সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ করুন

6

রাজধানীসহ সারাদেশে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর দাবিতে সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বিভিন্ন সময়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দলে দলে নেমে এসেছে রাস্তায় সহপাঠী ও সহশিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যুর প্রতিবাদে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সড়ক ও সেতু কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএ এমন কি যানবাহনের মালিক ও চালকদের বার বার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সড়ক নিরাপদ করা যায়নি। বাস্তবে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে খুব একটা অগ্রগতি হয়েছে বলেও প্রতীয়মান হয় না। প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ, নারী ও শিশু। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর আইন ও বিধিনিষেধও রয়েছে। তবে বাস্তবে এর প্রতিফলন ঘটছে না কিছুতেই। কেননা, সড়কপথ অনুপাতে যানবাহন অনেক বেশি। মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন চলছেই। তদুপরি ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক, ভুয়া লাইসেন্স ইত্যাদির দাপট। সার্বিক পরিস্থির বিবেচনায় এবার দেশের সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধসহ নির্বিঘ্ন নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনে ব্যাপক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতর। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মসিংহ, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-উত্তরবঙ্গসহ সব মহাসড়কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হচ্ছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, যা থাকবে পুলিশের সর্বক্ষণিক নজরদারিতে। ইতোমধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এডিবির অর্থায়নে ৪টি জোনের ৪৯০টি স্পটের ২৫০ কিলোমিটার জুড়ে ১৪২৭টি সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বসবে দেশের সব সড়কে। এর ফলে সড়ক দুর্ঘটনার হার একেবারে শূন্য না হোক, অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, আন্তর্জাতিক মানদন্ডের চেয়ে সাতগুণ বেশি গাড়ি চলাচল করছে রাজধানীতে। বিআরটিএর নিবন্ধন তথা পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় উঠে এসেছে এই তথ্য। গত দশ বছরে গাড়ি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ, যার মধ্যে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলই ৬৫ শতাংশ। ফলে সড়ক দুর্ঘটনাসহ তীব্র যানজট, সেই সঙ্গে ভয়াবহ বায়ুদূষণ বাড়ছেই, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনার অনেক কারণের মধ্যে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো অন্যতম। সড়ক-মহাসড়কে ইজিবাইক, হোন্ডা, ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান, নসিমন, করিমন, লেগুনা চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর পাশাপাশি ২০১৮-এর ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইনটি দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করাও আবশ্যক। সারাদেশের সড়ক-মহাসড়ক সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে এলেও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।