বোরো আমাদের প্রধান ফসল। মোট খাদ্য চাহিদার বেশিরভাগই পূরণ হয় বোরো ধান থেকে। বোরো উৎপাদন নির্বিঘ্ন হলে বছরজুড়ে খাদ্য নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হয় না। সরকারী হিসেবে দেশের মোট চালের চাহিদা বছরে দুই কোটি ৮০ লাখ টন। এর মধ্যে এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৯ কোটি টন। সরকারের কৃষি বিভাগ ধারণা করছে, বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এবার। ধানের দাম ভাল পাওয়ায় প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কৃষকের বেশি আগ্রহ বোরো চাষে। সারাদেশে বোরো আবাদের ধুম পড়েছে। শীত ও কুয়াশায় কোন কোন এলাকায় বীজতলা নষ্ট হয়ে গেলেও কৃষকরা নতুন উদ্যমে বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং রোগ-বালাই প্রতিরোধ করতে পারলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় কৃষকের পাশে থেকে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
দেশে বোরো ছাড়াও রয়েছে আমন ও আউশ ধান। বোরোর ফলন ভাল হলে কৃষকের ঘরে সারা বছরের খাদ্য উঠে যায়। তখন অঞ্চলভেদে আমন ও আউশ ধান উৎপাদনের দিকে না গিয়ে কৃষক অন্য ফসল আবাদে মনযোগী হয়। বোরোর সাফল্যে এই দুটি ফসল উৎপাদন ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও বাড়ি-ঘরসহ নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণে ফসলের জমি কমে যাচ্ছে। এর পরও সরকারী হিসাবে আমন উৎপাদন হচ্ছে বছরে প্রায় দেড় কোটি টন। আউশ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন। হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন খাদ্যে উদ্বৃত্ত। সরকারী হিসাবে অবশ্য কিছু প্রশ্নও থেকে যায়। দেশে এত খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকলে দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধির কারণ কি? এত উদ্বৃত্ত চাল যায় কোথায়? চাল রফতানি নিষিদ্ধ। কিছু সুগন্ধি চাল রফতানির অনুমোদন রয়েছে, যার পরিমাণ নগণ্য। তাহলে সরকারী হিসাবে কি কোন গোলামাল রয়েছে, পরিসংখ্যান বিভাগকে বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।
হিসাব যাই হোক, বাজারে চাল সরবরাহে কোন ঘাটতি নেই। সরবরাহ নিশ্চিত হয় কৃষকের উৎপাদিত চাল থেকেই। সরকারের নানা উাদ্যোগ এবং কৃষকের আগ্রহে চালে আমরা প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছি। গোলা ভরা ধান থাকলে অন্য কোন সঙ্কটই মানুষকে বিপর্যস্ত করতে পারে না। প্রণোদনা হিসেবে উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে কৃষকদের মধ্যে। যারা এগুলো উৎপাদন করছেন, তাদের কাছ থেকে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বীজ হিসেবে ধান কিনে নেয়া হবে। আগামী বছরও এই জাতের বীজ কৃষকদের দেয়া হবে বিনামূল্যে। সরকারের এসব উদ্যোগে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যতে চাল রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।