সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন ॥ কুমিল্লায় ৪১ জন গ্রেফতার, হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সারাদেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার কুমিল্লায় ও বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে সরকার। আজ রাজধানীতে প্রতিটি পূজা ম-পে এবং মোড়ে মোড়ে বিজিবির পাশাপাশি র‌্যাব পুলিশ মোতায়েন থাকবে। থাকবে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েনও। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। কোথাও কোথাও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাও হয়েছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার তাৎক্ষণিক বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কুমিল্লায় হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের শনাক্ত করে শীঘ্রই গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছি। যারা এটা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেঃ কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসনের চাহিদায় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুর্গাপূজায় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার থেকেই কাজ শুরু করেছেন বিজিবির সদস্যরা। রাজধানীতে মোতায়েন করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে লেঃ কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চাহিদা থাকলে রাজধানীতেও বিজিবি মোতায়েন করা হবে। মন্দির ও এর আশপাশে টহল দিয়ে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে মাঠে থেকে বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান তিনি। সারাদেশে কত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে জানতে চাইলে বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, চাহিদার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লায় হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের শনাক্ত করে শীঘ্রই গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরী বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
করণীয় নিয়ে সভা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর এ সভা মনে করছে, তদন্ত হওয়ার আগে আমরা মনে করছি, আমরা সিদ্ধান্তে আসিনি। আমরা শতভাগ নিশ্চিত নই। আমরা মনে করছি, এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন স্বার্থান্বেষী মহল, কোন ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারীর কর্ম। আমরা তদন্ত শেষে আপনাদের সব ঘটনা জানাতে পারব।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এরইমধ্যে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী, যেখানে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন। কুমিল্লার দুঃখজনক ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করব।
মন্ত্রী বলেন, বুধবার কুমিল্লায় একটি পূজাম-পে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সেই ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সব জায়গায় চলে যায়। হৃদয়বিদারক কিছু ঘটনাও ঘটেছে। চাঁদপুরে চারজন মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনাও আমরা দেখেছি। সিলেটের জকিগঞ্জ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক ঘটনা ঘটছে।
এ ঘটনায় কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কুমিল্লায় কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সারাদেশে আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। যেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে সেখানে গ্রেফতার হবে। আমরা চাই সুনির্দিষ্টভাবে যারা জড়িত ছিল কিংবা উস্কানি দিয়েছে তাদের গ্রেফতার করতে। অনেককে ভিডিও দেখে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবকিছু পরে জানাব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা এটা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আমরা সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেব। আমরা আরও স্পষ্ট করে বলতে পারি, যারা ধর্মকর্ম করে যারা ধর্ম বিশ্বাস করে তারা এ ঘটনা ঘটাতে পারে না। অসাম্প্রদায়িক মেলবন্ধন নষ্ট করার জন্যই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মনে করি।
এ ঘটনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা এ ধরনের চেষ্টা করছেন কিংবা অব্যাহত রাখবেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যেসব জায়গায় এ ঘটনা ঘটছে, সেখানে যদি কেউ উস্কানি দিয়ে থাকেন তাকেও আইনের আওতায় আনব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুর্গাপূজা নিয়ে সভায় সিদ্ধান্ত ছিল যেখানে পূজা হবে সেখানে পূজা কমিটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসাবে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদেরও সেচ্ছসেবক থাকবে। অনেক পূজাম-পেই সেগুলো করা হয়নি। আমি তাদের আবারও আহ্বান করছি পূজাম-প সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসেন। সেচ্ছসেবক নিয়োগ করেন। প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না হয়, আমরা এ আহ্বান করছি। কেউ যাতে কোন ধরনের উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
আমরা ফেসবুকে দেখলাম আইজিপি সাহেব নাকি একটা নির্দেশনা দিয়েছেন, পূজা বন্ধ। আমরা এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেইনি। যারা এ ধরনের অপচেষ্টা করছেন তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের এ ধরনের অপচেষ্টায় লিপ্ত হতে দেব না।
বিজিবি মোতায়েনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর স্বল্পতা থাকলে সেখানে বিজিবি মোতায়েন করা হবে। স্বল্পতা মানে হলো আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী নেই তা নয়। সহযোগিতা করার জন্য যদি মনে করে এখানে একটা বিশৃঙ্খলা হতে পারে, তখন ওই এলাকার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অনুরোধক্রমে বিজিবি মোতায়েন করা হবে। জেলা প্রশাসকদের অনুরোধে কিছু কিছু জায়গায় বিজিবি গেছে।
৪১ জন আটক : কুমিল্লা নগরীর একটি পূজামন্ডপে পবিত্র কোরান অবমাননা ও বিভিন্ন স্থানে ভাংচুরের ঘটনায় পুলিশ মোঃ ফয়েজ নামে প্রধান এক সন্দেহভাজনসহ ৪১ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লায় আসেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। তিনি বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি গোষ্ঠী ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ সময় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিটি ঘটনার জন্য মামলা হবে এবং অপরাধীরা যেই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। পূজাম-পে ভোর বেলায় কোরান শরীফের ছবি তুলে ফেসবুকে প্রদান এবং ধারা বিবরণী প্রচারকারী প্রধান সন্দেহভাজন মোঃ ফয়েজকে আটক করে বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়া ৯৯৯-এ পুলিশকে সংবাদদাতাসহ ফয়েজের পেছনে থাকা এ ঘটনার নেপথ্য নায়কদের খুঁজছে পুলিশ। এদিকে বুধবারের এ ঘটনায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া বৃহস্পতিবারও ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরজুড়ে বিজিবির টহল অব্যাহত থাকলেও জনমনে শঙ্কা কাটেনি।
জানা গেছে, নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে পূজাম-পে পবিত্র কোরান অবমাননার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির নেতৃত্বে একটি সংসদীয় টিম কুমিল্লায় আসেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ের পূজাম-পের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় ও দলীয় নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেন, আমরা দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ করব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম বিশ্বাস, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করবে। সবাই যেন ধৈর্য এবং সহনশীলতার সঙ্গে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। কারণ দেশ এগিয়ে চলছে। এ সময়ে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশকে পিছিয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে, তারই অংশ হিসেবে কোরান শরীফকে টেনে এনে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চক্রান্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিম এসেছি এবং চট্টগ্রাম থেকে ডিআইজি এসেছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে বা যারা যে উদ্দেশেই এ অপকর্মটি করেছে তার বিরুদ্ধে দেশের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত : পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়স্থ দর্পণ সংঘের পূজাম-পে দুষ্কৃতকারীরা বুধবার একটি পবিত্র কোরান শরীফ রেখে দেয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্থানীয় লোকজন ওই পূজাম-পের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কোরান শরীফটি দেখতে পেয়ে ৯৯৯-এ সংবাদ দেয়। খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে কোরান শরীফটি নিজ হেফাজতে নেন। এরইমধ্যে দৃশ্যটি মোবাইল ফোনে ধারণ করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
ঘটনার দেড়-দুই ঘণ্টার মাথায় ১৫-১৮ বছর বয়সের তরুণদের হামলা-ভাংচুর ছিল পরিকল্পিত ॥ এ ঘটনার দেড়-দুই ঘণ্টার মাথায় ১৫-১৮ বছর বয়সের একশ্রেণীর তরুণরা লাঠি হাতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে নেমে হামলা-ভাংচুর ও সড়কে অবরোধ করে। হঠাৎ করে বিভিন্ন স্থানে তাদের সংঘটিত হওয়া ও হামলা-ভাংচুরের বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে করছেন নগরের অনেকে। হামলাকারীদের কেউ কেউ নগরীর বাইরের উপজেলা থেকেও এসেছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এসব ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, গুলিবর্ষণ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এসব তরুণরা নগরীর চারটি পূজাম-পে হামলা চালায় এবং ৬টি তোরণ ভাংচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবেলায় শর্টগান হতে ৮৩৪ রাউন্ড রাবার বুলেট, ১১ রাউন্ড গ্যাসশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এছাড়া আনসার বাহিনীও ৪৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২ রাউন্ড শিশা কার্তুজ ফায়ার করে। এছাড়া জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের টহল জোরদার করা হলে রাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবারও বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে।
কে এই ফয়েজ : জেলার কোতোয়ালি থানাধীন রঘুরামপুর গ্রামের মৃত আবদুল করিমের ছেলে মোঃ ফয়েজ। থাকে ঘটনাস্থলের পাশেই নানুয়া দীঘির উত্তর-পূর্ব কর্নারের ডিগাম্বরীতলা এলাকায়। এ ঘটনার পর পুলিশ বুধবার রাতে তাকে একটি স্যামসাং গ্যালাক্সি মোবাইলসহ গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার থানার এসআই মফিজুল ইসলাম খান বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলার অবনতির লক্ষ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। এ মামলার একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত ফয়েজ আওয়ামী লীগ বিরোধী ধর্মান্ধ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আরও তদন্তের আগে তার পেশা ও রাজনৈতিক চরিত্র সম্পর্কে পুলিশের কোন সূত্র তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে নারাজ। তবে ভিন্ন সূত্র জানায়, তাকে কেন্দ্র করেই তদন্ত করলে ঘটনার মূল হোতাদের নাম-পরিচয় বের হয়ে আসবে।
আরও তিন মামলা : ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও অবমাননার ঘটনায় কোতোয়ালি থানা পুলিশের এসআই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে বৃহস্পতিবার একটি মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ আরও দুটি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় আটককৃতদের আসামি করা হয়।
তদন্ত কমিটি গঠন : পূজামন্ডপের এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সায়েদুল আরেফিনকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর ২ সদস্য হচ্ছেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম. তানভীর আহমেদ ও আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া আফরিন। কমিটিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রশাসন, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের প্রচেষ্টায় আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনায় কোরান শরীফ অবমাননা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি ও হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় ২টিসহ মোট চারটি মামলা হয়েছে। ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চারজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৪ প্লাটুন বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নিয়োজিত রয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত। শুক্রবার প্রতীমা বিসর্জন ও জুম্মাহ বারকে সামনে রেখে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।
এ সময় পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুষ্কৃতকারীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। আটককৃত ফয়েজের রাজনৈতিক পরিচয় ও তার সম্পর্কে অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ফেসবুকসহ যে কোন গুজবে কান না দেয়ার জন্য নাগরিকদের নিকট তারা আহ্বান জানান।
বাঁশখালী : কুমিল্লার নানুয়ারদীঘি এলাকায় একটি পূজামন্ডপে কোরান শরীফ পাওয়া যাওয়ার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু মন্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ছয়টি মন্ডপ আক্রান্ত হয়। তবে খবর পেয়ে প্রশাসন ও পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে, পূজামন্ডপে হামলার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি যেন শান্ত থাকে সেজন্য এলাকায় বিজিবি এবং বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।
হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা ও পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এই ঘোষণা অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় মাইকিং করে যে কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে সতর্ক করা হচ্ছে।
রাজশাহী : কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকায় দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার পর পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের এ সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে একজন এসআইসহ পাঁচজন পুলিশ রয়েছেন। স্থানীয়ভাবে আহতদের চিকিৎসা দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
গাজীপুর : গাজীপুরের তিনটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমাসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার সকালে ৪-৫শ’ লোক লাঠিসোটা নিয়ে কাশিমপুর থানা এলাকার ওই তিনটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৯ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। এরইমধ্যে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের স্থানীয় পোশাক কারখানার ১৬ জন শ্রমিক রয়েছে। হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।