ভারতীয় তুলার দাম বেশি, বিকল্প ভাবতে পারে বাংলাদেশ

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রপ্তানি প্রিমিয়ামের চার্জ বাড়ানোয় তুলার বাজার হারাচ্ছে ভারত। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে তাদের তুলা রপ্তানি কমতে শুরু করেছে। চড়া দামের কারণে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, চীনের মতো দেশগুলো ভারতের বদলে তুলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়াসহ আফ্রিকান দেশগুলোর দিকে বেশি ঝুঁকতে পারে। এই শিল্প সংশ্লিষ্টদের বরাতে শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
মুম্বাইভিত্তিক কোটাক জিনিং অ্যান্ড প্রেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লিমিটেডের পরিচালক বিনয় কোটাক বলেন, তুলা রপ্তানি সন্তোষজনক নয়। আমরা বাংলাদেশে অল্প পরিমাণে বিক্রি করছি। কিন্তু অন্যরা কিনছে না।
তথ্যমতে, বাংলাদেশকে প্রতি পাউন্ড (প্রায় ৪৫০ গ্রাম) তুলা ১৩৫ সেন্টে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৬ টাকা প্রায়) বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছে ভারত, যা বেঞ্চমার্ক যুক্তরাষ্ট্রের দামের চেয়ে প্রায় ২০ সেন্ট (প্রায় ১৭ টাকা) বেশি। ভারত সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের দামের ওপর ৫ থেকে ১০ সেন্ট/পাউন্ড প্রিমিয়াম চার্জ বসায়।
বিনয় কোটাকের বিশ্বাস, স্থানীয় বাজারে তুলার রেকর্ড দামের কারণে ২০২১-২২ বিপণনবর্ষে ভারতের রপ্তানি হোঁচট খেতে পারে। তার ধারণা, এ বর্ষে দেশটি মাত্র ৪০ লাখ বেল তুলা রপ্তানি করতে পারে, এক বছর আগেও যার পরিমাণ ছিল অন্তত ৭৮ লাখ বেল। ক্রেতারা প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকে পড়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
২০২১-২২ বিপণনবর্ষ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। ডিলাররা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে ভারত এ পর্যন্ত মাত্র ১৮ লাখ বেল তুলা রপ্তানি করতে পেরেছে এবং জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আরও ১০ লাখের মতো রপ্তানি হতে পারে।
মুম্বাইভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার এক ডিলার বলেন, বাংলাদেশের কিছু ক্রেতা বেশি দামে ভারতীয় তুলা কিনছেন। কারণ, তাদের দ্রুত চালান এবং ডেলিভারির নিশ্চয়তা দরকার।
বাংলাদেশে ভারতীয় তুলার প্রায় অর্ধেকই আমদানি হয় সড়কপথে। ফলে চালানের নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে থাকে ভারত।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকেও তুলা কেনে। তবে চলতি মৌসুমে আগামী মার্চ মাসের পরে ছাড়া মার্কিন তুলা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার ওপর, শ্রমিক ঘাটতি এবং বন্দরে কনটেইনার জটের কারণে চালানও যে সঠিক সময়ে পৌঁছাবে, তারও নিশ্চয়তা নেই।
বৃষ্টিতে বড় ক্ষতি
বিনয় কোটাক বলেন, ২০২১-২২ বিপণনবর্ষে ভারতের তুলা উৎপাদন ৩ কোটি ৪০ লাখ বেলে নেমে যেতে পারে, যা আগের বছরের তুলনায় অন্তত চার শতাংশ কম। এ বছর কৃষি মৌসুমে বিভিন্ন রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত তুলা উৎপাদনের মারাত্মক ক্ষতি করেছে।
এতে ভারতের বাজারে বড় প্রভাব পড়ছে। নয়াদিল্লির এক ডিলার জানান, সেখানে দৈনিক তুলা বাণিজ্য ১ লাখ ৭৫ হাজার বেলে নেমে গেছে, যেখানে স্বাভাবিকভাবে বছরের এই সময়ে দিনে আড়াই লাখ বেল লেনদেন হওয়ার কথা।
তিনি বলেন, চাষিরা জানেন ফসল কম হয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে মজুত ছাড়ছেন। তারা আশা করছেন, তুলার দাম আরও বাড়বে।
গুজরাটের এক সুতা প্রস্তুতকারক জানিয়েছেন, সুতার রপ্তানি চাহিদা বাড়ায় ভারতীয় স্পিনিং মিলগুলো ব্যাপক হারে কাঁচা তুলা কিনছে। তিনি বলেন, মিলগুলো তুলা মজুত করছে। স্থানীয় চাহিদা এ বছর সাড়ে তিন কোটি বেলের ওপর উঠতে পারে। তা হলে আমাদের ভালো মানের তুলা আমদানির দরকার পড়তে পারে।
বিনয় কোটাক বলেন, ভারতের টেক্সটাইল মিলগুলো তুলা আমদানি করতে আগ্রহী। কিন্তু ১০ শতাংশ আমদানি করের কারণে সেটিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার শুল্ক প্রত্যাহার করলে তবেই আমদানি বাড়বে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক ডিলার জানান, ভারত ২০২০-২১ সালে ১০ লাখ বেল তুলা আমদানি করেছিল এবং চলতি মৌসুমে ব্যবসায়ীরা সাত লাখ বেল আমদানির জন্য চুক্তি করেছেন। স্থানীয় বাজারে তুলার মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে দেশটিকে এ বছর আরও অন্তত ২৫ লাখ বেল আমদানি করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।