত সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ সৌজন্য সাক্ষাত করতে গণভবনে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি বড় বিনিয়োগের আহ্বান জানান। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে রয়েছে ‘বন্ধুত্বের শক্ত বন্ধন’ যা আগামী দিনগুলোতে আরও শক্তিশালী হবে। বিভিন্ন সৌদি কোম্পানি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রশংসা করে সৌদি মন্ত্রী বলেন, বহু বাংলাদেশী কর্মী বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতা, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে রোডম্যাপ গ্রহণ, বিনিয়োগে ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করা, ভিশন-২১-এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছানো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যমাত্রার মতো কর্মসূচীতে আকৃষ্ট হয়েছে সৌদি আরব। করোনা অতিমারীর প্রভাবে দেশে বিদেশী বিনিয়োগে সাময়িকভাবে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। এখন বিশ্ব অনেকটা স্বাভাবিক। অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে প্রয়োজন প্রচুর বিনিয়োগ। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের বিপুল সুযোগ রয়েছে। এ দেশের আছে বিশাল মানবসম্পদ। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় রয়েছে যথেষ্ট শ্রমশক্তি। তবে শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশে পণ্য উৎপাদন ও রফতানির বড় বাজার রয়েছে।
ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লাসগো, লন্ডন, ফ্রান্সসহ যেসব দেশে সফরে গিয়েছেন, যেমন- জার্মানি, জাপান, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রÑ সেসব দেশেও তিনি দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ী, শিল্পগোষ্ঠী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত ও আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন। দেশে নতুন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুতির পথে। দেশী-বিদেশী নিয়োগকারীদের জন্য কর অবকাশ, স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ, বিদ্যুত-পানি, গ্যাস যোগাযোগ অবকাঠামোসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই দেশে প্রচলিত রীতিনীতি ও আইন মেনে বিনিয়োগ করতে হবে। দেশবাসীর বহু কাক্সিক্ষত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ সমাপ্ত প্রায়। রেলপথ নির্মাণের কাজও চলছে জোরেশোরে। অল্পকালের মধ্যেই চালু হচ্ছে পদ্মা সেতু। তাতে দক্ষিণ-পশ্চিমঞ্চালে বৃহৎ জনগোষ্ঠী ও জনপদের সঙ্গে স্থাপিত হবে সরাসরি সংযোগ। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয়সহ গতিশীল হবে অর্থনীতির চাকা। রাজধানীতে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল দৃশ্যমান হয়েছে ইতোমধ্যে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু টানেলের টিউবের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এটিও সচল হতে পারে চলতি বছরেই। ফলে কক্সবাজার-টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার থেকে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত স্থাপিত হবে সড়ক ও রেলযোগাযোগ। একদিকে ভারত-নেপাল-ভুটান, অন্যদিকে মিয়ানমার-চীন পর্যন্ত সরাসরি সড়ক ও রেলযোগাযোগ স্থাপিত হলে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির চেহারা বদলে যেতে বাধ্য। বাংলাদেশ হবে এর কেন্দ্রবিন্দু।