আমরা অমানুষ না বলেই খালেদা জিয়াকে কারাগারের পরিবর্তে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি

20

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার জবাবে বলেছেন, নির্বাচন করতে হলে সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থন দরকার। সেটা নেই বলেই বিএনপি নির্বাচন করবে না বলে নিজেদের রাজনৈতিক দৈন্য প্রকাশ করছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের একদম তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। ফলে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়, আওয়ামী লীগকে চায়। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতবড় অমানবিক হওয়া সত্ত্বেও আমরা তাঁকে মানবিকতা দেখিয়েছি। আমরা অমানুষ না বলেই তাকে কারাগারের পরিবর্তে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিগুলো আইনের বিষয়। এর বেশি আমার করার কিছু নেই।
বুধবার তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ডিজেলের তেলের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই দেশে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ডিজেলের জন্য সরকারকে প্রতিবছর প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আর কত ভর্তুকি দেয়া যাবে? সব টাকা ভর্তুকি দিতে হলে সব উন্নয়ন কর্মকা-ই থেমে যাবে। তিনি বলেন, সামরিক শাসকের অবৈধভাবে জন্ম নেয়া রাজনৈতিক (বিএনপি) দলগুলোর ক্ষমতার বাইরে টিকে থাকার সুযোগ নেই, কারণ এদের কোন শেকড় নেই।
সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬), লন্ডন এবং ফ্রান্সে দুই সপ্তাহের সরকারী সফরে অর্জিত অর্জন ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হলেও সাংবাদিকদের সর্বশেষ রাজনৈতিক ইস্যুসহ অসংখ্য প্রশ্নের ভিড়ে তাঁর মূল ইস্যুটিই ঢাকা পড়ে যায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অসংখ্য প্রশ্নের স্বভাবসুলভ হাস্যোজ্জ্বল-ভাবে সবকিছুর উত্তর দেন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কয়েকজন গণভবন প্রান্তে এবং বাকিরা তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। করোনা পরিস্থিতির আরেকটু উন্নত হলে দ্রুতই প্রধানমন্ত্রী সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খালেদা জিয়ার জন্য আর কী করব : বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে প্রেরণের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষোভের সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন- এটাই তো বড় কথা। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুসহ আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে, ছোট ভাই শিশু রাসেলকেও পর্যন্ত রেহাই দেয়া হয়নি। সেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার না করে তাঁর স্বামীসহ খালেদা জিয়া পুরস্কৃত করেছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে খুনী রশীদকে সংসদে এনে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসিয়েছেন এই খালেদা জিয়া।
তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন অনেকে খালেদা জিয়ার জন্য মায়াকান্না করছেন, কিন্তু অতীত কী সব কিছু ভুলে গেছেন? বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শুধু পুরস্কৃত করাই নয়, এই খালেদা জিয়া এক খুনীকে এনে বিদেশী দূতাবাসের দূত বানিয়েছেন। যারা আমার বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর সংসদে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন- আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলাম, মানে নিজে আত্মহত্যা করতে! এতবড় অমানবিক কাজ যিনি করেছেন, তাঁকে আমরা মানবিকতা দেখিয়েছি। অমানুষ না বলেই বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর কত চান? এর বেশি তো আমার করার নেই। বাকি তো আইনের ব্যাপার।
সব টাকা ভর্তুকি দিলে উন্নয়ন হবে না : ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি, গণপরিবহন ধর্মঘট এবং বাস-লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই দেশে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। বেশি দামে কিনে দেশে কম দামে জ্বালানি বিক্রির কারণে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় আরও বেশি ভর্তুকি দিতে হলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থমকে যাবে।
ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ডিজেলের জন্য বছরে সরকারকে ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। আর জ্বালানি খাতে মোট ভর্তুকি দিতে হয় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। সরকার যে বিদ্যুত দিচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষকে, সেখানেও সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। যে টাকায় বিদ্যুত বিক্রি করা হচ্ছে, তাতে উৎপাদন খরচও উঠছে না।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এ সময় পাল্টা প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আপনারাই বলেন, আর কত টাকা ভর্তুকি দেয়া যাবে? বাজেটের সব টাকা কি ভর্তুকি দিয়ে দেবো? তাহলে কিন্তু উন্নয়ন কর্মকা- থেমে যাবে। আর কোন উন্নয়ন হবে না। জ্বালানি তেল, বিদ্যুত, সারসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে সরকারকে বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় জানিয়ে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আর কত টাকা ভর্তুকি সরকার দিতে পারবে?
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে বিদেশ থেকে ডিজেল কিনে আনতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই দেশেও দাম বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তবে জনগণের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্ক আমরা সবসময় সচেতন। করোনার মধ্যে এমন কোন শ্রেণী- পেশার মানুষ নাই, যাদের আমরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করি নাই। একবার না বারবার দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের উপায়টা কী? উপার্জনটা কী? আমাদের কী সম্পদ আছে? উন্নত দেশে যান, খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপার মার্কেট খালি, খোদ লন্ডনের কথা বলছি। আমাদের দেশে তো খাদ্যের অভাব হয় নাই। কর না দেয়া এবং কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ট্যাক্সটা ফাঁকি দেয়ার দিকেই সবার নজর। আমাদের দেশে তো মানুষ ভালভাবে খাচ্ছে, চলছে। কিন্তু প্রকৃত ট্যাক্স দিচ্ছে কয়জন? তাহলে টাকাটা আসবে কোথায় থেকে? তাহলে কি দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে? গ্যাসের সঙ্কট মেটাতে সরকার এলএনজি আমদানি করছে এবং সেখানেও বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, খাবারের যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের নজর আছে।
চেয়ারম্যান পদে প্রতীক দিচ্ছি বলে মারামারি, তা কিন্তু নয় : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে সহিংসতার জন্য বিএনপিকেও দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুশকিল হচ্ছে এখানে আমরা শুধু চেয়ারম্যান পদে প্রতীক দিচ্ছি, কিন্তু মেম্বার পদে কোন প্রতীক নেই। তাদের কোন প্রতীক থাকে না। আপনারা যদি ঘটনাগুলো দেখেন, মেম্বারদের মধ্যেও গোলমাল, তাদের মধ্যেও কাটাকাটি। শুধু যে চেয়ারম্যান প্রতীক দিচ্ছি দেখেই মারামারি তা কিন্তু না।
ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনী সহিংসতা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে, তবে এটা ঠিক, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতা আগেও হয়েছে। এখনও হোক সেটা চাই না। একটা হানাহানি, ভোট দিতে গিয়ে মানুষের প্রাণ যাবে এটা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।
বিএনপিসহ বিভিন্ন দল দলীয়ভাবে নির্বাচন না করলেও তাদের নেতারা যে অনেক জায়গায় স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছে, সে বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলে দেখা যায় একজনকে নমিনেশন দেয়া হয়েছে, অনেকের আকাক্সক্ষা থাকে। নির্বাচন তো সবাই করছে, আমরা যেমন আওয়ামী লীগের নামে করছি, বিএনপি নাম ছাড়া করছে, অন্যান্য দলও করছে। এই যে হানাহানি মারামারি, কোথায় কোথায়, কাদের মধ্যে হচ্ছে- সেটা আপনারা দেখেন। আমাদের দলের মধ্যে যেগুলো হবে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, শুধু ব্যবস্থা না, আমরা যাদের মনোনয়ন দিয়েছি, তাদের বাইরে গিয়ে যারা নির্বাচন করেছে, যতই ভাল প্রার্থী হোক- যারাই দলের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে, আমরা কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা নেব। আমরা কিন্তু ছাড়ব না। কিন্তু এদের (আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী) বাইরে যারা (বিএনপি) নির্বাচনে হানাহানি করল, এখন তো তারা দলীয়ভাবে নির্বাচনে আসছে না, সে দিক দিয়ে তারা চালাকিটা ভালই করল। নির্বাচনও করছে, মারামারিও করছে। উস্কেও দিচ্ছে, আবার বিজয়ীকে সমর্থন দিয়ে আরেকটা মারামারি বাঁধিয়ে দিচ্ছে। কাজেই সেটাও দেখতে হবে। তিনি বলেন, কোন প্রাণহানি হোক, এটা আমরা কখনও চাই না। এটা হওয়া উচিত না। এটা যেখানে যেখানে ঘটেছে সেখানে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, সেটা কিন্তু আমরা রক্ষা করে যাচ্ছি।
দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র চলছে : লন্ডনে বসে পলাতক দন্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান নানা ষড়যন্ত্র করছে- সরকার কোন ব্যবস্থা নেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে সেখানে আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছে, আর বাংলাদেশে গন্ডগোল পাকাচ্ছে। যারা চোখ থাকতেও অন্ধ, কান থাকতেও বধির- তারা হয়তো ষড়যন্ত্র দেখেন না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির আমলে তাঁকে বারবার হত্যা প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমাকে হত্যার চেষ্টায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হলো। সামনা-সামনি অনেকবার গুলি করা হয়েছে আমাকে হত্যার জন্য। কোটালিপাড়ায় বিশাল ওজনের বোমা পুঁতে রেখেও আমাকে হত্যা করতে পারল না। এতবার চেষ্টা করেও আমাকে মারতে পারল না। সেই চেষ্টা তারা করে যাবে। লন্ডনে বসে একজন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, নানা গ-গোল পাকাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক উস্কানি, বিভিন্ন মন্দিরে হামলাসহ অনেক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে, ঠিক সত্য বেরিয়ে আসবে কারা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নত হচ্ছে এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে দেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। বিএনপিসহ অনেক দলের অবৈধ সামরিক শাসকের হাতে জন্মই অবৈধভাবে। ক্ষমতা ছাড়া এসব দলের টিকে থাকার কোন সুযোগ নেই। কারণ এদের কোন শেকড় নেই। আমার প্রশ্ন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছরে দেশের কোন উন্নতি হয়নি কেন? কারণ তারা দেশের উন্নতি চায়নি, দেশের অভ্যুদয় চায়নি, দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। সারাবিশ্বে বর্তমানে বাংলাদেশের মর্যাদা তাদের ভাল লাগবে এটাই স্বাভাবিক। জঙ্গিবাদও সৃষ্টি করেছে এই বিএনপি।
জিয়ার আমলে হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে সরকার : ’৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক ক্যুসহ বিভিন্নভাবে ঘটানো হত্যাকান্ডের বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা এ ব্যাপারে অবশ্যই করব এবং আমি মনে করি আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদেরও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া উচিত। আপনারা যখন বলেছেন, আমি সরকারের পক্ষ থেকে অন্তত ওই সময়ে ফাঁসি কাদের দেয়া হলো, যেগুলো জেলখানায় হয়েছে সেগুলোর হয়তো তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু ফায়ারিং স্কোয়াডে যাদের মারা হয়েছে কোট মার্শাল করে, তাদের সবার তথ্য পাওয়া কিন্তু মুশকিল। জানি না পাওয়া যাবে কি না। তবে আমরা এটা খবর নেব, খোঁজ নেব, এ ব্যাপারে আমরা দেখব।
জিয়ার আমলে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে আসার প্রশংসা করে সরকারপ্রধান বলেন, বহুদিন পর হলেও অন্তত মানুষের মনে এই প্রশ্নটা জেগেছে। ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর ১৯টি ক্যু হয়। আর প্রতিটি ক্যুর পর সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সৈনিক, অফিসার, বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল জিয়াউর রহমান সরাসরি নিজে। তারই নির্দেশে এসব হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।
তিনি আরও বলেন, সে (জিয়াউর রহমান) নিজে সরাসরি এই মৃত্যুদণ্ড দিত। প্রহসনমূলক বিচার এবং এটা শুধু ফাঁসি দেয়া না, বলতে গেলে সামরিক আদালতে বিচার, কোর্ট মার্শাল এবং কোট মার্শালের পরে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। জিয়ার আমলে কত মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তা এখনও অজানা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একেকটা ক্যু হয়েছে, কত মানুষ মারা গেছে, প্রতিটি কারাগারে যে কত মানুষকে ফাঁসি দেয়া হলো। সেই হিসাবটাও কেউ বের করেনি। কোন সাংবাদিক বা কেউ এটা নিয়ে আজ পর্যন্ত তদন্ত করেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে কত মানুষ মারা গেছে, কত পরিবার তাদের আপনজনের লাশ পায়নি, এ ব্যাপারটা কেউ কখনও সেভাবে তুলে ধরেনি। তবে এতকাল পরে হলেও যে বিষয়টা সামনে এসেছে, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। তিনি বলেন, টেলিভিশনের যে চারজনকে হত্যা করা হয়, সেখানে আমার একজন ফুফাতো ভাইও ছিল। তাদের হত্যা করে বস্তাবন্দী সেখানে থাকা বিলে ফেলে রাখে। তাদের জামা-কাপড় দেখে তাদের চারজনকে চিহ্নিত করা হয়। এভাবে এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা গুম-খুনের কথা শুনি, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার অনেক কিছু হচ্ছে। কিন্তু ’৭৫-এর পর থেকে যে এ ঘটনাগুলো শুরু এবং এত হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু, আমি ধন্যবাদ জানাই অন্তত আপনাদের এ ব্যাপারে কিছুটা হলেও চেতনা ফিরেছে এবং আপনারা কথাটা তুলেছেন। আমি আশা করি আরও তথ্য সংগ্রহ হবে। কিভাবে নির্বিচারে এ দেশের মানুষকে জিয়াউর রহমান হত্যা করে গেছে, সেটা বের হবে।
একজন নাগরিক হিসেবে নিজেও বাবা-মায়ের হত্যার বিচার চাইতে পারেননি জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা তো নিজেরাই ভুক্তভোগী, আমি একজন নাগরিক হিসেবে আমার বাবা-মা, ভাইয়ের হত্যার বিচার পাইনি, মামলা করতে পারিনি। ’৮১ সালে ফিরে আসার পর আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। যখন আমি ক্ষমতায় আসতে পেরেছি, তখনই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে তারপর সে মামলা করতে সক্ষম হয়েছি। তার আগে কিন্তু মামলা করতে দেয়া হয়নি।
উন্নত দেশের মতো আমাদের খাদ্য হাহাকার নেই : অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক উন্নত দেশে খাদ্যের জন্য যেমন হাহাকার, সেই অবস্থা বাংলাদেশে নেই। অনেক উন্নত দেশে আপনি যান, সেখানে খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপারমার্কেট খালি, জিনিস নাই। আমাদের দেশে কিন্তু সেই হাহাকারটা আপনারা দেখেননি। সেই হাহাকারটা কিন্তু নাই।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের জন্য এক সময় হাহাকার ছিল, আজকে তো বিদ্যুৎ সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি। সেই বিদ্যুতে আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমাদের উৎপাদন খরচ আমরা তুলতে পারছি না। তবে খাদ্যের জন্য দেশের মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে। আমরা তো বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছি, বিনা পয়সায় মানুষকে সাহায্য করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন আমরা কিন্তু গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন থেকে শুরু করে এমন কোন শ্রেণীপেশার মানুষ নাই, যাকে আমরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা না করেছি। একবার নয়, বারবার। আর জিনিসপত্রের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে, তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। উৎপাদন বাড়াবার সব রকম ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। সারের দাম থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম কমিয়েছি। যে সার ৯০ টাকা ছিল, সেই সার ১৫-১৬ টাকায় আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা তাদের (কৃষক) সব রকম সহায়তা দিচ্ছি।
ক্রিকেট নিয়ে হতাশার কিছু নেই : টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স সন্তুষ্ট করতে পারেনি ক্রিকেটভক্তদের। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করছেন, এ নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বরং ক্রিকেটারদের আরও বেশি প্রাকটিস করা ও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ধৈর্য ধরতে। একইসঙ্গে তিনি প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককেও পাল্টা প্রশ্ন করেছেন যে, তিনি নিজে কখনও ক্রিকেট খেলেছেন কি না।
এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান প্রশ্নকর্তাকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আপনারা এত হতাশ হন কেন? কয়েকটি খেলা তো চমৎকার খেলেছে। বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ খেলেছে, কয়েকটি দেশকে হারাতে পেরেছে, এটিই তো বড় কথা। দল যেটুকু পেরেছে, সেটিই বড় কথা। তিনি বলেন, সবসময় সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হয় না। কখন যে ব্যাট-বলের সংযোগ ঘটবে, ছক্কা হবে- সবসময় সবকিছু অঙ্কে মেলে না।
শেখ হাসিনা বলেন, তবে যেটুকু আশা করেছিলাম, সেরকম হয়নি। কিন্তু আমি কাউকে হতাশ হতে বলি না। আমি বলি, আরও ভাল খেলো। আরও মনোযোগী হও, আরও প্রাকটিস করো। আমাদের ছেলেরা কিন্তু করোনার কারণে প্র্যাকটিস করতে পারেনি। তারপরও ছেলেরা ভাল খেলেছে। আরও ভাল করবে। নতুন নতুন কিছু ছেলে এসেছে। এরাও ভাল করছে। কথায় কথায় হতাশ হওয়া ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু একটা হলেই হতাশ হওয়া এক ধরনের মানসিক রোগ। একটুতেই উৎফুল্ল, একটুতেই হতাশ হওয়া কোনটাই ভাল কথা নয়। শুধু বলব- ধৈর্য ধরে থাকুন।