করোনায় স্ট্রোকের ঝুঁকি

3

করোনাভাইরাসের রোগীর ঝুঁকি ও শঙ্কা নিয়ে এক বছর আগে আমরা যা জানতাম, এখন তার চেয়েও খারাপ খবর দিয়েছেন গবেষকরা। শ্বাসতন্ত্র ছাড়াও হৃদযন্ত্র ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয় এই হন্তারক ব্যাধি। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা সেন্ট লুইস হেলথ কেয়ার সিস্টেমের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার প্রথম ১২ মাস পর্যন্ত হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক এবং হৃদযন্ত্রের ছোট-বড় নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে থাকেন অনেকে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এমন রোগীদের ৩৯ শতাংশই এই ঝুঁকিতে আছেন। অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সুস্থ হয়েছেন, এমন রোগীদের হার্ট এ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি সাধারণ মানুষের তুলনায় ৫ দশমিক ৮ গুণ পর্যন্ত বেশি। হার্ট এ্যাটাক বা স্ট্রোক ছাড়াও করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর হৃদযন্ত্রের আরও দুটি সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া করোনা রোগীদের। সেগুলো হলো-হৃৎপিণ্ডের পেশির প্রদাহ (মায়োকার্ডিটি) এবং হৃৎপিণ্ডের বহিরাবরণ বা ঝিল্লির প্রদাহ (পেরিকার্ডিটি)।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে উঠলেও নানা জটিলতা থেকে যায়। ফলে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে শক্তি ও কর্মক্ষমতা ফিরে পাওয়ায় বিলম্ব ঘটতে পারে। সুস্থ হওয়ার পরও করোনা রোগীদের বড় অংশ নানা শারীরিক জটিলতায় ভোগেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা থেকে মুক্তির পরও অনেকেই শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি, মস্তিষ্ক, স্নায়ু, স্মৃতিভ্রম, নিদ্রাহীনতা ও অবসাদগ্রস্ততাসহ নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগতে পারেন। সুস্থ হওয়ার অনেকদিন পর হঠাৎ করে হার্ট ও ব্রেন স্ট্রোকসহ অজানা সমস্যায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। শারীরিক ও মানসিক রোগের কারণে তারা ফিরতে পারছেন না স্বাভাবিক জীবনে। চিকিৎসকরা এর নাম দিয়েছেন ‘পোস্ট কোভিড সিনড্রোম’। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির দেহে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে ক্লান্তি, অবসাদ ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও যারা নানারকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন, তাদের জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থাপিত হয়েছে পুনর্বাসন কেন্দ্র্র।
আমাদের দেশেও করোনা রোগীরা নানা জটিলতায় ভুগছেন। ফলে, তাদের কোভিড পরবর্তী ফলোআপ জরুরী হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে না চললে সমূহ বিপদ ঘটতে পারে। ফলে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি আবশ্যক। যাদের এখনও করোনা হয়নি, তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আসন্ন শীতে দেশে করোনার নতুন ঢেউ আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাই এখনই করোনাকে উপেক্ষা করার মতো সময় আসেনি। প্রতিরোধই রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকারস্বরূপ বিবেচনা করে এখনই সর্বোচ্চ সতর্কতা অনুসরণ করা কর্তব্য। এখনও যারা করোনায় আক্রান্ত হননি, তারা নিজেদের সুরক্ষাদানে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন। যারা কোভিড পরবর্তী নানা জটিলতায় ভুগছেন, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই। বাড়তি যত্ন ও সতর্কতাই তাদের দুঃসময় অতিক্রমে সাহায্য করতে সক্ষম।