বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
আগের মত এখন আর পরিযায়ি পাখি আসছে না তাহিরপুরের হাওরে। ৫/৭ বছর পূর্বেও শীত এলেই পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর হতো তাহিরপুরের হাওর বাওড়। রামসা সাইট টাঙ্গুয়া হাওর সহ শনি,মহালিয়া,সমসা মাটিয়ান,হালি হাওরে শীতকালে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতো পরিযায়ী পাখি। পাখির কলতানে মুখরিত হত হাওরের চারপাশ। শীত এলেই পাখি প্রেমি ও সাধারণ দর্শার্থীরা পাখি দেখতে আসতেন হাওরে। এখন আর আগের মত আসে না পাখি তাই শীতকালে দেখাও মেলে না পর্যটকদের।
স্থানীয় হাওর পারের লোকজন ও পাখি গবেষকরা বলছেন,ফাদ পেতে পাখি নিধন, পাখির আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্য সংকট, জমিতে কীটনাশক এমনকি বিষ টোপ দিয়ে পাখি মারার কারণে দিন দিন পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে।
টাঙ্গুয়া হাওর সহ বিভিন্ন হাওর পারের গ্রামের প্রবীন লোকদের কাছ থেকে জানা যায়,হাওরে এক সময় প্রচুর পরিমানে ছোট মাছ পাওয়া যেত। আর শীতকালে যখন হাওর কিছুটা শুকিয়ে পানি কমে যেতে তখন খাবারের সন্ধানে শীত প্রধান দেশ থেকে প্রচুর পরিমান অতিথি পাখি আসতো হাওরে। সেই সাথে দেশী পাখি তো রয়েছেই। বিগত ৫/৭ বছর পূর্বে যে সব পাখি প্রচুর পরিমাণে দেখা যেত হাওরে তার মধ্যে বালিহাঁস,সরালি,মৌলভী,পানকৌড়ি, সাদা বক, রামকুড়া, শামুককৌড়ি, ল্যাঞ্জা হাঁস, কালো হাঁস, কুড়া, চখাচখি, কাইম, তিলিহাঁস, বালু নাকুটি উল্লেখযোগ্য । বর্তমানে চলছে শীতকাল কিন্তু হাওর গুলোতে নেই পরিযায়ি পাখির কলকাকলি। কিছু পাখি আসলেও তাদের হাওরে স্থায়িত্ব কম। দু একদিন থেকে আবার চলে যাচ্ছে।
টাঙ্গুয়া হাওর পার গ্রাম মন্দিয়াতা। গ্রমের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাঞ্জু মিয়া তিনি বলেন, হাওরে এক সময় প্রচুর পরিমানে অতিথি পাখি আসতো। পাখির ওড়া উড়ি ও কলরবে মুখরিত হত টাঙ্গুয়া হাওর পার। এখন আর আগের মত পাখি আসে না। হাওরের প্রকৃতিক ভাবে জন্ম নেয়া গাছ পালা কেটে নেয়ায় সেই সাথে কিছু অসাধু শিকারী ফাদ পেতে পাখি ধরার কারণে পাখি এ জায়গাটা কে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল মনে করছে না।
শনির হাওর পার গোবিন্ধশ্রী গ্রামের প্রবীণ কৃষক হারুনর রশিদ,তিনি বলেন, এক সময় এত পরিমানে হাওরে হাওরে অতিথি পাখি আসতো তখন হাওর পারের কৃষক রাত জেগে,কেরোসিন টিনের ভেতর ঘন্টা বাজিয়ে পাখি তাড়াতেন। অনেকেই তাদের রোপন কৃত জমিতে বাশ দিয়ে ফাকা দিতেন( কাতারোয়া) যাহাতে পাখি রোপনকৃত জমি নষ্ট না করে। অনেক বছর হলো এখন আর কোন কৃষকরে মুখে শুনি না অতিথি পাখি তাদের জমি নষ্ঠ করছে।
উপজেলার ঘাঘটিয়া গ্রামের তরুন ফটোগ্রাপার অমিও হাসান,তিনি জানান গত বছর তিনি পাখির ছবি তোলার জন্য দু দিন টাঙ্গুয়া হাওরে গিয়েছেন। ঝাকে ঝাকে পাখির দেখা পান নি। কিছু পেয়েছেন বিচ্ছন্ন ভাবে উড়াউড়ি করছে। এবারও তিনি খোজ খবর নিচ্ছেন পাখি আসছে কিনা। তবে তিনিও জানান এখন পর্যন্ত হাওরে তেমন পাখি এখনও আসেনি।
বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সদস্য এম মুহিত এর সাথে হাওরে পাখি কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতি বছরই শীত প্রধান দেশ থেকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণতম দেশে অতিথি পাখি দল বেদে আসে কিন্তু এখানে এসে তাড়া শিকারে পরিনত হয়। বিশেষ করে হাওর গুলোতে পরিযায়ি পাখি নিধন বেশী হচ্ছে। আর বছরে বছরে পাখি নিধন হওয়ায় পাখি এখন আ হাওর কে তাদের নিরপদ মনে করছে না সেই সাথে খাদ্য সংকট তো রয়েছেই।
পাখি গবেষক ও পাখি প্রেমি নাজিম উদ্দিন প্রিন্স তিনি একাধিক বার টাঙ্গুয়া হাওরে এসেছেন পরিযায়ি পাখির ছবি তোলার জন্য। এখন আর আসেন না। কারণ হাওরে এখন আর আগের মত পরিযায়ি পাখি আসে না। তার মতে হাওর এখন আর পাখির জন্য নিরাপদ আবাস স্থল নয়। সেই সাথে পাখির প্রাকৃতিক খাবার ছোট মাছ, শামুক-ঝিনুক আর আগের মত হাওরে পাওয়ায় যায় না।
টাঙ্গুয়া হাওর পার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন,হাওরে পাখির আগমন কমে যাওয়ায় শীতকালে টাঙ্গুয়া হাওরে পর্যটক তেমন আসেন না। যখন হাওরে পাখির আগমন বেশি ছিল তখন শীতকালে পাখি দেখার জন্য প্রচুর পরিমানে পর্যটক ও দর্শনার্থী হাওরে আসতেন বলে তিনি জানান।