বয়োবৃদ্ধ মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্য

3

বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সবিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে সন্তানের। দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ পরিবারের প্রতিবন্ধী অসহায় স্বজনদের প্রতিও দায়িত্ব অস্বীকার করা যায় না। বিশেষ করে যেসব সন্তান চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী, তা সরকারী ও বেসরকারী যাই হোক না কেন, সামর্থ্যবান সন্তানদের পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের নিয়মিত দেখাশোনা, ভরণপোষণ এমন কি সাধ্যমতো হাত খরচও দেয়া আবশ্যক। তবে দুঃখজনক হলো আজকাল অনেক সন্তানই বাবা-মাসহ বয়োবৃদ্ধদের প্রতি যথাযথ দায়-দায়িত্ব পালন করেন না। অনেক ক্ষেত্রে অনাদর-অবহেলাও দেখানো হয়। তথাকথিত আধুনিকতা ও পাশ্চাতের প্রভাবে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী একান্নবর্তী পরিবার প্রথা প্রায় ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেকেই বিয়েশাদি করে হয়ে পড়ছেন পৃথকান্ন। বাবা-মা বয়োবৃদ্ধদের প্রতি ফিরেও তাকাচ্ছেন না। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন তো দূরের কথা! বিশেষ করে তথাকথিত শিক্ষিত, সচ্ছল ও শহুরে লোকদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়, যা উদ্বেগজনক। অনেকেই বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দায় সারেন। সেখানেও তাদের কপালে জোটে অযত্ন-অনাদর-অবহেলা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশর্ত বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রবীণ সম্মেলন-২০২১-এর প্রধান অতিথি দেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সেই কথাটি স্মরণ করে দিয়েছেন সবাইকে। তিনি বলেছেন, পিতা-মাতার ভোরণপোষণ তথা প্রবীণদের প্রতি নবীনদের দায়িত্ব পালন সব ধর্মেরই শিক্ষা। সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩ অনুযায়ী সব সন্তানকে খোরপোশ নিশ্চিত করতে হবে বাবা-মায়ের। কোন মা-বাবাকে যাতে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে সবাইকে। এক্ষেত্রে বয়োবৃদ্ধদের জন্য যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে রাষ্ট্রকেও।
বর্তমান জনবান্ধব সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী সম্প্রসারণ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে দরিদ্র ও বঞ্চিতদের মধ্যে সুবিধাভোগীর সংখ্যা অন্তত ১৩ লাখ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। এতে সুবিধা পাবেন প্রায় ৮৯ লাখ দরিদ্র মানুষ। উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রায় ৭৬ লাখ মানুষ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতায় সুবিধা ভোগ করছেন। অগ্রাধিকার দেয়া হবে প্রবীণদের। এর মধ্যে অন্যতম বয়স্ক ভাতা কর্মসূচী। এর আওতায় আরও ৪ লাখ প্রবীণকে দেয়া হবে বয়স্ক ভাতা। ফলে দেশব্যাপী ৪৪ লাখ প্রবীণ ব্যক্তি বয়স্ক ভাতার অন্তর্ভুক্ত হবেন। এর পাশাপাশি বিধবা ভাতা, স্বামী কর্তৃক নিগৃহীত নারী, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীসহ চা শ্রমিকদের দারিদ্র্য বিমোচন তথা জীবনমান উন্নয়নের জন্য সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে সরকারের, যা ইতিবাচক অবশ্যই।