বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী

4

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর বন্ধন সরাসরি রক্তের সঙ্গে সম্পর্কিত। কেননা, ১৯৭১ সালের সুমহান সশন্ত্র মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশকে সর্বতোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল। প্রায় ১ কোটি সম্বলহীন অসহায় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল দেশটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তান কারগার থেকে নিঃশর্ত মুক্তি সর্বোপরি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে ভারত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রায় ১৭ হাজার সৈনিকের জীবন দান একটি ঐতিহাসিক ত্যাগের ঘটনা, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। তদুপরি ভারত ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, ভুটানের স্বীকৃতি প্রদানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। সেই হিসেবে দিনটি বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সুবর্ণজয়ন্তীও বটে। চলতি বছরের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ৬ ডিসেম্বরকে মৈত্রী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এই উপলক্ষে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড এ্যাফেয়ার্স সোমবার নয়াদিল্লীতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাতে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যাত্রায় একটি মাইলফলক। যা কোন অংশীদারী চুক্তি, সমঝোতা স্মারক বা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি পারস্পরিক সার্বভৌমত্ব, সমতা, বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং অন্যান্য অগণিত অভিজ্ঞতার যৌথ মূল্যবোধে পরিগণিত। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মৈত্রী ও বন্ধুত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ়, শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় ও প্রসারিত হয়েছে। উল্লেখ্য, এবারই প্রথম ঢাকা ও দিল্লী ছাড়াও বিশ্বের আরও ১৮টি দেশে একযোগে দুই দেশ পালন করেছে মৈত্রী দিবস। ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ঢাকায় আসছেন। এই সফরসূচী চূড়ান্ত করতে সে দেশের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার মঙ্গলবার দুই দিনব্যাপী ঢাকা সফরটিও গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা পানি বণ্টন, কুশিয়ারা নদীর খনন ও সংস্কার, এ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা সরবরাহ, দুই দেশের যোগাযোগ, বাণিজ্য বৈষম্যসহ অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা হয়েছে।