কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মানসিক রোগী। তবে মহামারী করোনায় এই সমস্যা বেড়েছে ভয়াবহভাবে। এই ভাইরাস শুধু মানুষের শারীরিক ক্ষতি করেনি। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়েছেন অনেকে। এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে শুধু প্রথম দশ মাসে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ১৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ওই গবেষণায় বলা হয়, করোনাকালীন মানসিক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। আত্মহত্যা করাদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক। তবে করোনার সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বয়স্ক মানুষ। বিশেষ করে করোনার নতুন ধরনের ওমিক্রন বয়স্কদের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তাই চলতি মাস থেকেই তাদের করোনার বুস্টার ডোজ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এদিকে গবেষণা আরও বলছে, শুধু তাই নয়, দেশে প্রতি ৪ জনে ১ জন মানসিক রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ৯২ শতাংশ রোগীই নানা কারণে থেকে যান চিকিৎসার বাইরে।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ফর মেন্টাল হেলথ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চাইল্ড এডোলেসেন্ট এ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রির সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন কোন না কোন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই হার বেড়েই চলেছে। এদের মধ্যে তরুণরাই বেশি। তবে এত রোগীর মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ রয়েছে চিকিৎসার আওতায়। বাকি ৯২ শতাংশ নানা কারণে চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু-কিশোর কোন না কোন মানসিক রোগে ভুগছে। বেকারত্ব, হতাশা, অস্থিরতা, ব্যক্তিজীবনের অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, নানামুখী চাপ, অপ্রাপ্তি, লোভ ও বিচারহীনতা তরুণদের মানসিক রোগীতে পরিণত করছে। মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দেশে বছরে গড়ে ১০ হাজার জনেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। আর গুরুতর মানসিক রোগীদের মাঝে ৪২ শতাংশই কোন না কোন দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, ব্রেইন টিউমার, লিভার, কিডনি ও হার্টফেল অন্যতম। কিন্তু গুরুতর এই রোগটির জন্য নেই চিকিৎসাসেবা খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ। ডাঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, ১০০ টাকা থেকে মাত্র ৫০ পয়সা রয়েছে এই খাতে বরাদ্দ। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার চাইতে এটি প্রতিরোধই জরুরী। তিনি বলেন, সারা দেশে সব মিলিয়ে মাত্র ৫শ’ জন মনোরোগ চিকিৎসক রয়েছে। যা একেবারেই অপ্রতুল।
তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই এ বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ হলো আমাদের দেশের অনেক মানুষ বিদেশে আসা-যাওয়া করছে। ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়া ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ আমাদের দেশে আসছে। কাজেই আমরা যদি নিজেরা সতর্ক না হই, তাহলে ওমিক্রন ঠেকিয়ে রাখা খুবই কঠিন। জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। করোনা হাসপাতাল যেগুলো ছিল, সেগুলোকে যেভাবে আমরা প্রস্তুত করেছিলাম, সেগুলো সে অবস্থাতেই আছে। বরং ওমিক্রন মোকাবেলায় হাসপাতালগুলোকে আপগ্রেড করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের টিকা নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। ৩০ কোটি ডোজ টিকা এরইমধ্যে সংগ্রহ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ৪ কোটি ডোজ এখনও মজুদ আছে।
এসময় মন্ত্রী জানান, যারা ফ্রন্ট লাইনে কাজ করেন এবং যারা বয়স্ক তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মাসের মধ্যে বুস্টার ডোজ দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা বুস্টার ডোজের বিষয়ে কাজকর্ম করছি। ষাটোর্ধ ও ফ্রন্ট লাইনারদের বুস্টার ডোজ দেয়ার বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হবে। বুস্টার শুরুর আগে আমাদের সংখ্যাটি নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়াও আরও কিছু কাজকর্ম আছে। এই মুহূর্তে আমরা সুরক্ষা এ্যাপটিকে আপগ্রেডের কাজ করছি।