কাজিরবাজার ডেস্ক :
শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতায় সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়ন কাজে অবদান রেখে দেশের গৌরব সমুন্নত রাখতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রোববার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেন শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতায় সর্বত্র প্রশংসিত হতে পারেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে দেশের গৌরব সমুন্নত রাখবেন, আমি সেটাই বিশ্বাস করি। ’
উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় পুনঃব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্ব দরবারে উন্নত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলবো, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সশস্ত্র বাহিনী বাঙালি জাতিকে আরও এগিয়ে নিতে অবদান রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
‘মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের সদা প্রস্তুত’ বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
মানবিক সেবামূলক বিভিন্ন কাজে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, এ বাহিনীর সদস্যরা বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসাবে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ও হাসপাতাল স্থাপন, আটকে পড়া দেশি-বিদেশি লোকজনকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা, গুরুতর রোগী এবং চিকিৎসা-স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রশংসা অর্জন করেছে। করোনা, মানব সৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
অবকাঠামো উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অবদানের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, এক্সেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেসওয়ে, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল, ফ্লাইওভার এবং সীমান্ত সড়ক নির্মাণে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের নৌবাহিনী ভাসানচরে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগারিকদের জন্য আবাসন এবং অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছে। সম্প্রতি বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বিমান বাহিনী দেশের উপকূলীয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় সীডবল নিক্ষেপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গৌরবের স্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ইমেজ বাড়ানোর পাশাপাশি জাতিসংঘের ভূমিকাকেও প্রসংশিত করেছে।
এ সময় তিনি সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, বিমান ও হেলিকপ্টারসহ মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট, বিভিন্ন আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সরঞ্জামাদি, আকাশ বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় শোরাড, ভিশোরাড, সর্বাধুনিক অয়েরলিকন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইত্যাদি সংযোজন; নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক করভেট, ফ্রিগেট, সাবমেরিন ও মেরিটাইম হেলিকপ্টার সংযোজন এবং বিশেষায়িত ফোর্স হিসেবে সোয়াডস গঠন করেছি। পটুয়াখালীতে বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটির নির্মাণ কাজ চলমান, কক্সবাজারে বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটি, বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপনাস্ত্র সংযোজন করেছি। লালমনিরহাটে এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি ফরোয়ার্ড এভিয়েশন বেইজ নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরেন টানা তিনবারের সরকার প্রধান।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে। সে ঘটনাকে স্মরণে প্রতি বছর দিনটিকে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।