কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত নেপালের পর্যটননির্ভর অর্থনীতি। দেশটিতে বিদেশি পর্যটক কমার ধারা যেন থামছেই না। করোনাপূর্ব সময়ের তুলনায় ২০২১ সালে নেপালে বিদেশি পর্যটক কমেছে প্রায় ৮৭ শতাংশ। ১৯৭৭ সালের পর দেশটিতে আর কখনোই এত কম সংখ্যক বিদেশি পর্যটক প্রবেশ করেনি।
নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের হিসাবে, গত বছর দেশটিতে মোট ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৬২ জন বিদেশি পর্যটক ঘুরতে গেছেন। ২০১৯ সালে করোনাপূর্ব সময়ে এর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৯০ হাজারের বেশি। সেই হিসাবে, মহামারির ধাক্কায় নেপালে বিদেশি পর্যটক প্রবেশ কমেছে অন্তত ৮৭ শতাংশ। সবশেষ ১৯৭৭ সালে মাত্র ১ লাখ ২৯ হাজার ৩২৯ জন বিদেশি পর্যটক পেয়েছিল নেপাল।
২০২০ সাল নেপালের পর্যটন শিল্পের জন্য মোটেও ভালো যায়নি। ২০২১ সালেও অব্যাহত ছিল সেই ধারা। নতুন করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ২৯ এপ্রিল দ্বিতীয়বার লকডাউন জারি করে দেশটি। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় প্রায় চার মাস পর গত ১ সেপ্টেম্বর তুলে নেওয়া হয় সেই বিধিনিষেধ। কিন্তু এরপরও পর্যটনে সুসময় ফেরেনি।
নেপালের ডিজিপিতে প্রায় আট শতাংশ অবদান রাখে দেশটির পর্যটন শিল্প। করোনাপূর্ব সময়ে সেখানে ১০ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০২০ সালের মার্চে প্রথম লকডাউন দেওয়ার পর নেপালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
২০২০ সালে মাত্রই ‘ভিজিট নেপাল’ নামে এক উচ্চাভিলাষী প্রচারাভিযান শুরু করেছিল দেশটি। বছরে অন্তত ২০ লাখ বিদেশি পর্যটক টানার উদ্দেশ্য ছিল তাদের। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির হানায় কয়েক মাস পরেই মুখ থুবড়ে পড়ে এই কর্মসূচি। ওই বছর মাত্র ২ লাখ ৩০ হাজার ৮৫ জন বিদেশি নেপালে ঘুরতে যান।
নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডের মুখপাত্র নন্দিনী লাহে থাপার কথায়, ২০২১ সালে এই শিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে বলে আশা ছিল। কিন্তু এটিও বড় বিপর্যয়ের মধ্যে শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সতর্কতার সঙ্গে সব নজরে রাখছি। এই সংকট কাটাতে আমাদের ভারত ও বাংলাদেশের মতো আঞ্চলিক বাজারের দিকে নজর দিতে হবে।
নেপালের জাতীয় পর্যটন সংস্থাটির তথ্যমতে, গত বছর দেশটিতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক গেছে ভারত থেকে। ২০২১ সালে ভারত থেকে ৬৪ হাজার ৬৭৩ জন পর্যটক পেয়েছে নেপাল, যা তাদের মোট বিদেশি পর্যটকের প্রায় ৪৩ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ হাজার ৮৫৩ জন পর্যটক গেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এরপর যুক্তরাজ্য থেকে ৮ হাজার ৬৮০ জন এবং চীন থেকে ৬ হাজার ১৯৬ জন পর্যটক পেয়েছে নেপাল।
করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ এবং বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন বিধির কারণে নেপালে বিদেশি পর্যটক কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সংকট কাটাতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সাত দিন কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম বাতিল এবং টিকাগ্রহীতা বিদেশি পর্যটকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া ফের শুরু করে নেপাল। তবে সরকার এই পদক্ষেপ নিতে অনেক দেরি করে ফেলেছে বলে মনে করছেন নেপালের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
প্রায় তিন মাস ধরে নেপালের সীমান্ত উন্মুক্ত থাকা সত্ত্বেও গত বছরের শেষ ভাগে মাত্র ৬১ হাজারের মতো বিদেশি পর্যটক প্রবেশ করেছে দেশটিতে। সেপ্টেম্বরে সীমান্ত খোলার পর নেপালে পর্যটন কার্যক্রমে কিছুটা গতি ফিরলেও তা করোনাপূর্ব সময়ের তুলনায় ভগ্নাংশ মাত্র। এই শিল্প মহামারি-পূর্ব অবস্থায় যেতে ২০২৪ সাল লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন নেপাল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটরসের সভাপতি অশোক পোখারেল।