রমজানের আগে ভোগ্যপণ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ, বাড়ানো হবে সরবরাহ ॥ আজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জরুরী বৈঠক

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রমজান মাস সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ভোজ্যতেল, চিনি, মশুর ডাল, ছোলা এবং খেজুরের মতো ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানো হবে নিত্যপণ্যের বাজারে। এ লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণে আজ বুধবার জরুরী বৈঠক ডেকেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এছাড়া স্বল্প আয়ের কোটি পরিবারকে রমজানের আগে এবং মাঝে দুবার টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম বরদাশত করবে না সরকার। ঢাকা মহানগরীতে ২০০ ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। লাইনে দাঁড়িয়ে একাধিবার ভোগ্যপণ্য সংগ্রহের কোন সুযোগ থাকবে না। বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করবে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা অনিয়ম করে টিসিবির ভর্তুকির মূল্যের খাদ্য সহায়তা গ্রহণ করবে তাদের জেল-জরিমানার মতো শাস্তির বিধান রয়েছে। এছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিং টিম আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। সরকারী এসব উদ্যোগের ফলে ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। রমজান সামনে রেখে ইতোমধ্যে অস্থির হয়ে ওঠেছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। সরকার নির্ধারিত দামেও ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ছে চিনির দাম। এর পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগি, মাছ-মাংস এবং শাকসবজির মতো পণ্যেরও দাম বেশি। এ অবস্থায় রমজানে পণ্যমূল্য কোথায় গিয়ে থামবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নগরবাসী। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। রমজান সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়লে চাপে পড়বে দেশের মধ্যবিত্তরা। বিষয়টি সরকারের নজরে আসায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দ্রব্যমূল্য বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দরদাম সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কিভাবে দেশে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা যায় সেই কৌশল নির্ধারণেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে আজ রমজান উপলক্ষে টিসিবির কর্মপরিকল্পনা ও কৌশল বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় টিসিবির পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজার কিভাবে স্থিতিশীল রাখা যায় সে বিষয়েও আলোচনা করা হবে। এর পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের মাসিক সভা ডাকা হয়েছে। এই বৈঠকটিতেও রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দফতর, অধিদফতর এবং সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ইতোমধ্যে বেশকিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রমজান সামনে রেখে স্বল্প আয়ের কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে টিসিবির মাধ্যমে। এর পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও যাতে কোন রকম সুযোগ না নিতে পারেন সেলক্ষ্যে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। আশা করছি, রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। এদিকে, ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে টিসিবির কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। এক্ষেত্রে কোন ডিজিটাল ফ্যামিলি কার্ড দেয়া হবে না। তবে জেলা শহর ও পৌরসভাগুলোতে টিসিবির সহায়তা নিতে হলে নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। ঢাকায় এক ব্যক্তি একাধিকবার কিংবা এক ট্রাক থেকে পণ্য নেয়ার পর অন্য ট্রাকে গিয়ে পণ্য নিতে পারবে না। বিষয়টি ক্লোজ মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারের এজেন্সিগুলো বিশেষ করে গোয়েন্দা সংস্থা অপরাধীদের চিহ্নিত করতে মাঠে থাকবে। শুধু তাই নয়, টিসিবির ডিলাররাও যাতে অপকর্মে শামিল না হন সেদিকেও কঠোর মনিটরিং করা হবে। টিসিবির প্রতিটি ট্রাকের সঙ্গে একজন ট্যাগ অফিসার থাকবেন।
দাম কমাতে ব্যবসায়ী নেতাদের এগিয়ে আসার পরামর্শ : কারসাজি করে অতিমুনাফা করার লোভে ‘গুটিকয়েক’ ব্যবসায়ীর কারণে পণ্যমূল্যের বাজার অস্থির হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, রমজানের আগেই সব দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেছে। সরকারের পক্ষে সব বাজার মনিটরিং সম্ভব নয়। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে ব্যবসায়ী নেতাদের। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতাদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভায় মঙ্গলবার তিনি এসব কথা বলেন। গত কিছুদিন থেকেই সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা জানানো হচ্ছে। সেজন্য বাজার মনিটরিং থেকে নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়। সফিকুজ্জামান বলেন, শুধু নিম্ন্নবিত্ত শ্রেণীই নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণীও এখন চাপে আছে। রোজার আগেই বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বেশিরভাগ পণ্য। কঠিন সময়ে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। তিনি বলেন, পণ্যের যৌক্তিক দাম নিতে হবে। রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করার কথা জানিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ভোক্তা স্বার্থ ক্ষুণ্ন্ন হলে ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প থাকবে না। ওই বৈঠকে মোহাম্মদপুর টাউন হল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান বাবুল বলেন, পাইকারি বাজারে মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। কাওরান বাজার থেকে পণ্য কিনলে রশিদ দেয় না। কাঁচামাল কোনদিন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না। প্রতিদিন দাম নির্ধারণ করে দিতে হয়। রশিদ ছাড়া বিক্রিতেই কারচুপি হয়। মিরপুর ৬নং ব্যবসায়ীর সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, সব পণ্যের দাম বাড়ছে। শুধু চাল, তেলই না, সাবান, হুইল পাউডার, দুধের দামও লাগামহীন। সীমিত আকারে লাভে পণ্য বিক্রি করছি। আমরা কোন দাম বাড়াইনি।
টিসিবির পণ্য বিক্রির সময় চার দিন বাড়ল : সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম চার দিন বাড়িয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, চলতি মাসের পণ্য বিক্রি কার্যক্রম ৪ দিন বাড়িয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে অষ্টম দফার বিক্রি কার্যক্রম মঙ্গলবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরমধ্যে টিসিবির মুখপাত্র জানান, এ কার্যক্রম আরও চারদিন বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি টিসিবির ট্রাকে বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ হয়। এরপর আষ্টমবারের মতো বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয় গত ৩ ফেব্রুয়ারি। টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম থেকে একজন ক্রেতা ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি চিনি, ১১০ টাকা দরে ২-৫ লিটার সয়াবিন তেল ও কেজি ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। এছাড়া টিসিবির ট্রাক থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি মসুর ডাল কেনা যাচ্ছে।