বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
কবে কমবে ভোগান্তি ? সড়কটা কি মেরামত হবে, না এভাবেই থাকবে দিনের পর দিন ,বছরের পর বছর। এ রকম প্রশ্ন রেখে বাইক চড়তে চড়তে কখনো মোটর সাইকেল চালক প্রশ্ন করছেন যাত্রীকে কখনো মোটরবাইক চালক কে প্রশ্ন করছেন যাত্রী। তাহিরপুর থেকে মধ্যনগর সাবমার্সিবল সড়ক পথ পাড়ি দিতে দিতে, সড়কের উচু-নীচু খানা-খন্দ পেরুতে-পেরুতে দুই মোটর বাইক যাত্রীরা এভাবেই পথের তিক্ষতা ব্যক্ত করতে করতে পথ পাড়ি দিচ্ছেন মধ্য নগর অভিমুখে। সম্প্রতি এ পথে মধ্যনগর গেলে পথে পথে যাত্রীদের কথা শুনা গেলো পথের যাত্রীদের কাছ থেকে। তাদের মতে হাওরাঞ্চলে বর্ষা অনেক ভালো যোগাযোগের ক্ষেত্রে। পথ চলতে দেরী হলেও পথে ভোগান্তি কম। বর্তমানে যে পথ রয়েছে তা পথ নয়। পথে পথে পাতা মরণ ফাঁদ।
এই পথে শুধু একবার যাতায়াতকারী অপরিচিত যাত্রীদের এ রকম তিক্ত অভিব্যক্তি নয় । এ রকম তিক্ততা এ পথ ধরে উপজেলা সদরে প্রতিনিয়ত যাতায়াতকারী দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ২২ গ্রামের সর্ব সাধারণের, জেলা সদর সুনামগঞ্জে জরুরী যাতায়াত কারী মধ্যনগর থানা ও ধর্মপাশা উপজেলার যাত্রী সাধারণের। অপরদিকে এই পথে তারাও বিড়ম্বনায় পরেন যারা এ পথ ধরে পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ কিংবা নেত্রকোনা জেলায় যাতায়াত করে থাকেন।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তাহিরপুর সূত্রে জানা যায়, তাহিরপুর মধ্যনগর সাবমারসিবল সড়কে তাহিরপুর অংশে ১৬ কিলোমিটার সড়ক পথ রয়েছে। হাওর বেস্টিত উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন এবং পাশ্ববর্তী মধ্যনগর উপজেলার সাথে হেমন্ত কালে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করে এলজিইডি হিলিপ প্রকল্প। প্রথম বছর ২০০৯ সালে উপজেলা সদর থেকে সুলেমানপুর বাজার পর্যন্ত ব্লক দিয়ে ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ করা হয়। পরবর্তী বছর ২০১০ সালে সুলেমানপুর নদীর পশ্চিমপার হতে লামাগাঁও বাজার পর্যন্ত একই রকম ভাবে ব্লক দিয়ে আরও ৯ কিলোমিটার সড়কের কাজ করে এলজিইডি হিলিপ প্রক্লপ। প্রথম দু’বছর বর্ষায় ডুবে থাকার পরও সাবমারসিবল সড়কটি হেমন্তকালে ব্যবহারের উপযোগী ছিল। ২০১২ সালের পর তাহিরপুর সদর থেকে লামাগাঁও বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সাবমারসিবল সড়ক পথটি স্থানে স্থানে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত ব্লক ধেবে যায়। সেই সাথে ব্লকের পয়েন্টিংগুলো খুলে যাওয়ায় পথের মধ্যে এলামেলোভাবে ব্লক ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে। সড়কে ব্লক ধেবে যাওয়ার পর সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করায় দিন-দিন সড়কটি একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরে। সড়ক যোগাযোগের আগে ও পরে এই পথের একমাত্র বাহন মোটর সাইকেল। বর্তমানে এই পথে যারা মোটর সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করেন তারা সাবমারসিবল সড়ক ব্যবহার না করে সড়কের পাশে এবরো খেবরু মাটির পথ ব্যবহার করে প্রয়োজনের তাগিদে পথ পাড়ি দেন কষ্ট করে।
উপজেলার সদর থেকে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। গ্রামের ইউপি সদস্য ছোটন মিয়া বলেন তার মতে এই সড়কে একবার যে আসে দ্বিতীয়বার সে আর আসতে চাইবে না, তবুও তিনি কষ্ট করে বিভিন্ন কাজ কর্ম নিয়ে উপজেলা সদরে আসেন প্রায়ই।
ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানার মধ্যনগর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন তিনি বলেন, হেমন্তকালে আমাদের এই পথ দিয়ে জেলা সদরের সাথে যাতায়াত করতে হয়। আমরা এই পথ দিয়েই যাতায়াত করি। বর্তমানে সড়কটির তাহিরপুর অংশের ১৬ কিলোমিটার সড়কেই অত্যন্ত খারাপ উচু নীচু ব্লকের সড়ক পাড়ি দিতে গিয়ে প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে শরীর ব্যথা হয়ে যায়।
তাহিরপুর মধ্যনগর সাবমারসিবল সড়কে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক বুলবল মিয়া। তার গ্রামের বাড়ি উপজেলা সদর ভাটি তাহিরপুর গ্রামে। তিনি প্রতি দিন এই পথে ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালান। তার মতে বর্তমানে সাবমারসিবল সড়কের যে অবস্থা তার চাইতে মাটির এবরো খেবরো পথ অনেক ভালো।
দক্ষিণশ্রীপুর ইউনিয়নের আনন্দ নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হুদা তিনি বলেন, সড়কটি ভাল থাকলে এই সড়কে অটোরিক্সা, সিএনজি চলাচল করতো। ভাল না থাকায় সে ব্যবস্থা নেই। আমাদের অনেক শিক্ষক উপজেলা সদর থেকে দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন খুব কষ্ট করে।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ্বজিত সরকার বলেন, হেমন্তে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সাবমারসিবল সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগের অনুপযোগী হয়ে গেছে। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে গাড়ী নিয়ে যাতায়াত করা ভুব কষ্ট কর তাই সড়ক থাকা সত্ত্বেও সবাই মাটির রাস্তা ব্যবহার করে যাতায়াত করে।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, তাহিরপুর মধ্য নগর পথ ধরে গ্রামের বাড়ি যেতে হয়। পথের যে অবস্থা তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। তবু বিপদে পরে এ পথ ধরেই বাড়িতে আসা যাওয়া করি।
এ বিষয়ে কথা হয় নির্বাহী প্রকৌশলী এলজিইডি সুনামগঞ্জ মাহবুবুর রহমান এর সাথে। তিনি বলেন, তাহিরপুর সুনমাগঞ্জ সাবমারসিবল সড়কটি সুনামগঞ্জ নেত্রকোনা উড়াল সড়কের সাথে ইনক্লুডিং করা হয়েছে। একটু দেরি হলেও সড়কটি স্থায়ী করণ হবে।