দশ নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি, সার্চ কমিটির যাচাই-বাছাই চলছে

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শনিবারের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের জন্য ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি সার্চ কমিটি। তবে এ বৈঠকে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা চূড়ান্ত করতে এ কমিটি আরও দু’একটি বৈঠক করবে। এরই অংশ হিসেবে ফের আজ রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বৈঠক করবে সার্চ কমিটি।
সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে শনিবার বেলা ১১টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, সার্চ কমিটির সভায় আইনে বর্ণিত যোগ্যতা অনুসারে যাচাই করে প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে ২০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আরও দু’একটি সভা করে নির্বাচন কমিশনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দিতে ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। আর রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সার্চ কমিটির পরবর্তী বৈঠক হবে।
সার্চ কমিটির সভাপতি আপীল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। বৈঠকে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেছেন মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন।
উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত কয়েক দফা বৈঠক করলেও নির্বাচন কমিশনের জন্য ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি সার্চ কমিটি। বিভিন্ন মহলের সমালোচনা এড়ানোর কৌশল হিসেবে অধিকতর যাচাই-বাছাই করার জন্য তারা ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে। তবে আরও দু’একটি বৈঠকের পর নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে। আর সার্চ কমিটির কাছ থেকে তালিকা পাওয়ার পর সেখান থেকে ১ জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ৪ জনকে কমিশনার নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
পর্যালোচনা করে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য ২৬ রাজনৈতিক দল, ৬ পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তাব করা ৩২২ নামের মধ্য থেকে ১০ জনের তালিকা ঠিক করতে এ পর্যন্ত কয়েক দফা বৈঠক করে সার্চ কমিটি। শনিবারের বৈঠকের আগে সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে সার্চ কমিটির আগের বৈঠক হয় বুধবার। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে আরও যাচাই-বাছাই করে অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্ন ১০ নামের তালিকা ঠিক করতে শনিবার আবারও বৈঠক করে সার্চ কমিটি। এর আগে নিজেরা বৈঠক করা ছাড়াও দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তিন দিনে চার দফা বৈঠক করে সার্চ কমিটি।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠক করে সার্চ কমিটি। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় বৈঠক করে এ কমিটি। আর দ্বিতীয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে ১২ ফেব্রুয়ারি ২ দফা ও ১৩ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দফা এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফা বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেয় সার্চ কমিটি। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠকের পর সার্চ কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যেও একটি বৈঠক করে। বিশিষ্টজনদের প্রথম ৩ দফা বৈঠকে পাওয়া প্রস্তাব অনুসারে নির্বাচন কশিনের জন্য ২৬ রাজনৈতিক দল, ৬ পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তাব করা ৩২২ জনের নামের তালিকা ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করে সার্চ কমিটি। এতে অবসরপ্রাপ্ত ১০০ জন সাবেক আমলা ছাড়াও বিচার বিভাগ, শিক্ষাবিদ, সামরিক বাহিনী, পুলিশ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম স্থান পায়।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলকে নাম জমা দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিল সার্চ কমিটি। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকেও ই-মেইলে নাম পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়। এরপর প্রথমে আওয়ামী লীগসহ ২৪ টি রাজনৈতিক দল ও ৬টি পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে আরও অনেকে নাম প্রস্তাব করে। ১৫ টি রাজনৈতিক দল নাম প্রস্তাব না করায় পরে আরও ২ দিন সময় বাড়ানো হয়। পরে ওই ১৫টি দল থেকে আরও ২টি দল নাম জমা দিলেও বিএনপিসহ ১৩টি দল দেয়নি।
সার্চ কমিটিকে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য ১০ জনের নামের তালিকা সুপারিশ করার জন্য ১৫ কার্যদিবস সময় দেয়া হয়। তবে সার্চ কমিটি ইচ্ছে করলে এর আগে যে কোন সময় রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশ করতে পারে। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই এখন আর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে কোন তাড়া নেই। কারণ নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে কিছুদিন দেরি হলেও এতে আইনগত কোন সমস্যা নেই।
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য নাম সুপারিশ করতে ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ অনুসারে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ আপীল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে গেজেট প্রকাশ করে। সার্চ কমিটির অন্য ৫ সদস্য হলেনÑ হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারী কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন এবং কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। সার্চ কমিটির কর্ম সম্পাদনে সাচিবিক সহায়তার দায়িত্ব দেয়া হয় মন্ত্রীপরিষদ সচিবকে।