স্পোর্টস ডেস্ক :
মঞ্চটা প্রস্তুত, পঞ্চম দিনের শুরুটা কেমন হবে যদিও তা নিশ্চিত নয়। কিন্তু সেই মঞ্চে বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছু অপেক্ষা করছে না। কারণ মাত্র ২০২ রানের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে দুই ওপেনারের অপরাজিত অর্ধশতকে ইতোমধ্যেই বিনা উইকেটে ১০৯ রান তুলে ফেলেছে পাকিস্তান। সে কারণে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ মাত্র ৯৩ রান করতে হবে তাদের। বাংলাদেশকে সিরিজের প্রথম টেস্টে হারানোর জন্য পাকদের আছে ১০ ব্যাটার অক্ষত। পাক ব্যাটিংয়ে কোন আঁচড় কাটতে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশী বোলাররা আজ শেষদিন অভাবনীয় সাফল্য পেলেই হয়তো সেই হারটা এড়ানো সম্ভব হতে পারে। তবে প্রথম ইনিংসে এমন শিক্ষা পাওয়া পাকরা একই বিপর্যয় এড়াতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়েই মাঠে নামবে। সেজন্য তাদের সারাদিন সময় আছে। সর্বশেষ দুই টেস্টে সাগরিকায় হার দেখা বাংলাদেশ তাই আরেকটি পরাজয়ের প্রহর গুনছে। তবে প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো এই টেস্টে বাংলাদেশের দারুণ লড়াকু মনোভাব দেখে গর্বিত। তিনি মনে করেন আজ শেষদিনে ক্রিকেটারদের এই মনোভাব ও বিশ্বাস নিয়ে নামা উচিত যে চলতি টেস্টে এখনও সুযোগ আছে।
সাগরিকার উইকেটে বেশ কিছু প্রাপ্তিযোগ ঘটেছে বাংলাদেশ দলের। তবে সেটি বেশ আগের কথা এবং অধিকাংশ অর্জনই ওয়ানডে ক্রিকেটে। ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়ে ও ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়, ২০০৭ সালে প্রথমবার ভারতের মতো শক্তিশালী দলের সঙ্গে পরাজয় এড়িয়ে ড্র এবং ২০১৫ সালে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারহীন ড্র ছাড়া আর তেমন বড় কোন পাওয়া হয়নি। ধীরে ধীরে তাই ভেন্যুটি দুঃসহ কিছু স্মৃতিরই মঞ্চ হয়ে উঠেছে। এমনকি বিশ্ব ক্রিকেটের নবীন টেস্ট খেলুড়ে দেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমে এই মাঠে ২২৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। এ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের কাছেও পরাজিত হয়েছে। এবার তার চেয়ে শক্তিধর পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ কিছু করার আশাও করা যায়নি। বিশেষ করে যেই দলটিতে নেই অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল, দলের অন্যতম স্তম্ভ বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে গতিময় বোলিংয়ে ফর্মের তুঙ্গে থাকা তাসকিন আহমেদও ইনজুরির কারণে নেই। তাই নড়বড়ে টেস্ট দল নিয়েই পাকদের মুখোমুখি হতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু এই দলটি দারুণ লড়াই করেছে পাকদের বিপক্ষে। বিশেষ করে যে বোলিং বিভাগকে দুর্বল মনে করা হয়েছে তারাই পাকদের বিপর্যস্ত করে প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড এনে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের করা ৩৩০ রানের জবাবে বিনা উইকেটে ১৪৫ রান তুলে ফেলার পরও পাকদের ২৮৬ রানেই গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে ডোমিঙ্গো চতুর্থ দিন শেষে তাই বলেছেন, ‘আমি সত্যিই গর্বিত যেভাবে ছেলেরা এই টেস্টে লড়াই করেছে। তারা সত্যিই দারুণ কার্যকারিতা দেখিয়েছে।’
তৃতীয় দিন চা বিরতির পরই মূলত এই টেস্টে বাংলাদেশ দল ব্যাকফুটে চলে যায়। টপঅর্ডাররা আবারও ব্যর্থ হন। প্রথম ইনিংসের চেয়েও খারাপ হয় পরিস্থিতি, প্রথম ইনিংসে ৪৯ রানেই ৪ উইকেট যায়। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫ রানে ৪ টপঅর্ডার সাজঘরে ফেরেন। কিন্তু সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র আছে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস। এবারও তাই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল। তবে চতুর্থ দিনের সকালে উইকেট এতটা সহজ নয় এবং বারবার দুই ব্যাটারের কাঁধে চেপে উত্তরণ করাও কঠিন। সেটাই হয়েছে, প্রথম ইনিংসে ৯১ রান করা মুশফিক ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ১৬ রানে সাজঘরে ফিরেছেন। তৃতীয় দিন বিকেলে শাহীন শাহ আফ্রিদি তার পেস ঝড়ে যে তা-ব শুরু করেছিলেন সেটাই কাল হয়েছে। তবু চতুর্থ দিন লাঞ্চ বিরতির আগে মাত্র ২ উইকেট হারায় মাত্র বাংলাদেশ। মুশফিকের পর শুধু মেহেদি হাসান মিরাজ (১১) সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় ইয়াসির আলী রাব্বির দুর্ভাগ্যের মাঠ ত্যাগ। শাহীনের বাউন্সারটা ওঠেনি, নিচু হয়েছে আর সেটা নিচু হওয়ার পরও ইয়াসিরের মাথায় লাগে। তখন শুশ্রুষা শেষে স্বাভাবিক হয়ে মাত্র একটা ওভারই ব্যাট করতে পেরেছেন তিনি। ঝিমঝিম করা মাথা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিনি ৭২ বলে ৬ চারে ৩৬ রানের ইনিংস খেলে। ৬৯ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক জুটির সমাপ্তি ঘটে তখন। তারপরই আর ভাল কিছু হয়নি বাংলাদেশের। দুর্দান্ত খেলতে থাকা লিটন ক্যারিয়ারের দশম অর্ধশতক পেয়ে এগিয়ে নিচ্ছিলেন বাংলাদেশকে। কিন্তু অফস্পিনার সাজিদ খানের ঘূর্ণিই সমস্যায় ফেলেছে বাংলাদেশকে। লিটনও ৮৯ বলে ৫৯ রানে আউট হয়ে যান। ইয়াসিরের কনকাশন সাব হিসেবে ২০১৮ সালের জুলাইয়ের পর আবার টেস্টে ব্যাটিংয়ে নামা সৌভাগ্যবান নুরুল হাসান সোহান ১৫, তাইজুল ইসলাম ০ ও আবু জায়েদ রাহী ০ রানেই সাজঘরে ফিরলে মাত্র ১৫৭ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। শাহীন ৫, সাজিদ ৩ উইকেট নিয়েছেন। তবে এরপরও তৃতীয় দিন বিকেলে বাংলাদেশ দলের যে ব্যাটিং ধস সেটিকেই এই টেস্টে পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে দাবি করেছেন ডোমিঙ্গো। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম ২ দিন সত্যিই বেশ ভাল অবস্থানে ছিলাম। তৃতীয় দিনের অধিকাংশ সময়ই ভাল ছিল, কিন্তু আমরা শেষ সেশনে ভাল ব্যাট করিনি। এটা আমাদের অনেক চাপে ফেলেছে। এমনটা দেখাও হতাশার ছিল। এই পর্যায় পর্যন্ত আমি মনে করি আমরা খুবই ভাল টেস্ট ক্রিকেট খেলেছি।’
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই টপঅর্ডারদের ব্যর্থতা এবং দুর্দান্ত খেলতে থাকা ইয়াসিরের মাথায় আঘাত নিয়ে মাঠ ত্যাগ করার দুর্ভাগ্যটা বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। আর তাই ২০২ রানের লক্ষ্যটাকে মামুলী বানিয়ে নিতে কষ্টই হয়নি ফর্মের তুঙ্গে থাকা আবিদ আলী ও অনুপ্রাণিত, উজ্জীবিত নবাগত ব্যাটার আব্দুল্লাহ শফিকের। তাদের জোড়া অর্ধশতকে বিনা উইকেটে ১০৯ তোলা পাকদের আজ মাত্র ৯৩ রান করতে হবে। আবিদ ৫৬ ও শফিক ৫৩ রানে ব্যাট করছেন। সময় আছে পুরোটা দিন, হাতে আছে ১০ উইকেট। এমন সুবিধাজনক অবস্থান থেকে যে কোন দলের হেরে যাওয়াটাই অভাবনীয় এবং অসম্ভব। কিন্তু প্রথম ইনিংসে এ দুই ওপেনারই ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশী বোলারদের, তুলে নিয়েছিলেন বিনা উইকেটে ১৪৫ রান। তারাই পরদিন মাত্র ১৪১ রানে বাকি ১০ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ে।