দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় আগ্রাসন হিসেবে দেখা হচ্ছে বর্তমান ইউক্রেনের ঘটনাটিকে। এর তাৎক্ষণিক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বর্তমান সময়ে বিশ্ববাসী রক্তক্ষয়ী কোন রাষ্ট্রীয় সংঘাতকে সমর্থন করে না। যুদ্ধ নয়, শান্তিই কাম্য বিশ্বের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের। ভূরাজনৈতিক কৌশল ও রাষ্ট্রীয় ক্ষুদ্রস্বার্থে বিরোধ সামরিক অভিযান পর্যন্ত গড়ায়। যেমনটা হয়েছে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে। ইউক্রেনে হামলা শুরুর আগে রাশিয়া যখন ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করছিল তখনই দেশটির বিভিন্ন ব্যাংক এবং ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাতে কোন কাজ হয়নি। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকে পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) একযোগে স্থল, আকাশ ও নৌপথে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কোন দেশের ওপর আরেক দেশ এত বড় হামলা চালায়নি। সংঘাত থামানোর লক্ষ্যে নিন্দা জানানো, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পাশাপাশি আলোচনার পথ খোলা রাখার কৌশল নিয়েছেন পশ্চিমা নেতারা। তাই ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পুতিনকে ফোন করেন ফ্রান্সের ম্যাক্রোঁ। শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন- ‘তারা (রাশিয়ানরা) রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যার মাধ্যমে ইউক্রেনকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করতে চায়।’
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাশিয়া গত সোমবার অঞ্চল দুটিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০১৪ সাল থেকে এলাকা দুটি দখল করে আছে। এখন তাদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রাশিয়া এই যুদ্ধের যৌক্তিকতা প্রমাণের চেষ্টা করছে। রাশিয়ার এই সক্রিয়তাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে। বলা হচ্ছে ১৯৯৪ সালের একটি স্মারকের সঙ্গেও যা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৯৯৪ সালে ইউক্রেন যখন তার হাতে থাকা সব ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করে নন-প্রলিফিরেশন অব নিউক্লিয়ার উইপেন ট্রিটি বা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে সম্মত হয় সেই সময় একটি স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। তাতে স্বাক্ষর করেছিল ইউক্রেন, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র। বুদাপেস্টে ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৪ সই করা এই স্মারকে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেয়া হয়েছিল যে, এর সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হবে না।
রাশিয়ার সামরিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য কী ফল বয়ে আনবে সেটি ভবিষ্যতই বলে দেবে। জ্বালানির ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভর দেশ বাংলাদেশের রয়েছে কৌশলগত নিরপেক্ষতা। সেটি যে কোন মূল্যেই বজায় রাখা দরকার। তবে যে কোন আগ্রাসন বা যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত মানবিকতাকেই বিদ্ধ করে। মারা পড়ে অগণিত মানুষ। অস্থিরতা তৈরি হয় দেশে দেশে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ ও অশ্রদ্ধার বোধ তৈরি হয়। তাই মানুষ সব সময়েই শান্তির সপক্ষে।