কাজিরবাজার ডেস্ক :
মার্চ মাস বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির মাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাস। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়। বাঙালির রক্তের দামে কেনা স্বাধীনতার সূর্য পূর্ব দিগন্তে উদিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের এই মার্চেই।
১৯৭১ সালে এসে যে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে, যদিও তার গোড়াপত্তন হয়েছিল বহু বছর আগে। তারপরে ’৫২’র ভাষা আন্দোলন, ’৬৬’র শিক্ষা আন্দোলন এবং ’৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে এসে বাঙালির সেই স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতিতে স্পর্শ করে। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের গহীনে লালন করা তখনও অধরা ‘স্বাধীনতা’ যেন অগ্নিস্ফূলিঙ্গের মতো সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহার্ঘ স্বাধীনতা।
সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন যুদ্ধ করছে করোনা মহামারীর সঙ্গে। যার হাত ধরে একাত্তরে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সেই মহান নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন চলছে গত দুই বছর আগে মার্চ থেকে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দেশবাসী পালন করেছে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায়। তাই অগ্নিঝরা মার্চে দেশের মানুষ নতুন করে শপথ নেবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার।
হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি তার আত্মপরিচয়ের সন্ধান পায় যে মাসে, তারই নাম মার্চ। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সীমাহীন দেশপ্রেম, তুলনাহীন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অসীম সাহস, দূরদর্শিতা আর দৃঢ় নেতৃত্বে এই পলল ভূখ- একাত্তরের মার্চে এসে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
অগ্নিঝরা মার্চের দ্বিতীয় দিন আজ। মূলত ১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকেই বাঙালির ধারাবাহিক স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ ধাপের প্রতিরোধ শুরু। একাত্তরের এই দিনে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এক বিক্ষুব্ধ জনপদে।
এদিন উড়ানো হয়েছিল মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। এর আগেরদিন ১ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক ইয়াহিয়া খান এক ফরমানের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। তার সেই অবৈধ এবং স্বৈরাচারী ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালি জাতির কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিরা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করা ছাড়া অধিকার আদায়ের আর কোন বিকল্প নেই।
পাকিস্তানী শাসকদের এই মনোভাবের বিস্ফোরণ ঘটেছিল ২ মার্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্ররা এদিন বটতলায় এসে জমায়েত হন। বটতলার সমাবেশে ইয়াহিয়ার স্বৈরাচারী ঘোষণার ধিক্কার জানানো হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বটতলার ঐতিহাসিক সমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আসম আবদুর রব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাটি উত্তোলন করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস এই পতাকাই বিবেচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আহুত ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভা সর্বাত্মকভাবে সফল করার প্রস্তুতি চালায় আওয়ামী লীগ। আর এই জনসভাকে কেন্দ্র করে মুক্তিপাগল বাঙালির মধ্যে এক অন্য ধরনের গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। পাক হানাদার বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের ললাটেও তখন চিন্তার বলিরেখা। ওই জনসভায় বঙ্গবন্ধু কী স্বাধীনতার ডাক দেবেন ? দিলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে- এ নিয়ে পুরো পাকিস্তানেই তোলপাড় চলছিল।
একদিকে জনসভার প্রস্তুতি, অন্যদিকে গোটা বাংলাদেশেই উত্তাল আন্দোলন-বিক্ষোভে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতিটি বাঙালির চোখে-মুখে একই প্রত্যাশা-পাকিস্তানী দখলদারদের হটিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ছিনিয়ে আনা। আর সেই লক্ষ্য পূরণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির দামাল ছেলেরা সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
সোমবার দিবাগত রাত শেষে প্রথম প্রহরে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠন ধানমন্ডিস্থ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং আলোর মিছিলের মাধ্যমে অগ্নিঝরা মার্চের মাসব্যাপী কর্মসূচী শুরু করে। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ বের করে আলোর মিছিল।